Type to search

Lead Story জাতীয় বাংলাদেশ সম্পাদকীয় ও মতামত

ন্যান্সি পেলোসি: চীন ও তাইওয়ান ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান কী?

তাইওয়ান প্রণালীতে দীর্ঘ-পাল্লার তাজা গোলাবারুদ নিক্ষেপ করেছে চীন।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি’র তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেই পটভূমিতে বাংলাদেশ এক চীন নীতির অবস্থানে অটল থাকার কথা জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিবিসিকে বলেছেন, এক চীন নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হবে না। তবে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনার নিরসন চাইছে।

“আমরা এক চীন নীতিতে বিশ্বাস করি,” মি. আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন।

ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ অব্যাহতভাবে ‘এক চীন মতাদর্শ’ মেনে চলবে।

বাংলাদেশ সবসময়ই এক চীন নীতি অনুসরণ করেছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম

তাইওয়ান নিয়ে পরিস্থিতি

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, তাইওয়ানকে নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণ করছে।

” আমরা বুঝতে পারছি, কিছু উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করছি, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এই উত্তেজনা আর বাড়াবে না,” বলেন শাহরিয়ার আলম।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনার অবসান চাইছে।

তাইওয়ানের উপহার

তাইওয়ানের সাথে বাংলাদেশের কখনও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না।

চীনের সাথে সম্পর্কের কারণে অদূর ভবিষ্যতেও তাইওয়ানের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার চিন্তা নেই – বাংলাদেশ তাদের এই অবস্থান স্পষ্টভাবেই বলছে।

তবে করোনা ভাইরাস মহামারির সময় ২০২০ সালের অগাষ্ট মাসের শেষ দিকে তাইওয়ান কিছু চিকিৎসা সামগ্রী উপহার হিসাবে বাংলাদেশকে দিয়েছিল।

ঢাকায় সেই উপহার নেয়ার অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকারের তিনজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। এনিয়ে ঢাকায় চীনের দূতাবাস বলেছিল, তারা এতে দু:খ পেয়েছে।

মঙ্গলবার তাইওয়ান সফর করেন ন্যান্সি পেলোসি

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,মঙ্গলবার তাইওয়ান সফর করেন ন্যান্সি পেলোসি

এরআগে ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের সময় ঢাকায় তাইওয়ানের একটি বাণিজ্যিক অফিস খোলা হয়েছিলে।

তখন চীনা দূতাবাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং বাংলাদেশ সরকারকে ঢাকায় তাইওয়ানের সেই বাণিজ্যিক অফিস বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ চীন-এই দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের যে প্রভাব, তাতে বাংলাদেশ কখনও এক চীন নীতির বাইরে যাবে না।

তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ?

তাইওয়ানকে নিয়ে ঐ অঞ্চলে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমাদের দিক থেকে বাংলাদেশের ওপর কোন চাপ দেখা দেবে কীনা, এই প্রশ্নও অনেকের রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেছেন, তাইওয়ানকে নিয়ে বিশ্বে উত্তেজনা হলেও বাংলাদেশ কোন চাপে নেই।

এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমেরিকাও কিন্তু বলেছে যে তারা এখনও এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী। আমেরিকার নিজের নীতিরই পরিবর্তন নেই।”

তাইওয়ানের সাথে বাংলাদেশের যে বাণিজ্য তা এখনও বাংলাদেশ চীনের মধ্যে বাণিজ্যের সাথে তুলনা করার মত নয়।

বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার হিসাবে দেখা যায়, আমদানির ক্ষেত্র্রে চীন থেকে বাংলাদেশে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি আমদানি হয়ে থাকে।

সেখানে বছরে তাইওয়ান থেকে বাংলাদেশে ৮৫ কোটি ডলারের মতো আমদানি হয়।

এছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ঋণ দেয়াসহ নানাভাবে সহায়তা করে চীন।

এই বিষয়কে বাংলাদেশ বিবেচনায় রাখে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন মুনশি ফয়েজ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে দ্বৈতনীতি নিয়েছে এবং সেজন্য একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

কিন্তু তাতে বাংলাদেশের চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের আইনস্মত ও ন্যায্য অবস্থান বাংলাদেশ বুঝবে এবং সমর্থন করবে।

চীনা রাষ্ট্রদূত আরও লিখেছেন, আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি রক্ষায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ একসাথে কাজ করবে বলে তারা আশা করেন।

বিবিসি

Translate »