Type to search

বিনোদন

শিল্পীদের কালো তালিকা ছিঁড়ে ফেলার দাবি

মানুষের হৃদয় আন্দোলিত করার লক্ষ্যে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলছে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা। বিনোদনের পাশাপাশি যা দর্শক-শ্রোতাকে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিকড়কে চেনানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের সামনে তুলে ধরছে যাপিত জীবনের অর্থ। করে তুলছে মানবিক। জাগিয়ে তুলছে স্বপ্ন রচনার বাসনা।

তাই নাচ, গান, নাটক, সিনেমাসহ সৃষ্টিশীল নানা ধরনের আয়োজনের মধ্যে শিল্পীরা যেমন তাদের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনি সুযোগ পাচ্ছেন বিশ্ববাসীর কাছে আত্মপরিচয় ও নিজস্বয়তা তুলে ধরার। কিন্তু সেই শিল্পী সত্তা যদি শিকল পরিয়ে রাখা হয়, তবে তা হবে শিল্প-সংস্কৃতির মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলার শামিল। এমন মন্তব্যই বিভিন্ন সময় শোনা গেছে সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রথিতযশা শিল্পীদের মুখে। যাদের অনেকেরই দাবি, দেশীয় জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমগুলো নির্দিষ্ট কিছু শিল্পীকে বছরের পর বছর সেখানে পারফর্ম করতে দেয় না। তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছে এক অদৃশ্য কালো তালিকা; যা তৈরি করা হয়েছে মূলত শিল্পীদের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে; যা পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় নীতিমালা বহির্ভূত একটি কাজ। যার সংস্কার অতি জরুরি বলেও অনেকের মত।

নন্দিত কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনের নাম তালিকায় উঠেছিল ১৯৯৬ সালে। সেবার ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০০৮ সালে একই রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে, সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের কোনো আয়োজনে দেখা মেলেনি এই শিল্পীকে। যিনি ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছেন, তিনি নিজ দেশে উপেক্ষিতই থেকে গেছেন।

একইভাবে জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে দেখা মেলেনি আরেক নন্দিত কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপার। শিল্পী আসিফ আকবরেরও ডাক মেলেনি কোনো অনুষ্ঠানে।

শিল্পী মনির খান বলেন, ‘প্রতিভা ঈশ্বর প্রদত্ত, তার ওপর কোনো শাসকের নিষেধাজ্ঞা চলে না। তাহলে রাষ্ট্র, সমাজ থেকে অনেক প্রতিভা হারিয়ে যাবে। আমাদের ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, একাত্তরে কীভাবে সংগীত স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের একেকটি গান হয়ে উঠেছিল সম্মুখ যোদ্ধাদের মেশিনগান। তাই সংগীত থেকে শুরু করে সংস্কৃতির প্রতিটি উপকরণ যেমন শক্তির বাহক, তেমনি একটি জাতির পরিচয় তুলে ধরার অন্যতম মাধ্যম। তাই অতীতের চিন্তাধারা এখনও বদলে না ফেললেই নয়।’ শিল্পী সোহেল মেহেদি বলেন, ‘শেষ কবে বিটিভিতে গান গেয়েছি, তা নিজেরই মনে নেই। একটি মহলের চাওয়া থেকেই দীর্ঘকাল ধরে উপেক্ষিত থেকে গেছি।’

তাঁর মতো আরও বেশ কিছু শিল্পীর মুখে একই অভিযোগ শোনা গেছে। তরুণ শিল্পী মুহিন বলেন, ‘সংস্কৃতিকে শেকলে  বেঁধে রাখা যাবে না’– এটা জানান দিতেই শিল্পকলা একাডেমি, বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারের শিল্পীদের কালো তালিকার খাতা ছিঁড়ে ফেলতে চাই। দল, গোত্র, জাতি, ধর্ম, বর্ণের ভেদাভেদে শিল্পীকে কখনও আলাদা করা যায় না, শিল্পীরা বেঁচে থাকেন তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এই সত্যিটা তুলে আনতে চাই সবার মাঝে।’

-সমকাল

Translate »