চাঁদ দেখা নিয়ে মতভেদের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হলো রোজা, মুসলমানদের অভিবাদন জানালেন প্রধানমন্ত্রী

শুরু হয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র মাস রমজান। অস্ট্রেলিয়ায় অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি মুসলমান বাস করছেন। তাদের একটি বড় অংশ আজ ১৩ এপ্রিল পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিনটি পালন করছেন। চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল অপর অংশ শুরু করবে আগামীকাল ১৪ এপ্রিল।
সংযমের মাস রমজান উপলক্ষে মুসলমানদের প্রতি সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।
মিঃ মরিসন তার ফেইসবুক পেজের মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ”আমি ২০২১ সালের রোজা শুরু উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি জানাই আমার উষ্ণ অভিবাদন।”
তিনি বলেন, “এই পবিত্র মাসে, সারা বিশ্বের মুসলমানরা তাদের বিশ্বাসের মূল বিষয়গুলোর কাছে ফিরে যাবে, এবং সেখানে তারা নব শক্তির সন্ধান করবে। শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে আপনি পাবেন দয়া, উপবাসে পাবেন উদারতা।”
অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তর কমুনিটিতে মুসলমানদের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবং সবার সাথে ভাগ করে নিতে গিয়ে আপনারা অস্ট্রেলিয়ান সমাজকে সমৃদ্ধ করেছেন।”
কোভিড ১৯-এর প্রাদুর্ভাবের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ বছরের রমজান মাসটি গত বছরের মত হবে না।”
তিনি বলেন, “এই প্রাদুর্ভাবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের মুসলিম কমিউনিটি যেভাবে সাড়া দিয়েছে তাতে তাদের প্রতি আমার বিপুল শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা রয়েছে।”
এদিকে প্রতিবারের মত এবারও রোজা শুরুর ক্ষেত্রে চাঁদ দেখার বিষয় নিয়ে মতভেদ আছে। তবে রোজাদারদের একটি অংশ আজ ১৩ এপ্রিল থেকেই রোজা পালন করবেন।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমামস কাউন্সিল গত ৯ এপ্রিল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে মঙ্গলবার ১৩ এপ্রিল, ২০২১ সালে রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। প্রতি রোজার আগের দিন রাত থেকে তারাবীহ নামাজ পড়া হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ১২ এপ্রিল এশার নামাজের পর রমজানের প্রথম তারাবীহ পড়বেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমামস কাউন্সিল অনুসারী মুসল্লিরা।
তবে অন্যদিকে চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল মুন-সাইটিং অস্ট্রেলিয়া গতকাল ১২ এপ্রিল এক বিবৃতিতে বলেছে, অস্ট্রেলিয়ার কোথাও রমজানের চাঁদ দেখা যায়নি। তাই তারা আগামী ১৪ এপ্রিল রোজা শুরু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
তবে রোজা শুরুর দিন নিয়ে মতভেদ থাকলেও রোজা পালনকে মুসলমানরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোজা পালন যার মাধ্যমে রোজাদাররা সংযম সাধনাও করে থাকেন।
কেমন হবে অস্ট্রেলিয়ার রোজার মাসটি?
সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আবার জাঁকিয়ে বসলেও অস্ট্রেলিয়া এখনো ভাল অবস্থায় আছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনাভাইরাসের স্থানীয় সংক্রমণ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
তবে করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর রোজার মাসটি ছিল ভিন্ন, সংক্রমণের আশংকায় পুরো অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিটির দিনগুলো কাটতো অনিশ্চয়তায়।
তাই গত বছরের তুলনায় পর্যবেক্ষকরা কিছুটা স্বাভাবিকতার প্রত্যাশা করছেন, তবে অনেকেই এখনও অর্থনৈতিক চাপ কাটাতে লড়াই করছেন।
লেবানিজ বংশোদ্ভূত ইবতেহাজ শাহরুখ বলেন যে, তিনি এই বছর পবিত্র মাসের অপেক্ষায় রয়েছেন যাতে তিনি আরও একবার পরিবারের সাথে উদযাপন করতে পারেন।
তিনি বলেন, “রোজার এ সময়ে আমার পরিবারকে একসাথে পাওয়া, এটি সত্যিই ভাল লাগে। সারাদিন রোজা রেখে আমরা ইফতার করি, নামাজ আদায় করি এবং তারপর আমরা এসে একসাথে খেয়ে থাকি এবং এরপরে আমরা একসাথে তারাবীহ নামাজ পড়ি, আমরা এখন মসজিদে যেতে পারি।”
রমজান আধ্যাত্মিক সংযোগ এবং একীকরণের এক মাস যেখানে রোজাদাররা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস করে।
তবে মুসলমানদের এই রোজার ঐতিহ্যে কোভিড ১৯ মহামারী ছন্দপতন ঘটিয়েছিলো, গত বছরে তাদের অনেক আয়োজন কমাতে হয়েছিল।
দেশজুড়ে বেশিরভাগ রাজ্যে পাঁচজনের বেশি ইনডোরে সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল, যার অর্থ ইফতার করা এবং রেস্তোঁরাগুলিতে সমাবেশের মতো ঐতিহ্যগুলো সম্ভব ছিল না।
আফগান বংশোদ্ভূত সেলিম দীন সিডনির লাকেম্বায় একটি রেস্টুরেন্ট চালান, এখানে রমাজনের সময় রাতের বেলায় তারাবীহ নামাজ শেষে লকজন রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে, সময় কাটায়। গত বছর রমজানে মিঃ দীনের ব্যবসা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, “গত বছর লাকেম্বাকে হটস্পট ঘোষণা করা হয় তখন তার ব্যবসার ক্ষতি হয়। তবে আমরা টিকে থাকতে চেষ্টা করেছিলাম, এবং এখনো আছি, এখানে যেহেতু একটি মসজিদ আছে, তাই মুসলিম কমিউনিটিকে এখানে আসতে হয়।”
তবে এবছরও লাকেম্বার নাইট মার্কেটটি খোলা থাকবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে যাই হোক রমজানে রোজাদারদের আবারো বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে একসাথে ইফতারি করার ঐতিহ্য ফিরে আসবে এ ব্যাপারটি নিশ্চিত।
এসবিএস বাংলা