Type to search

Lead Story রাজনীতি

রাজনীতির সংস্কারে বিএনপির সাড়া

নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে চলমান সংলাপে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একাট্টা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারেও একমত হয়েছে তারা। ওই সংলাপে শুধু সরকার বদলের আন্দোলন নয়, আগামীতে রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনে রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির অঙ্গীকারও চেয়েছে উদার গণতান্ত্রিক পাঁচটি দল। দলগুলো জানিয়েছে, ক্ষমতায় এলে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনে বিএনপি রূপরেখায় কী উপস্থাপন করে, তার ওপর নির্ভর করছে যুগপৎ আন্দোলনের ভবিষ্যৎ। তবে সংলাপে বিএনপির সঙ্গে প্রায় সব ইস্যুতেই ঐকমত্যে পৌঁছে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো।

অবশ্য রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে সংস্কার, নির্বাচন, যুগপৎ আন্দোলন ও ভবিষ্যতে সরকার গঠনের প্রশ্নে সংলাপে দেওয়া রাজনৈতিক প্রস্তাবগুলো ইতিবাচক হিসেবে দেখছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এসব প্রস্তাবকে তাদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সম্পূরক বলে মনে করছে দলটি। দলগুলোর চাওয়া ও নিজের লক্ষ্য সামনে রেখে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করছে। নির্বাচনে জয়ী হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব দলকে নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের আশ্বাসও দিয়েছে বিএনপি।

সরকারবিরোধী ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট’ গড়তে এরই মধ্যে ছোট-বড় সমমনা ডান-বাম ও ইসলামী ২২টি দলের সঙ্গে প্রাথমিক সংলাপ শেষ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের বাইরে ‘গণতন্ত্র মঞ্চে’র শরিক পাঁচটি দলের সঙ্গে সংলাপ করে দলটি। জোটগত আন্দোলনের পর ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চায় এ দলগুলো। তবে নবগঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ বহাল রেখেই সরকারবিরোধী বৃহৎ জোটে যোগ দেওয়া এবং যুগপৎ আন্দোলনে দলগুলো সম্মত হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সাংবিধানিক সংস্কারসহ ২১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। জবাবদিহি ও ভারসাম্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গড়তে গণসংহতি আন্দোলন দিয়েছে সাত দফা প্রস্তাব। অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সংস্কারসহ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি উত্থাপন করেছে ৩১ দফা। রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনেই ভারসাম্য চায় নাগরিক ঐক্য। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও সংবিধানের সংশোধনসহ ১০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ।

সূত্র জানায়, বিএনপির বাইরে অন্য দলের কাউকে বৃহত্তর জোটের ‘শীর্ষ নেতা’ করতে চাইলে সিনিয়র হিসেবে নিজেকে ওই নেতৃত্বের আসনে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছেন এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। সুদূর লন্ডন থেকে নয়- আগামী দিনে কঠিন সময়ে রাজনৈতিক মাঠে সশরীরে উপস্থিত থেকেই নেতৃত্ব দিতে একজন গ্রহণযোগ্য ‘শীর্ষ নেতা’ চান কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। অবশ্য ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংলাপের ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি।

সংলাপ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, এ পর্যন্ত যত দলের সঙ্গে সংলাপ করেছি, সবাই নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয়েছে। আন্দোলন ছাড়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় বলেও দলগুলোর নেতারা বিশ্বাস করেন। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন তাঁরা মেনে নেবেন না বলেও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎই বলে দেবে তারা কোন পথে এগোবেন, আন্দোলনের ধারা ও গতি কী হবে?

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দলগুলোর অনেক প্রস্তাবের সঙ্গে আমরাও একমত। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জয়ী হলে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ভূমিকা রাখা সব দলকে নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করব। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংলাপ হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রথম পর্বের সংলাপ থেকে আসা প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে শিগগির দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে যাবে তারা। এ ছাড়া বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে একটি লিয়াজোঁ কমিটিও গঠন করা হবে।

যেসব দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে :গত ২৫ মে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে শুরু বিএনপির এই উদ্যোগ। এ পর্যন্ত ছোট-বড় ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে দলটি। বিগত নির্বাচনের আগে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও আগের ২০ দলীয় জোটের বাইরে এখন পর্যন্ত নতুন সমমনা হিসেবে সংলাপ করেছে বাম ঘরানার জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন ও সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে। তৎকালীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য এবং মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের একাংশের সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে গণফোরামের (মন্টু) একাংশ ছাড়া বাকি পাঁচটি দলই নবগঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চে’র শরিক দল।

২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে সংলাপ হয়েছে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন কল্যাণ পার্টি, মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), মওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ-ভাসানী, মুফতি মো. ওয়াক্কাসের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খন্দকার লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), শেখ জুলফিকার রহমানের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ, কাজী আবু তাহেরের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), আবু তাহের চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক পার্টি, রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল, সাইফুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক লীগ, গরীবে নেওয়াজের নেতৃত্বাধীন পিপলস লীগ ও সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বাধীন জাতীয় দলের সঙ্গে।

সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে সংলাপের সিদ্ধান্ত না হলেও দলটির সঙ্গে বিরোধ তৈরি না করে সরকারবিরোধী জোট ও যুগপৎ আন্দোলনে যাবে বিএনপি। এ ছাড়া শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে সংলাপেরও সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপি সূত্র দাবি করেছে, ২০ দলীয় জোটের বাইরে ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলগুলো সরকারের চাপের মুখে রয়েছে জানিয়ে এ মুহূর্তে সংলাপে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর যে অংশ বেরিয়ে গেছে, তারাও আপাতত নিষ্ফ্ক্রিয় রয়েছে।

জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রত্যাশা এলডিপিপ্রধানের :সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জোটের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অলি আহমদের জানার আগ্রহ ছিল, ২০ দলকে সাইডলাইনে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট করার কারণ কী ছিল? কাদের বা কার উদ্যোগে এটি হয়েছিল? এ ফলাফলের জন্য কে দায়ী? বিষয়গুলো জোটের শরিক হয়েও তাঁদের কাছে ধোঁয়াশা ছিল। আবারও নতুন উদ্যোগে ওই ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি হবে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন তিনি। অলি আহমদের ইঙ্গিত ছিল, বিএনপির নেতৃত্বের বাইরে অন্য কেউ নতুন জোট আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্ব দেবে কিনা? অলি আহমদ আশা করেন, বিএনপির বাইরে থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্ন এলে সিনিয়র হিসেবে তাঁর নেতৃত্বেও হতে পারে। অলির সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এরই মধ্যে দু’দফা সংলাপ করেছেন। অলি আহমদের বক্তব্য তাঁরা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। বিষয়গুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছেন।

অবশ্য লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ সমকালকে বলেছেন, তাঁর সঙ্গে দু’দফা সংলাপে যুগপৎ আন্দোলন, সরকারের পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংসদ বিলুপ্ত করতে একমত পোষণ করেছেন তাঁরা। জোটের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রশ্নে তিনি বলেন, এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি।

আসন বণ্টনে ভারসাম্য আনার প্রস্তাব নাগরিক ঐক্যের : সংলাপে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে একমত পোষণ করে নাগরিক ঐক্য। একই সঙ্গে নির্বাচন ও বিজয়ী হলে বিভিন্ন বিষয়ে ভারসাম্য রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে তারা। নির্বাচনে জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন হওয়া উচিত বলে মনে করে দলটি। আর ভোটে জয়ী হলে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের কর্মপরিকল্পনা নেওয়ারও তাগিদ দেওয়া হয়। যদি নির্বাচনে আসন বণ্টনে ভারসাম্য না থাকে, তাহলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে তারা।

এ ব্যাপারে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সমকালকে বলেন, একটি জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংলাপে আমরা কিছু বক্তব্য রেখেছি। দ্বিতীয় দফায় সংলাপে বিএনপিও আন্দোলনের লিখিত রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করবে বলে আশা করছি।

সশরীরে মাঠের শীর্ষ নেতা চায় কল্যাণ পার্টি : সংলাপে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেছেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং আইনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে রাজনীতির বাইরে আছেন। তিনি আশা করেন, হয়তো নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে তাঁর এ অবস্থান থাকবে না। দলের পরবর্তী শীর্ষ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে রয়েছেন। এখন সেখান থেকে ভার্চুয়ালি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রামের সময় দেশে সশরীরে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য ও সুনির্দিষ্ট নেতা লাগবে। তিনি মনে করেন, অন্যরাও বিষয়টি এভাবে চিন্তা করছেন।

তিনি বলেন, সংলাপে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনের সংগ্রাম, সবার সংগ্রাম হতে হবে। আন্দোলনে বুদ্ধিভিত্তিক অংশকেও কোনোভাবে অবহেলা করা যাবে না।

পাঁচ দলের নানা প্রস্তাব :বাম ও উদার গণতান্ত্রিক সাতটি দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আগামী সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। তবে এই জোট বহাল রেখেই সরকারবিরোধী বৃহৎ জোটে যোগ বা একসঙ্গে আন্দোলন করতে চায় দলগুলো। সূত্র জানায়, সংলাপে এসব দলের শীর্ষ নেতারা বিএনপিকে জানিয়েছেন, শুধু আওয়ামী লীগকে নামিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে যুগপৎ আন্দোলন করতে চান না তাঁরা। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনও প্রয়োজন। অতীতে বিএনপির শাসন ব্যবস্থাও তাঁরা দেখেছেন। ফলে জনগণের আস্থা অর্জনে সুশাসনের প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন-সংগ্রামে সাধারণ মানুষের সমর্থন পাওয়া যাবে না।

সাংবিধানিক সংস্কার চায় জেএসডি :সংলাপে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণসহ ২৪ দফা প্রস্তাব দিয়েছে জেএসডি। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, শাসনপদ্ধতির আমূল পরিবর্তন, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রাদেশিক সরকার গঠনসহ রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

সংলাপ সম্পর্কে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব সমকালকে বলেন, আগামীতে সরকার ও শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের সংগ্রামে আমরা একসঙ্গে পথ চলতে সংলাপে নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। বিরাজমান রাজনৈতিক শাসনতন্ত্রের সংকটে সংসদের উচ্চকক্ষ, প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ও সাংবিধানিক কমিশনসহ আমরা ১০ দফা ও ১৪ দফা উপস্থাপন করেছি।

শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় গণসংহতি আন্দোলন :প্রথম সংলাপে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লিখিত রাজনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। এতে সংকট নিরসনে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেছে তারা। ওই সরকার ঐকমত্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নূ্যনতম সাংবিধানিক সংস্কার করে একটা কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থাৎ জবাবদিহিপূর্ণ, ভারসাম্য গণতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামো ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সাত দফা প্রস্তাব করেছে।

এ ব্যাপারে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সমকালকে বলেন, দেশের বর্তমান সংকট উত্তরণে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার। সরকার পতনের আন্দোলন তারই অংশ। তাদের প্রস্তাবে বিএনপি কতটুকু এগিয়ে আসে, কাদের সঙ্গে আন্দোলন করবে, ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনে লক্ষ্য নির্ধারণে কী ভূমিকা হবে- তারা তা জানতে চেয়েছেন। বিএনপির প্রতিনিধি দল দ্বিতীয় দফা সংলাপে তাঁদের অবস্থান পরিস্কার করবেন বলে জানিয়েছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি :সংসদ বাতিল, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত, অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সংস্কার, রাষ্ট্রের আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে উপযুক্ত ভারসাম্য, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে কমিশন গঠন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ ৩১টি দফা উত্থাপন করেছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।

জানতে চাইলে দলটির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, আজকে আমরা আওয়ামী লীগের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে যে সমালোচনা করছি, একই সমালোচনা বিএনপির শাসনামলেও করেছি। আমরা যে ২১ দফা দিয়েছি, সেগুলোর বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য প্রয়োজন। কারণ, রাষ্ট্রকে সংস্কারের মাধ্যমে মেরামত করতে হবে।

১০ দফা গণ অধিকার পরিষদের :রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও কার্যকর প্রধান সংসদ প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ ১০ দফা প্রস্তাব করেছে গণ অধিকার পরিষদ। তাদের প্রস্তাবে রয়েছে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা, সভা-সমাবেশ করার অধিকার, বর্তমান সরকারের দুর্নীতি শ্বেতপত্র প্রকাশ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইত্যাদি।

এ ব্যাপারে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া সমকালকে বলেন, সংলাপে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ সরকারের পতনে যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে একমত হয়েছি। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনসহ সরকার যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে, তা পুনর্গঠনসহ ১০ দফা প্রস্তাব দিয়েছি। বিএনপি এসব প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে।

২০ দলের শরিকদের মত :২০ দলীয় জোটের শরিক দলের প্রায় সবার অভিন্ন বক্তব্য। তারা সবাই বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যুগপৎ আন্দোলন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে তারা।-সমকাল

এবিসিবি/এমআই

Translate »