আর্থিক জালিয়াতি ফাঁস, ভারত-বাংলাদেশ ও নেপালে চীনের প্রতারণা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর থেকে চীন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবে দেশটির তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে ঠিক তেমনি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে চীনের অংশীদারিত্ব অপচয়, জালিয়াতি এবং রাজনৈতিক কারসাজি নিয়ে এসেছে।
এছাড়া বেইজিং দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির সরকার-অধিভুক্ত কোম্পানিগুলো দক্ষিণ এশিয়ায় একটি অন্যায্য সুবিধা লাভের জন্য ব্যবহার করে।
চীনা অ্যাপ যেভাবে ভারতীয় ঋণগ্রহীতাদের প্রতারিত করেছে
করোনার সময় চীনা মালিকানাধীন মাইক্রো-লেন্ডিং অ্যাপগুলো ভারতে সন্দেহজনক শর্তে ভারতে কাজ শুরু করে। সঠিকভাবে পরিচালনা করা হবে এমন দাবি করে দেশটির ইনস্ট্যান্ট-লোন অ্যাপস মোমো, ক্যাশবাস, টাইমলি ক্যাশ, ওয়াই ক্যাশ, কিশট, রোবো ক্যাশ, ফাস্ট রুপি, ক্যাশ মামা এবং লোন টাইম ভারতীয়দের পে-ডে লোন অফার করছিল। লাখ লাখ লোক এসব অ্যাপ নামায়। তবে ঋণগ্রহীতাদের কাছে অতিরিক্ত প্রসেসিং ফি এবং সুদের হার নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
তবে বেশ কিছুদিন পরেই এসব অ্যাপ নিয়ে অভিযোগ গুরুতর হতে শুরু করে।
বাংলাদেশে চীনের অবৈধ কার্যকলাপ
বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করতে গিয়ে এক চীনা নাগরিককে আটক করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। দেখা যায়, ওই ব্যক্তি চীনে তিনি চীনে এক হাজার ৩০০ভারতীয় সিম কার্ড সরবরাহ করেছেন। অভিযোগ, এসব দিয়ে তথ্য চুরি, লোক ও ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশে চীনা নির্মাণ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ উঠছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন (সিআরবিসি) বাংলাদেশের সরকারি প্রকল্পের জন্য নির্মাণ উপকরণ আমদানির সময় কর ফাঁকির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়। এটি চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানির (সিসিসিসি) একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশে সড়ক ও সেতু নির্মাণে নিয়োজিত ছিল। মেগাপ্রকল্পে এই তহবিল আত্মসাতের ঘটনা সামনে আসায়, চীন সরকার বাংলাদেশের তিনটি অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
সরকার থেকে সরকার বা জিটুজি অনুমোদিত প্রকল্পের অধীনে, চীন নিশ্চিত করেছে যে এটি স্থানীয় ঠিকাদার নিয়োগের কোনো সম্ভাবনা ছাড়াই চীনা ঠিকাদারদের নিয়োগ দেবে। তাছাড়া এসব কোম্পানি বিভিন্ন অজুহাতে বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ায়।
একটি কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, পদ্মা সেতুর উভয় প্রান্তে রেললাইন বসানো এবং চট্রগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যাঙ্ক নির্মাণ- এই দুটি প্রকল্পেরই কাজ শেষ করতে অনেক দেরি হচ্ছে। একাধিকবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে মূল প্রাক্কলনের দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
কিছু অসমর্থিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চীনা কোম্পানিগুলো চীন থেকে সাব কন্ট্রাক্টর নিয়োগ করে এবং বাংলাদেশ সরকারকে ট্যাক্স না দেওয়ার জন্য তাদের প্রধান কোম্পানির অংশ হিসেবে দেখায়।
নেপালে চীনের অবৈধ কর্মকাণ্ড
নেপালে চীনা বিনিয়োগের মাত্রা যেমন বেড়েছে, তেমনি নির্লজ্জ ও অসাধু ব্যবসায়িক চর্চায় জড়িত থাকার জন্য চীনের দুর্নামও বেড়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কর্তৃপক্ষ নেপালে অবৈধভাবে বসবাসকারী ১২২ জন চীনা নাগরিককে আটক করেছে। অভিযোগ পাওয়া ্যায়, ইলেকট্রনিক লেনদেনের মাধ্যমে আটক এসব ব্যক্তি আর্থিক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত।
এবিসিবি/এমআই