খরচের বোঝা বাংলাদেশের, চুক্তিতে লাভ আদানিরই
ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ আমদানি শিগগির শুরু হতে যাচ্ছে। যদিও এ বিদ্যুৎ কিনতে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সম্পাদিত ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) নিয়ে দেশ-বিদেশে হচ্ছে নানা সমালোচনা। হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে আদানির বৈশ্বিক বাণিজ্যে ধস নামলেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটির জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য সংশ্নিষ্টদের।
আদানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত পিপিএ এবং সমমানের অন্য দুটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের পিপিএ বিশ্নেষণ করে খাতসংশ্নিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তিতে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাব করা হয়েছে ট্যারিফ ফর্মুলায়। ফলে পিপিএতে ক্যাপাসিটি চার্জ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পিপিএ অনুসারে ক্যাপাসিটি চার্জের পরিবর্তনশীল অংশটি সময়ের সঙ্গে কমবে। প্রথম বছর মাসে প্রতি কিলোওয়াটের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ ধরা হয়েছে ২১.৮৯২৭ ডলার। ২৫তম বছরে তা কমে হবে ১৪.৬২৭০ ডলার। ক্যাপাসিটি চার্জের অপরিবর্তনশীল অংশটি আদানির পিপিএতে প্রতি কিলোওয়াট/মাসে ৩ দশমিক ৬৫ ডলার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পিপিএতে ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে কস্টপ্লাস ফর্মুলায়। এতে ক্যাপাসিটি চার্জ সময়ের সঙ্গে অনেক কমে আসবে।
পাওয়ার সেলের সাম্প্রতিক এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির থেকে আনা বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জ বেশি পড়ছে। চীন-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ইউনিটপ্রতি দুই টাকা ৮৩ পয়সা। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের কেন্দ্রের বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের ক্যাপাসিটি চার্জ ৪ টাকা ৭১ পয়সা। বরগুনার বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ইউনিটপ্রতি ধরা হয়েছে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা। অথচ আদানির ঝাড়খণ্ডের কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ প্রতি ইউনিটে চার টাকা ৫৫ পয়সা।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক আদানি ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ না কিনলেও আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে ৪৭৩.১৬ মিলিয়ন ডলার। ২৫ বছরে এ চার্জ পরিশোধে বাংলাদেশের খরচ হবে প্রায় ১১.৮৩ বিলিয়ন ডলার।
চুক্তি নিয়ে কথা বলতে আদানির ঢাকা অফিসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান দাবি করেন, আদানির বিদ্যুৎ অন্য কেন্দ্রগুলোর মতোই হবে। এতে বাংলাদেশের লোকসান হবে না বরং উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিং থেকে পরিত্রাণ মিলবে।
এবিসিবি/এমআই