Type to search

Lead Story সম্পাদকীয় ও মতামত

ভারতে করোনা ও ধর্মান্ধতার যুগপৎ হামলা

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী:

ইবসেনের ‘পিপল্‌স এনেমি’ গল্পটি যারা পড়েছেন, অথবা সত্যজিৎ রায়ের ‘গণশত্রু’ ছবিটি যারা দেখেছেন, তাদের কাছে ধর্মান্ধতার মতো মানুষের এত বড় শত্রুর নতুন পরিচয় তুলে ধরার কোনো প্রয়োজন নেই। শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে ধর্মান্ধতা মনে হয় জন্মগত। ধর্মান্ধতা প্রচারের জন্য যেমন মানুষ আছে, তেমনি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করার মানুষ আছে। তবু ধর্মান্ধতার দিকেই মানুষ বেশি ঝোঁকে। ধর্মান্ধতা কভিড-১৯-এর মতোই একটি ভয়াবহ রেখা। ধর্মান্ধতার কবলে পড়লে লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। যেমন কভিডে মারা যায়। আর ধর্মান্ধতা ও কভিডের যদি যোগ হয়, তাহলে মহামৃত্যুর তাণ্ডব শুরু হয়। যেমন আজ শুরু হয়েছে ভারতে। রোজ হাজার হাজার মানুষের জীবন ধ্বংস করছে কভিড। ধনী-গরিব পরোয়া করছে না। এই লেখার সময় খবর পেয়েছি, কভিডের বা করোনা মহামারির হামলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চাচি মারা গেছেন।

ভারতে এখন ভয়াবহ অবস্থা। কারফিউ দিয়েও কভিডকে থামানো যাচ্ছে না। দেশটিতে অক্সিজেন সংকট প্রকট। হাসপাতালে বেড নেই, উপচেপড়া রোগীদের জন্য। এমনকি রোজ যে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়, তাদের পোড়ানোর জন্য চিতা আর নেই। কবরেরও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দুনিয়ার ছোট-বড় বহু দেশ ভারতকে সাহায্যদানের জন্য এগিয়ে এসেছে। চেরনোবিলে আণবিক গবেষণাগারে বিস্ম্ফোরণের পর রাশিয়ার যে অবস্থা হয়েছিল, সে অবস্থার সুযোগ নিয়ে আমেরিকা সাহায্যদানের নামে রাশিয়ায় ঢুকে এত বড় দ্বিতীয় সুপার পাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধ্বংস করেছিল, ভারতের বর্তমান বিপর্যয় তার চাইতে বহুগুণ বেশি। ভারতের এত বড় বিপদ আর কখনও আসেনি।

ভারতের এই যে মহাবিপর্যস্ত অবস্থা, এর জন্য দেশ এবং বিদেশের অনেক বিশেষজ্ঞ দায়ী করছেন মোদি সরকারকে- বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার ধর্মান্ধ রাজনীতিকে। লন্ডনের ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি দায়ী করে প্রধান সম্পাদকীয় লিখেছে। ‘গার্ডিয়ানের’ অভিযোগ, মোদি ও আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট একই স্বভাবের লোক। দু’জনই চরম ডানপন্থি এবং নিজেদের জেদের জন্য কভিড-১৯ মহামারি শুরু হলে তা উপেক্ষা করছেন। ট্রাম্পের একগুঁয়েমির জন্য লাখ লাখ আমেরিকান নির্মমভাবে করোনায় মারা গেছে। মহামারি সারা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে অবস্থার লাগাম টেনে ধরায় এই বিপর্যয় কিছুটা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

গার্ডিয়ান ও অন্যান্য পশ্চিমা দৈনিক মোদির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলছে, সেই অভিযোগ এখন ভারতের অনেক জাতীয় দৈনিকের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে। ভারতে কভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ এগিয়ে আসছে জেনেও মোদি লাখ লাখ মানুষকে একত্র হয়ে কুম্ভমেলায় যোগ দেওয়া এবং গঙ্গাস্নানের অনুমতি দিয়েছিলেন। মানবতা মোদির মনে কোনো আবেদন সৃষ্টি করেনি। তার মনে প্রভাব বিস্তার করেছে ধর্মান্ধতা। মা গঙ্গা তার সন্তানদের রক্ষা করবেন- এই অন্ধ কুসংস্কার তার মনে ছিল। সেই সঙ্গে তিনি নির্বাচনের মৌসুমে এই ধর্মীয় কুসংস্কার মেনে হিন্দুদের ভোটের বাক্স সহজেই দখলে রাখবেন ভেবেছেন। অর্থাৎ তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য হিন্দু ভোটাররা তাকেই ভোট দেবে আশা করেছেন।

সৌজন্যে  সমকাল
Translate »