চীনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১২৬ জনের মৃত্যু

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১২৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭০০-এর বেশি মানুষ। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হিমশীতল আবহাওয়ার মধ্যেই চলছে উদ্ধার তৎপরতা। প্রতিকূল পরিবেশের কারণে উদ্ধারকারীদের বেগ পেতে হচ্ছে।
স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গানসু প্রদেশের জিশিশান কাউন্টিতে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্পে প্রতিবেশী কিংহাই প্রদেশও কেঁপে ওঠে। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ২। মঙ্গলবার থেকে জিশিশানের মাইনাস ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেই হাজারো উদ্ধারকর্মী অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা। ঘটনাস্থলে দ্রুত হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর এরই মধ্যে একাধিক পরাঘাত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলছে, আরও পরাঘাত হতে পারে। চীনের উত্তরাঞ্চলজুড়ে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে। তীব্র ঠান্ডায় কাঁপছে দেশটির অনেক জায়গা।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীনের শানশি, হেবেই ও লিয়াওনিং প্রদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। হিমশীতল তাপমাত্রা উপেক্ষা করেই কাজ করছেন উদ্ধারকারীরা। তবে হিমশীতল তাপমাত্রার কারণে উদ্ধারকারীরা পূর্ণমাত্রায় কাজ করতে পারছেন না।
উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, জিশিশান কাউন্টিতে কিছু লোককে এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গানসু প্রদেশে। প্রদেশটির জিশিশান কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এলাকাটির পাঁচ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত ১৩ বছরের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্প এটি। শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি এই ভূমিকম্পে অনেক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।
গানসু ব্লু স্কাই রেসকিউ টিমের এক কর্মকর্তা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির একটি কারণ হলো, এলাকাটির অনেক বাড়ি মাটি দিয়ে তৈরি, তা ছাড়া এলাকাটির বাড়িঘরও অনেক পুরোনো। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ঘরবাড়ি বসবাসের অযোগ্য হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
এদিকে চীনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় সমবেদনা ও শোক জানিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। একই সঙ্গে তিনি চীনকে এ দুর্যোগে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন। চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। তাইওয়ান নিজেকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। অন্যদিকে তাইওয়ানকে নিজের অঞ্চল দাবি করে চীন।
বিরোধের মধ্যেও ভূমিকম্পের জেরে চীনকে সহায়তার প্রস্তাব দিল তাইওয়ান। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, চীনকে সহায়তা দিতে আগ্রহী তাইপে। তাইওয়ান প্রায়ই ভূমিকম্পসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
এবিসিবি/এমআই