করোনা সংক্রমন নিয়ন্ত্রন করতে অস্ট্রেলিয়ার পলিসি

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন
এখানকার সরকার এত বেশি সচেতন যে একজন করোনা সনাক্ত হলে ও বিশেষ গুরুত্ব সহকারে নেন এবং সেটি যেন আর না ছডাতে পারে সেজন্য প্রয়োজনে একজনের জন্য ও এলাকাটিতে লকডাউন দিয়ে থাকে। সংক্রমিত যে কোন ব্যক্তি করোনা সনাক্ত হবার আগে কমপক্ষে একসপ্তাহ যাবত কোথায় গিয়েছিল সেটি ও তদন্ত করে বের করে পাবলিক কে জানিয়ে দিয়ে সতর্ক করে দেন। যদি কোন সুস্থ ব্যক্তি ও সংক্রমিত ব্যক্তি কোন স্থানে একসময়ে পরিদর্শন করেন তবে সুস্থ ব্যক্তিকে কেসুয়াল কেস বলে বিবেচনা করা হয় । করোনা পজিটিভ ব্যক্তির ভিজিটের জায়গা গুলো অন্যান্য পাবলিকের মোবাইল মেসেজে চলে যায় যেটি এ্যাপসের মাধ্যমে করে থাকে সরকারের একটি বিশেষ সংস্থা সার্ভিস অস্ট্রেলিয়া। সংস্থাটি প্রতিটি জরুরি কেনাকাটার দোকান , হাসপাতাল সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে QR কোড দিয়ে বাধ্যতামূলেক ভাবে প্রবেশের দেয়ালে টানাত্ বাধ্য করে। কেউ যখন জরুরি জিনিসপত্র কিনতে যাবেন তার মোবাইল এপসের মাধ্যমে ওই QR কোড স্ক্যান করতে হবে। আপনি যখনই কেনাকাটা শেষে বের হয়ে লগ আউট করবেন তখনই কতক্ষন ওই স্থানে ছিলেন তা অটোমেটিক চলে যাবে service Australia এর কাছে । আর সামাজিক দুরত্ব তো রয়েছেই।
এভাবে কোভিড পজিটিভ ব্যক্তি ও তার গতিবিধি ট্রেস করে তা মোবাইল মেসেজে পাঠিয়ে সতর্ক করা হয় পাবলিককে। যেমন মেসেজে জানিয়ে দেয়া হয় কাউকে Casual contact এর কারনে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে কিনা। যদি আইসেলেশনে থাকতে হয় তবে তার জন্য সরকার থেকে ওই ১৪ দিনের খরচের টাকা দেয়া হয় । এছাড়া ব্যক্তির পরিস্থিতি অনুযায়ী আরো অনেক সহায়তা দেয়া হয় যেমন COVID19 disaster payment , crisis payment সহ অনেক পেমেন্ট ।
২০৩০ সালের ফেব্রুয়ারীত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড১৯ কে মহামারি ঘোষনা করার পর থেকেই এটি নিয়ন্ত্রন করতে অস্ট্রেলিয়া অন্যান্য দেশের সাথে তাদের স্বাভাবিক বিমান চলাচল বন্ধ করে রেখেছে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীর শেষ সপ্তাহ থেকে । সীমান্ত রয়েছে কড়া নিয়ন্ত্রনে যাতে বিশেষ অনুমতি নিয়ে খুবই জরুরি কাজ ছাডা দেশটিতে কেউ ঢুকতে বা বের হতে না পারে। যেকারনে বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় এখানে করোনার বিস্তার কম হয়েছে যা ৩৭ হাজারের ও কম । মারা গেছে আজ পযন্ত মাত্র ৯৪০ জন যাদের অধিকাংশই বয়স্ক । তবে এবছরের জুন থেকে আটকে পড়া ভারতীয় অস্ট্রেলিয়ানদের বিশেষ ব্যবস্থায় গুনে গুনে ফেরানোর ব্যবস্থা করে ফেডারেল সরকার । আটকেপড়া এসব ভারতীয় অসিদের আনার পরে দুসপ্তাহ বিশেষ এলাকাতে কোয়ারেন্টীইনে রাখার পরে ও কমিউনিটতে ডেল্টা সংক্রম ছডিয়ে পড়ে । যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে ।
এখানকার সরকারের মনোভাব ছিল সংক্রমন জিরোতে আনতে হবে। তবে ডেল্টার ঝড়ো গতির কারনে সে সংখ্যা জিরোতে আসার সম্ভাবনা আপাতত কম । তাই সরকারের সিদ্ধান্ত মোট জনসংখ্যার শতকরা আশি ভাগ মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় এলে বিদ্যমান রাজ্যের লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল করা হবে । তখন হয়তো অস্ট্রেলিয়ানরা আগের মতই স্বাভাবিকভাবে দেশের বাইরে যেতে ও ফিরে আসতে পারবেন । ধীরে ধীরে তখন হয়তো আন্তজাতিক শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হবে সীমান্ত ।
যাহোক কোভিড , ডেল্টা এসব নিয়ন্ত্রনে অস্ট্রেলিয়া হিমশিম খাচ্ছে এমন ভাবার কোন কারন নাই । দেখুন মোট সংক্রমন ৩৭ হাজারে ও পৌছেনি এবং মারা গেছে মাত্র ৯৪০ জন যা এক হাজারে ও পৌছেনি। আমি আশাবাদী ডেল্টাধরন খুব শীঘ্র নিয়ন্ত্রনে আনবে অসিরা । আর নিয়ন্ত্রন করতে কিছুটা সময় লাগলে ও ইউরোপ , আমেরিকা বা ভারতের মত লাখ লাখ সংক্রমন ও জীবনহানির ঘটনা ঘটবেনা দেশটিতে । কারন এখানকার সরকার প্রতিটি জনগনের জীবনকে ভীষনভাবে নিরাপদে রাখার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে থাকে ।
( স্বপ্না গুলশান । অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক , এডিটর এবিসিবি নিউজ )