Type to search

Lead Story রাজনীতি

বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: বিএনপি

বর্তমান সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলকে জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দু’পক্ষের বৈঠক হয়েছে। এর পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

সকাল ৯টা থেকে সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠকের পর আমীর খসরু বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সব নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। এ কারণে আজ সারাবিশ্ব বাংলাদেশের ওপর নজর দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

এ জন্যই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশে তো তাদের যেতে হচ্ছে না। সূত্র জানায়, বৈঠকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন, বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর মামলা-হামলা, গুম ও খুনের বিবরণ ছাড়াও ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনী পরিবেশের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ছাড়াও প্রার্থীদের ওপর হামলার সচিত্র প্রতিবেদন, প্রার্থীদের কারাগারে নেওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা। নির্বাচনে জয়লাভে জালিয়াতি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, দিনের ভোট রাতে করা ও সর্বত্র দলীয়করণের বিষয় উপস্থাপন করেন তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ এবং পরবর্তী ঘটনার কথা বলা হয়েছে।

বিএনপি নেতারা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে এখন থেকেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে রদবদল, দলীয় অনুগতদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন ও বদলি করা হচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গোপন বৈঠক হয়েছে এবং সেই বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলকে নির্বাচনে জয়লাভ করানোর বক্তব্য দেওয়া  হয়েছে। ওই বৈঠকে বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলায় দ্রুত সাজা দেওয়া নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়েও বিএনপি নেতারা কথা বলেন। গত দু-এক দিনের ঘটনা তারা তুলে ধরেছেন। বলা হয়, ঝিনাইদহ জেলা যুবদল নেতা লিটন মণ্ডলকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাঁর হাতের কবজি কেটে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা ইশরাকের গাড়ি বহরে হামলা, নোয়াখালীতে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাওয়ার সময় হামলায় ৬০  নেতাকর্মী আহত হওয়ার ঘটনার সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা।

গত দুটি নির্বাচনে ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক না পাঠালেও এবার পাঠাবে কিনা জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, সেটা তাদের (ইইউ) সিদ্ধান্ত। আগে তো বাংলাদেশে নির্বাচন হতে হবে। পর্যবেক্ষকের প্রশ্ন তখনই আসে, যখন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। তারা নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা কোথাও কিন্তু যাচ্ছেন না। তবে কেন তারা বাংলাদেশে আসছেন। বিষয়টা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার– বাংলাদেশে নির্বাচন হয় না।

সংলাপের পরিবেশ যদি থাকে এতে বিএনপি যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা সবকিছু প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে সংলাপ কীভাবে? সংলাপের জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ লাগে। আগে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তার পর সংলাপের প্রশ্ন আসবে।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে কিছু বলেছেন কিনা– এ প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, এটা সর্বজনবিদিত ব্যাপার। আগামী নির্বাচন কেমন হবে তার লক্ষণ তো প্রতিদিনই দেখছি। আক্রমণ, মিথ্যা মামলা, জেল, ডিসি, এসপি ও ইউএনও পোস্টিং, কর্মীদের কবজি ছিন্ন করে ফেলা, বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করা, দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবহার করা, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা– এসব তো প্রতিনিয়ত চলছে।

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিএনপির মূল্যায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন দেখতে চান। এ থেকে আপনারা ধরে নিন, তাদের কী ধারণা এবং তারা কী চায় বাংলাদেশে। কূটনৈতিক ভাষায় এর চেয়ে বেশি কিছু বলার আছে?

ইইউর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন রিকার্ডো শেলেরি। বৈঠকে বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন– দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান।-সমকাল

এবিসিবি/এমআই

Translate »