Type to search

Lead Story অপরাধ

এমপি জ্যাকব গংয়ের কব্জায় চরফ্যাশনের মধুমতি ব্যাংক : অবৈধ লেনদেনের ছড়াছড়ি

অর্থ আত্মসাৎ-এবিসিবি নিউজ-abcb news

ভোলার চরফ্যাশনে মধুমতি ব্যাংকের সদ্যবহিষ্কৃৃত ম্যানেজার মো. রেজাউল কবিরকে জিম্মি করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের ভাই ও ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে রেজাউল কবির নিজেই সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন। ওই দুজন ব্যাংকের টাকা আটকে রাখায় বরখাস্ত হতে হয়েছে ম্যানেজার রেজাউল করিবকে। এ ছাড়া তরিকুল ইসলাম শরীফ ও মো. জাহিদুল ইসলাম কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাংকটিকে ব্যবহার করতেন নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে। এমনকি গ্রাহকদের জমা করা টাকা নিজেদের ব্যবসার কাজে ব্যবহার করার মতো অনিয়মও ঘটেছে ওই শাখায়।

সাবেক ম্যানেজার রেজাউল কবির জানান, মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক ও ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্যের ভাই ও ভাতিজার নিয়ন্ত্রণে ছিল চরফ্যাশন শাখাটি। তিনি ওই ব্যাংকের নামমাত্র ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এমপির ছোটভাই মো. জাহিদুল ইসলাম তার মালিকানাধীন বিকাশের এজেন্ট ব্যবসার জন্য মৌখিকভাবে ওই ব্যাংক থেকে প্রতিদিন সকালে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা নিয়ে বিকালে আবার পরিশোধ করতেন। এক পর্যায়ে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা আটকে রাখেন জাহিদুল। ওই টাকা পরিশোধের তাগাদা দিলে গত ৪ জানুয়ারি ৪৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। তবে অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় ওই চেকটিও পাস হয়নি। জাহিদুলের ভাতিজা ও মধুমতি ব্যাংকের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শরীফ চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার জন্য ব্যাংকের ভল্টে জমা টাকা থেকে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা নিয়ে যান, তা আর পরিশোধ করেননি। তাকে জিম্মি করে এসব টাকা নেওয়া হয়েছে বলে রেজাউল দাবি করেন। শরীফের মালিকানাধীন মেসার্স মনোয়ারা ট্রেডার্সের হিসাবে অবৈধ টাকা লেনদেন করা হয়েছে।

ব্যাংকের সামান্য অফিসার হলেও শরীফ ঢাকা, বরিশালে বাড়িসহ বিপুল সম্পদের অবৈধ মালিক হয়েছেন। জ্যাকবের ভাইসহ শরীফ ব্যাংকের ভল্টে ব্যক্তিগত অবৈধ বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রাখতেন। সাইফুল নামে একজন ড্রাইভারের মাধ্যমে ওইসব টাকা জেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়া হতো। এ টাকা সাদা না কালো তা তিনি জানেন না আর এসব টাকা আয়ের উৎস কী, কোথায় থেকে আসে এসব টাকা- এমন প্রশ্ন চরফ্যাশনবাসীর মুখে মুখে। বেনামে এমপি জ্যাকবের ‘পরিবার উন্নয়ন’ নামে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের একটি এনজিও রয়েছে। যেখানে ভোলা জেলাসহ বরিশাল বিভাগে হাজার হাজার কোটি টাকা লোন দেওয়া হচ্ছে।

এমপি জ্যাকবের নামে-বেনামে ও আত্মীয়দের নামে মনপুরা, চরফ্যাশন, ভোলা, বরিশাল, ঢাকাসহ বিদেশে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলেও তিনি জানান। এমপি জ্যাকবের অর্ডারে তার ভাই ও আত্মীয়দের দিয়ে চলত ব্যাংকের সব কার্যক্রম। এজন্যই চরফ্যাশনে মধুমতি ব্যাংকের শাখা চালু করা হয়েছে।

এদিকে ব্যাংকের টাকার সমন্বয় করতে গিয়ে ১৩ জানুয়ারি বিভিন্ন ব্যাংকের নামে ১২টি পে-অর্ডার ইস্যু করেন সাবেক ম্যানেজার রেজাউল। ১৪ জানুয়ারির অডিট টিমের কাছে এর অনিয়ম ধরা পড়ে। এই অনিয়মের অভিযোগে রেজাউল কবিরকে ১৪ জানুয়ারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ব্যাংকের গ্রামীণ এন্টারপ্রাইজ, চার দেওয়াল ডেকরেটর, কায়িফ এন্টারপ্রাইজ, উপকূল ব্রিকস, মিলন ট্রেডার্স, মা ট্রেডার্স, উপকূল কনস্ট্রাকশন, রুহি ফার্নিচারের অ্যাকাউন্ট যাচাই করলে ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে বলে রেজাউল দাবি করেন। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান তিনি।

কোনো প্রমাণপত্র ছাড়া এবং বেআইনিভাবে এত টাকা দেওয়ার বিষয়ে রেজাউল বলেন, তিনি অনেকটা জিম্মি ছিলেন। জাহিদুল ও শরীফ ব্যাংকটাকে পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছেন। স্থানীয় প্রভাবের কারণে তিনি এর প্রতিবাদ করতে পারেননি। তবে ওপরের অ্যাকাউন্টের তথ্য যাচাই-বাছাই করলেই এসব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, জাহিদুল আর শরীফের আটকে রাখা টাকা সমন্বয় করতে তিনি ১৩ জানুয়ারি বিভিন্ন ব্যাংকের নামে ১২টি পে-অর্ডার কেটেছেন, যা পরদিন ১৪ জানুয়ারি অডিট টিমের তদন্তে ধরা পড়েছে। ব্যাংকের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী এটি সঠিক হয়নি। সেখানে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনেকটা ঘরোয়া ব্যাংকিং চলত। এ ছাড়া তার কোনো উপায় ছিল না। পে-অর্ডারের টাকা ছাড়াও বিভিন্ন হিসাবে আরও দেড় কোটি টাকার গরমিল রয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। ১৩ জানুয়ারি এইচএইচ আয়রন (সিডি-৪১) নামে একটি হিসাবে প্রতিষ্ঠানের মালিক কামাল মিয়াজি ২৩ লাখ টাকা জমা দেন। জমা ভাউচারে স্বাক্ষর থাকলেও তার হিসাবে ওই টাকা জমা হয়নি। তিনি টাকা তুলতে গেলে তার চেক ফেরত দেওয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি চরফ্যাশন থানায় জিডি করেন, যার নং-৭১১, তারিখ : ১৯.০১.২১ ইং।

একইভাবে পরিবার উন্নয়ন সংস্থার (এসবি-২৩) প্রায় ৪৩ লাখ টাকার হিসাবে গরমিল রয়েছে। রেজাউল কবির ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেননি দাবি করে বলেন, ১৪ জানুয়ারি অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশন টিমের নানামুখী প্রশ্নে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৭ জানুয়ারি তার পরিবারের সদস্য ছুটির দরখাস্ত নিয়ে গেলে তাদের পুলিশ দিয়ে আটক করে ২৪ ঘণ্টার নাটকীয়তার পর ছেড়ে দেয়। ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পে-অর্ডারের বিষয়টি ব্যাংকিং নিয়মে অনিয়ম বলেও তিনি স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য জাহিদুল ইসলাম সৌরভের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেননি। আর মধুমতি ব্যাংকের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম শরীফ জানান, তিনি ওই ব্যাংকের সামান্য কর্মকর্তা। ক্যাশের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ করা হয়েছে। তবে মনোয়ারা ট্রেডার্স নামে তার একটি হিসাব রয়েছে বলে জানান। এ বিষয়ে কথা বলতে এমপি জ্যাকবের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Translate »