নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে ১২ দফা দাবি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে নিউইয়র্ক থেকে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করেছে প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরাম। গত ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীদের পক্ষে দাবিগুলো উত্থাপন করেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম।
প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল আলম বলেন, প্রিয় জন্মভূমি ত্যাগ আসলে একটা রক্তক্ষরণের মতো বিষয়। প্রবাসীরা সেই তীব্র ব্যথাকে উপেক্ষা করে প্রবাস জীবন-যাপন করার পাশাপাশি নানাভাবে নিজ নিজ পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীরা আজ দেশে-প্রবাসে নানা সমস্যায় জড়িত। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ আবার বিদেশে পাচার হয়ে আসছে। অথচ তার কোন প্রতিকার বা বিচার নেই।
তিনি আরও বলেন, ভূমিদস্যুরা প্রবাসীদের সঙ্গে চরম প্রতারণা করছেন। প্রবাসীদের অর্থ নিয়ে জায়গা-জমি, ভূমি, অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। আত্নীয়-স্বজন ও প্রবাসী ভাই-বোনের সম্পত্তি গ্রাস করে নিচ্ছে। নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায়ে সময় এসেছে প্রবাসীদের সোচ্চার হওয়ার।
এ সময় লিখিত বক্তব্য দেন কুইন্স কমিউনিটি বোর্ডের সদস্য আহসান হাবীব। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ ও ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মূলধারার রাজনীতিক অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, কাজী আজহারুল হক মিলন, কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন, মোহাম্মদ আলী, আমীন মেহেদী বাবু, সৈয়দ রাব্বী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থপিত প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট, ঢাকাস্থ শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানী বন্ধ, প্রবাসীদের ভোটাধিকার, বিদেশের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটাধিকার ও এনআইডি প্রদানের ব্যবস্থা, দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ, বাংলাদেশের অফিস-আদালতে লাল ফিতার দৌরাত্ব বন্ধ, প্রবাসীদের জন্য ঢাকায় চালু করা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ কার্যকর করা, দেশের ভূমিদূস্যদের হাত থেকে প্রবাসীদের রক্ষা।
বিশেষ করে চুক্তি মোতাবেক ক্রয় করা জমি, প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট সহজে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা। এছাড়া জন্মভূমি সফরকালে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা; বাংলাদেশে প্রবাসীদের ঘর-বাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার ব্যবস্থা করা; প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের অর্থে গড়ে ওঠা অর্থনীতির লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার বন্ধসহ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা; কনস্যুলেট সেবা বৃদ্ধি করে প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, দেশের সম্পত্তি হস্তান্তরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদানের মতো কাজগুলো সহজ করা এবং যে কোনো প্রবাসীর মরদেহ বিনা খরচে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীদের স্বার্থে এসব দাবি বাস্তবায়নে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা, কার্যকরী পদক্ষেপ এবং প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ‘প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরাম’র ব্যানারে বিশ্বের সকল প্রবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আর আইনের শাসন কায়েম ছাড়া দেশ ও প্রবাসীদের সমস্যার সমাধান হবে না। প্রবাসীদর দাবি-দাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। প্রবাসীদের সমস্যা নতুন নয়। অনেক আগেও এসব দাবির কথা উঠেছে। কিন্তু কোন সরকারই এসব দাবি বাস্তবায়নে আন্তরিক ছিল না বলেই সমাধান হয়নি। এসব দাবি পূরণে কার্যকর জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশি কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, চিত্তরঞ্জন সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এবিসিবি/এমআই