লোকারণ্য শহীদ মিনার থেকে সরকার পদত্যাগের ১ দফা ঘোষণা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবিতে এবং গ্রেফতারের প্রতিবাদে শনিবার ঢাকার বিশাল এক সমাবেশ থেকে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সবার নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে জেলায় জেলায় গণমিছিল কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, রাজশাহীসহ অনেক শহরে বিশাল সমাবেশ করেছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া ও গাজীপুরে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া বরিশালে মহাসড়ক অবরোধ ছাড়াও পুলিশ বক্স ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহীতেও তিনটি পুলিশ বক্সে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি জেলায় আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আগের ঘোষণা অনুযায়ী রোববার থেকে আন্দোলনকারীদের ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।
ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশে আন্দোলনকারীদের একজন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “এ সরকার কোনভাবেই আর এক মিনিট ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করলেই হবে না, বরং খুন, লুটপাট, দুর্নীতি এদেশে হয়েছে তার বিচার হতে হবে। আমরা পদত্যাগ দিয়ে তাকে এক্সিট রুট দিতে চাই না। তাকে পদত্যাগও করতে হবে, বিচারের আওতায়ও আনতে হবে”।
এর আগে আন্দোলনকারীদের সাথে শনিবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন “আন্দোলন চলে গেছে তৃতীয় পক্ষের হাতে, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে যেতে চায়। এই অশুভ শক্তির অশুভ তৎপরতা আমরা সফল হতে দিতে পারি না”।
অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী বলেছেন কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে এবং ছাত্র-শিক্ষার্থীদের বিজয় অবশ্যই হবে। “দেশে একটা গণজাগরণ শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সাধারণ মানুষ যোগ দিয়েছেন। সব পেশার মানুষ, সব ধরনের মানুষ এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে”।
শহীদ মিনার ও ক্যাম্পাস লোকে লোকারণ্য
ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। সেখানে মূহুর্মূহু সরকার বিরোধী শ্লোগানে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি এবং সরকারের পদত্যাগের দাবি জানায় আন্দোলনকারীরা।
দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এছাড়া শিল্পীদের একটি গ্রুপসহ বিভিন্ন প্লাটফরম থেকেও বেশ কিছু ছোট ছোট মিছিল এসে আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দিয়ে তাদের সংহতি প্রকাশ করেছে।
শিক্ষার্থীদের অনেকের অভিভাবকও সেখানে জমায়েত হয়েছেন। আজিমপুর এলাকা থেকে সপরিবারে আসা এক অভিভাবক বিবিসি বাংলাকে বলেন তার এক সন্তান কয়েকদিন ধরেই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিচ্ছে।
“আমরাও দুদিন ধরে আসছি এসব কর্মসূচিতে। ছাত্র হত্যার প্রতিবাদ করতে আমরা এখানে এসেছি,” বলছিলেন তিনি। শহীদ মিনারের বিভিন্ন দিক দিকে একের পর এক মিছিল আসায় পুরো এলাকা বিক্ষোভকারীদের উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে গেছে। রিকশা চালকদের একটি দলও সেখানে গিয়ে সংহতি জানিয়েছে।
এর আগে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও মোড়ে জমায়েত হয়ে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যায় মিছিলকারীরা।
আর সমাবেশের শেষ পর্যায়ে নয় দফার বদলে সমন্বয়কদের দিক থেকে সরকার পতনের এক দফার ঘোষণা দিলে আন্দোলনকারীরা শ্লোগানে উত্তাল হয়ে পড়ে।
পরে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ টিএসসি ও শাহবাগ এলাকায় ও আরেকটি অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করে সরকার বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে। -বিবিসি বাংলা
এবিসিবি/এমআই