উপনির্বাচন: আর্থিক সুবিধা’ নিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন জাপা প্রার্থীরা

আর্থিক সুবিধা নিয়ে ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর অভিযোগ এসেছে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কুমিল্লা-৫ এবং ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থীরা দলের অনুমতি ছাড়াই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। এতে নৌকার প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে গেছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় ২ প্রার্থীকেই দল থেকে বহিস্কার করেছে জাপা। কেন তারা সরে গেলেন, তা অনুসন্ধানে কমিটিও করা হয়েছে। তবে এবারই প্রথম প্রার্থী সরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এর আগে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়ে পরে সরে দাঁড়ানোর অনেক উদাহরণ রয়েছে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমন বহু ঘটনা রয়েছে। যেসব নির্বাচন বিএনপি জোট বর্জন করছে, সেখানেই জাপা প্রার্থীর সরে দাঁড়ানোর ঘটনা বেশি।
জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সমকালকে বলেছেন, যারা দলের অগোচরে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছে, তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা না মানলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আর্থিক লেনদেন না কী কারণে তারা নিজের সিদ্ধান্তে ভোট থেকে সরে গেছেন, তা খতিয়ে দেখতে কমিটি করা হয়েছে।
কুমিল্লা-৫ আসনে জাপার প্রার্থী ছিলেন জসিম উদ্দিন। ঢাকা-১৪ আসনে লাঙ্গল পেয়েছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক। দু’জনই শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলের অনুমতি ছাড়াই আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল হাশেমের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন জসিম উদ্দিন। স্থানীয় জাপা নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, টাকা নিয়ে ভোট থেকে সরে গেছেন তিনি।
মোস্তাকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে। তবে তার দাবি, এক টাকাও নেননি কারও কাছ থেকে। দলের ‘সহায়তা’ না পাওয়ায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আগা খান মিন্টুর সঙ্গে তার কখনও দেখা বা কথা হয়নি।
মোস্তাকুর রহমান বলেছেন, তিনি প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বিষয়টি তিনি জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে জানিয়েও প্রতিকার পাননি। চেয়ারম্যানকে তিনি বলেছিলেন ‘স্যার, ভোট করার পরিবেশ নেই। সব লুট করে নিয়ে যাবে। শুধু শুধু কর্মীরা কষ্ট পাবে, মারধর খাবে। এভাবে নির্বাচন করে লাভ নেই।’
তার অভিযোগ এর জবাবে জিএম কাদের তাকে বলেছিলেন- নির্বাচন করতেই হবে। নিজের টাকায় ভোটের প্রচার করতে হবে। দল টাকা-পয়সা দিতে পারবে না। মোস্তাক বলেছেন, ‘এরপর আমি বলি, তাহলে একটা সংবাদ সম্মেলন করে পরিস্থিতি জানান। কিন্তু জিএম কাদের বলে দেন, সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বলা যাবে না।’ মোস্তাকুর রহমানের দাবি, এ কারণেই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
ভোট থেকে সরে দাঁড়ানো আরেক প্রার্থী জসিম উদ্দিনের বক্তব্য জানা যায়নি। তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার কমিটি বিলুপ্ত করেছে জাপা। এ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল কবীর মোহন বলছেন, টাকার বিনিময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে জসিম উদ্দিন আত্মগোপন করেছেন। ফোন বন্ধ রেখেছেন। তার কারণে জাপার সব কর্মীর বদনাম হয়েছে।
প্রার্থী সরে যাওয়ার ঘটনা অন্যান্য নির্বাচনেও ঘটছে। বড় নির্বাচনগুলোর মধ্যে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরশনে জাপার প্রার্থী ‘আঁতাত’ করে সরে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। জাপার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আহমেদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে আওয়ামী লীগের ইকরামুল হক টিটু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র হয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, নৌকাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতাতে জাপা ‘সবল’ মনোনয়নপ্রত্যাশীকে প্রার্থীই করেনি।
এর আগে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে ভোট থেকে সরে যান লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি জাপা নেতা মো. নোমান। তিনি অর্থ পাচারের মামলায় কুয়েতে দণ্ডিত হয়ে এমপি পদ হারানো শহিদুল ইসলাম পাপুলের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৭৩টির ২৬টিতে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে নৌকার প্রার্থী। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর এর ১৪টিতে একাধিক প্রার্থী ছিল। অন্তত চারটিতে জাপা প্রার্থী ছিল। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে নৌকা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায়।
প্রার্থীদের সরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ও দলের অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, তারা বিশদভাবে খতিয়ে দেখবেন, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নেপথ্যে আর্থিক লেনদেন নাকি ভয়ভীতিসহ অন্য কিছু রয়েছে। -সমকাল