বুড়িমারীতে পিটিয়ে হত্যার পর লাশে আগুন : ৩ মামলায় শতাধিক আসামি, গ্রেফতার ৫
রংপুরের সন্তান শহিদুন্নবী জুয়েলকে লালমনিরহাটে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। সেসব মামলায় নামে-বেনামে শত শত মানুষকে আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এদিকে জুয়েলেকে হত্যার ঘটনায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে রংপুর জেলা স্কুলের সাবেক ছাত্রনেতারা।
জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা ও লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় অন্য কারও হাত থাকতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাশ ভট্টাচার্য্য। আর পুরো ঘটনাটি সুরাহা করে দোষীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা। শনিবার পাটগ্রাম শহীদ আফজাল হোসেন হলরুমে আলেম সমাজের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তারা উপরিউক্ত কথাগুলো বলেন।
পুলিশের ডিআইজি বলেন, এ ঘটনায় ৩টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতারের বিষয়টি পরে জানানো হবে। ছোট একটি ঘটনাকে রঙ দিয়ে পেছন থেকে কেউ সুযোগ নিতে পারে। তাই পুরো ঘটনাটি একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে। একটু অপেক্ষা করুন, প্রকৃত রহস্য বের হবে।এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদের শহীদ আফজাল হলরুমে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওহাব ভূঞা, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাশ ভট্টাচার্য্য, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর, পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা, পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল, ইউএনও কামরুন নাহার, ওসি সুমন কুমার মোহন্ত উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ওই উপজেলার ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ৫ শতাধিক আলেম উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ওই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে মৃতদেহ আগুনে পোড়ানোর ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর। অন্যদিকে জুয়েলের গায়েবানা জানাজা শনিবার দুপুরে তার প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রংপুর জেলা স্কুল মাঠে সম্পন্ন হয়েছে।
এ সময় বলা হয়, জুয়েল ছিলেন ধর্মভীরু ও সহজ সরল। সারা জীবন তিনি মানুষের সেবা করে গেছেন। কিন্তু তাকে এমনভাবে হত্যা করা হলো যে, তার দুই সন্তান পিতার মৃতদেহটাও পর্যন্ত দেখতে পেল না। জানাজা শেষে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এর আগে রংপুর জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে স্কুলের সামনের প্রধান সড়কের পাশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে রংপুরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম গুজব ছড়িয়ে একজন ধর্মপ্রাণ মানুষকে হত্যা করা হলো। ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক। মানববন্ধনে রফিক সরকার, আরিফুল হক রুজু, শাফিয়ার রহমান, তুষার কান্তি মণ্ডল, ডা. মফিজুল ইসলাম, ড. তুহিন ওয়াদুদ, আব্দুল কুদ্দুস, এএসএম সায়েম সাকলায়েন, মিরাজুল ইসলাম, সেরাফুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মাহমুদুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, সুব্রত সরকার, মাহবুবু রহমান, শাহনাজ রহমান, এটিএম গোলাম মোস্তফা, গোলাম রব্বানী, আঞ্জুম, টিউলিপ, জুয়েল, রাসেল, রেজা, সুব্রত, অ্যাপোলোসহ রংপুর জেলা স্কুলের বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্ররা অংশ নেয়।
প্রসঙ্গত, লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআন শরিফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে বৃহস্পতিবার জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা। নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুর জেলা স্কুলের সাবেক ছাত্র। কয়েক বছর আগে চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক সঙ্কটে পড়েন জুয়েল। তিনি নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতেন। জুয়েলের সঙ্গে থাকা জুবায়ের সুমন এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে এখনও চিকিৎসাধীন।