Type to search

Lead Story রাজনীতি

রাজাকার পরিবারের সন্তান ওবায়দুল কাদের : একরামুল

রাজাকার পরিবারের সন্তান ওবায়দুল কাদের -এবিসিবি নিউজ-abcb news

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। এক ভিডিওবার্তা দেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। বার্তায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পরিবারকে তিনি রাজাকারের পরিবার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

পাশাপাশি ২৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপে জেলা আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক জানান, নোয়াখালী কমিটি না দিলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এসব নিয়ে কথা বলা শুরু করবেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে একথা বলেন তিনি। এর পরপরই এটি ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। একরামুল চৌধুরীর পুরো বক্তব্যটি ছিল ঠিক এরকম- ‘দেশি মানুষ, আসসালামুআলাইকুম। আমি কথা বললে তো মির্জা কাদেরের বিরুদ্ধে কথা বলব না, আমি কথা বলব ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। একটা রাজাকার ফ্যামিলির লোক এই পর্যায়ে আসছে… তার ভাইকে শাসন করতে পারে না। এগুলো নিয়ে আমি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কথা বলব। আমার যদি জেলা কমিটি না আসে তাহলে আমি এটা নিয়ে শুরু করব’। কিছুক্ষণ পর তার ফেসবুকে ভিডিওটি আর পাওয়া যায়নি।

পরের ঘটনা শুক্রবার দুপুরে। ফের ফেসবুক লাইভে আসেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। এবার সুর পাল্টে তিনি বলেন, নিউজ মিডিয়া বিভ্রান্তি ছড়াবেন না কেউ, ওবায়দুল কাদের সাহেব না শুধু মির্জাকে বুঝিয়ে গতরাতে ফেসবুকে পোস্ট করছি। আমার গালে জুতা মারার মিছিল করাল সে, আমি ১৮ বছর ধরে নোয়াখালী আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে যাচ্ছি দলীয়ও প্রধান ও ওবায়দুল কাদেরের দিকনির্দেশনায়, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমি, মির্জা আমার জন্য জুতা মিছিল করায়, আমি জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছি মির্জার বিরুদ্ধে রাজপথে আর কোনো বিক্ষোভ প্রতিবাদ করার দরকার নাই, সে এমন কোনো ফ্যাক্ট না, তার বিরুদ্ধে ফাইটে নামতে হবে, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অর্জনের সুনাম ধরে রাখতে হবে।

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কাদের, তার প্রতি আমি এবং আমাদের শ্রদ্ধা আজীবন হৃদয় থেকে থাকবে, নোয়াখালী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমরা সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে ভালোবাসি সুতরাং কোনো ঠেলাঠেলি নয় সংগঠনকে গতিশীল করতে কাজ করুন সবাই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। ফেসবুকে পরের ভিডিও নিয়ে বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। একজন দ্বিতীয় ভিডিওটির নিচে লিখেন ‘আগে বাঁশ পরে হাঁস।’

পুরো বিষয়টি নিয়ে একরামুল করিম চৌধুরী পরিষ্কার করে গণমাধ্যমে বলেন, প্রথম ভিডিও সরিয়ে নিলেও আমি আসলে ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কিছু বলিনি। আমি মির্জা কাদেরকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলেছি। মির্জা কাদেরের চাচা রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। তাকে কাদেরের বাহিনী গুলি করে মেরেছে। তার বাবা ছিলেন মুসলিম লীগের।

মির্জা কাদেরের নানা ছিলেন শান্তি কমিটির কমান্ডার। মামা ছিলেন রাজাকার। তাদের পুরো বংশই ছিল রাজাকার। গণমাধ্যমকর্মীরা খবর নিলে জানতে পারবেন তার পরিবারে কারা রাজাকার ছিল। তবে ওবায়দুল কাদের এমপি একজন মুক্তিযোদ্ধা। গত এক মাস ধরে ধৈর্য ধরেছি। দীর্ঘদিন থেকে তার ছোটভাই আবদুল কাদের মির্জা বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে এলোমেলো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু তিনি তার ভাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, এ জন্য তিনি একথা বলেছেন। একটা রাজাকার বংশের লোক নিয়মিত ৩০০ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বলে যাচ্ছেন, তার বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা নেই দলের ভেতর। বলেন, প্রায় পাঁচ-ছয় মাস আগে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ওই কমিটি এখনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে নোয়াখালীতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার বিকালে কোম্পানিগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার রূপালী চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ঘোষণা দেন, নোয়াখালী জেলা কমিটি বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি পালিত হবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে কট‚ক্তি করা, নোয়াখালী জেলা কমিটি বিলুপ্ত ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ একরামুল করিম চৌধুরীকে জেলা কমিটি থেকে অপসারণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।

পরে মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সময়ের আলোকে জানান, একরামুল করিম চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করলে নোয়াখালীর অপরাজনীতি, চাঁদাবাজি, চাকরি বাণিজ্য ও প্রশাসনকে প্রভাবিত করা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা কলকাতা ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আমাদের এলাকার অনেক হিন্দু পরিবারকে রক্ষা করেছেন। আমার ভাই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএলএফ ফিল্ড কমান্ডার ছিলেন। আমাদের পরিবারের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আমি যদি কোনো অপরাধ করে থাকি তাহলে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য নিয়ে আমার বিচার করা হোক।

Translate »