গোটা দেশকে বিপন্ন করে তুলেছে সরকার

সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, সরকার গোটা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। পরে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ যাদের চান তারাই ক্ষমতায় আসবে।
জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার (৮ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদারের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরফত আলী সপু, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজা, মাওলানা আলমগীর হোসেন, আবুবকর চাখারী, ইখলাস উদ্দীন বাবুল, এনামুল হক মাজেদী, মাওলানা কাজী মোশারেফ হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কারী সিরাজুল ইসলাম, কাজী মোস্তফা জামাল খোকন মাওলানা আলমগীর হোসেন খলিলী, হাফেজ মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ। এছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ওলামা দলের বিভিন্ন স্তরের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ জিয়া দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে সম্মান দেয়ার জন্য সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন সংযোজন করেন। বাংলাদেশের মানুষ হচ্ছে ধর্মভীরু।
আলেম ওলামাদের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজ আমাদের দু:খ হয়। শুধু ইসলামের পক্ষে থাকার কারণে অনেক আলেম ওলামাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসব কথা কিন্তু আমরা ভুলে যাইনি। আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা ও পাঠাগার তৈরি করেছিলাম। মন্দিরেও পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কওমি মাদ্রাসার জন্য অনেক কাজ করেছে দাবি করে সরকার বাহবা নিচ্ছে। তারা নাকি কওমি মাদ্রাসার দাওরা শিক্ষাকে মাস্টার্সের সমমান দিয়েছে। কিন্তু এই কাজটা বিএনপির আমলে প্রায় শেষ হয়ে যায়। আজ আলেমদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সরকার সেই কাজটি ভালোভাবে করে। তারা গোটা দেশটাকে বিপন্ন করে ফেলেছে। একজন মহিলা ফেসবুকে পোস্ট করায় রাতের বেলা তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশের মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের ২৯ বিভাগকে গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতির কোনো খবর যাতে প্রকাশ না হয়। এমনিতেই চ্যানেল ও পত্রিকাগুলোতে বলে দেয়া হয় কোন খবর যাবে কোনটা যাবেনা। খবর পর্যন্ত তারা নিয়ন্ত্রণ করে। আর প্রধানমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। সরকার গোটা দেশে বর্গীদের মতো লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের এই কঠিন সময়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী সরকারকে মোকাবেলা শুধু একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের বিরুদ্ধে ৩৫ লক্ষ মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এসবের দায় শেখ হাসিনা ও সরকারের। কারণ তারা বেআইনি হুকুম দিয়ে কাজ করাচ্ছে। দেশের প্রত্যেকটি থানার যারা বিএনপি করে এমন ৮ জন, অর্থদাতা ৫ জনের নামের তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা। এটা কি গণতন্ত্র?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি সংগঠন নিহত আবরারের স্মরণে কর্মসূচি পালন করতে গিয়েছিল। ছাত্রলীগ তাদের মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পিটিয়েছে। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা দিয়েছে। তারা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়েছে। দেশে অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার তাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। এই সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই পথ। সেটা হল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে দ্রুত পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে জনমত তৈরি করার জন্য আলেম ওলামাদের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ যাদের চায় তারাই ক্ষমতায় যাবে। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমরা একটি বৈষম্যহীন সামাজিক মূল্যবোধের রাষ্ট্র চাই।-সমকাল
এবিসিবি/এমআই