Type to search

অপরাধ অর্থ ও বাণিজ্য

এমএলএম কোম্পানির ফাঁদে ফেলে শত কোটি টাকার প্রতারণা

এমএলএম কোম্পানির নামে দশ হাজার সদস্যকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন রাগীব আহসান (৪১)। শরিয়া ভিত্তিতে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে তিনি প্রায় ১১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এসব টাকা দিয়ে নিজসহ আত্মীয় স্বজনের নামে জমি-জমা কেনেন রাগীব।

সদস্য সংগ্রহে রাগীব আহসান মাঠ পর্যায়ে ৩০০ জন কর্মী ছিল। ২০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেওয়ার নামে তাদের নিয়োগ দিলেও তা মেটাতেও ব্যর্থ হন তিনি। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকটি জেলায় সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ মামলাও হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব রাজধানীর তোপখানা রোড এলাকা থেকে রাগীব আহসান ও তার ভাই মো. আবুল বাশারকে (৩৭) আটক করে। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার বিকালে পিরোজপুর সদর থানা পুলিশ শহরতলীর খলিশাখালী গ্রামের বাড়ি থেকে এহসানের অপর ২ ভাই মাহমুদুল হাসান ও খায়রুল ইসলামকে আটক করে।

শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে র‌্যাব-১০ ও সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা মিলে ২ জনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে রাগীব তার প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দেন।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, রাগীব আহসান ১৯৮৬ সালে পিরোজপুরের একটি মাদরাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে হাটহাজারীর একটি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস ও খুলনার একটি মাদরাসা থেকে মুফতি সম্পন্ন করেন তিনি।

খন্দকার আল মঈন জানান, পড়াশোনা শেষে পিরোজপুরে একটি মাদরাসায় কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৬-২০০৭ সালে ইমামতির পাশাপাশি ‘এহসান এস মাল্টিপারপাস’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনের শুরু করেন চাকরি। মূলত এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে রাগীব এমএলএম কোম্পানির আদ্যপ্রান্ত রপ্ত করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ‘এহসান রিয়েল এস্টেট’ নামে নিজে একটি এমএলএম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, মূলত ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে অপব্যবহার করে তিনি এমএলএম কোম্পানির ফাঁদ তৈরি করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ, ইমাম শ্রেণি, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ ও অন্যান্যদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেন। শরিয়ত সম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগের বিষয়টি ব্যাপক প্রচারণা করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন তিনি। এছাড়াও ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের নামে তিনি ব্যবসায়িক প্রচার প্রচারণা করতেন। রাগীব লাখ টাকার বিনিয়োগে মাসিক মাত্রাতিরিক্ত টাকা প্রাপ্তির প্রলোভন দেখায়। আত্মীয়দের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠানটিপরিচালনা করতেন। বাবা উপদেষ্টা, শ্বশুর প্রতিষ্ঠানের সহসভাপতি ও ভগ্নিপতি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। এছাড়া রাগীব আহসানের ৩ ভাইয়ের মধ্যে আটক আবুল বাশার প্রতিষ্ঠানের সহ-পরিচালক, বাকী ২ ভাই প্রতিষ্ঠানের সদস্য।

তিনি কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং এই টাকা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে বা বিভিন্ন ইস্যুতে উসকানির কাজে ব্যবহৃত হতো কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন জানান, বিভিন্ন ভুক্তভোগীর তথ্য, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে আনুমানিক ১৭ হাজার কোটি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তিনি ১১০ কোটি টাকা কথা স্বীকার করেন। আর আত্মসাৎকৃত টাকা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হয়েছে কি-না বা উসকানির কাজে ব্যবহৃত হতো কি-না সেটি গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখবেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু টাকার বিষয়টি জড়িত তাই এ বিষয়ে সিআইডি ও দুদক ব্যবস্থা নেবে।

এবিসিবি/এমআই

Translate »