Type to search

সারাদেশ

গাজীপুরে গ‍্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ১১, আহত ১৭

জেলা প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সিলিন্ডারের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাসে আগুন লেগে দগ্ধদের মধ্যে একে একে ১১ জনের প্রাণ নিভে গেল। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। গতকাল তৌহিদ (৭) নামে এক শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়। নিহত ১১ জনের মধ্যে ২ জন শিশু। বাকি নয় জন পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি। কেউ ভাঙ্গারির কাজ করতো, কেউ গার্মেন্ট শ্রমিক, কেউ দিন এনে দিন খাওয়া নিরীহ-অসহায় মানুষ। অগ্নিকাণ্ড দেখতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আরও ১৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

গত ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় ইফতারের আগে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক তেলিরচালা এলাকায় ওই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিগদ্ধ হয়ে মোট ৩২ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এই ৩২ জনের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউয়ের সামনে বসে থাকেন। কারো ছেলে, কারো স্বামী, কারো বাবা-মা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আইসিইউয়ের ভেতর থেকে ডাক্তার কিংবা নার্স বের হলেই তারা মনে করতো এই বুঝি মৃত্যুর খবর এলো। অর্থাৎ সারাক্ষণ স্বজনের মৃত্যুর খবরের আতঙ্কে থাকেন তারা। ১১ জনের মৃত্যুর খবর পরিবারগুলো এভাবেই পেয়েছেন। কর্মক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নয়টি পরিবারের সদস্যরা। এসব পরিবারকে দেখার আর কেউ রইলো না। বাধ্য হয়ে শিশু সন্তানদের পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাবার পেশায় যেতে হবে পেটের তাগিদে। গতকাল সোমবার ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি  শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সরেজমিনে আইসিইউয়ের সামনে অপেক্ষমাণ স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করেন। তারা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেল। তাদের আহাজারিতে আইসিইউয়ের সামনে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। তাদের সান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই কারও। উপস্থিত অন্যান্য রোগীর স্বজনরাও তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

এদিকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ডাক্তার-নার্সরা অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন। চিকিৎসার ব্যাপারে কোন ঘাটতি নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন তাদের চিকিৎসা সেবা নিজে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। হাসপাতালে অপেক্ষমাণ রোগীদের স্বজনরা জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসার সার্বিক খোঁজ-খবর নেন, প্রতিদিন আমাদেরও খোঁজ-খবর নেন তিনি। সত্যিই উনি ভালো মানুষ। ডাক্তার-নার্সদের আন্তরিকতায় কোন ত্রুটি নেই। এই হাসপাতাল না থাকলে আমরা কোথায় যেতাম জানি না। কর্মরত চিকিৎসকরা বলেন, পোড়া রোগীদের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। তবে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

রোগীর স্বজনরা বলেন, এই হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পেয়ে প্রতিদিন আমাদের মতো  গরীব কত রোগীর জীবন বেঁচে যাচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা, খাওয়া-দাওয়া পরিবেশ- সবই উন্নতমানের।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, যে বাসায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে গ্যাস বের হতে থাকা গরম সিলিন্ডার ভেজা চট দিয়ে মুড়িয়ে বাইরে রেখে যান পরিবারের কেউ একজন। স্থানীয়দের অনেকে কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন কী হচ্ছে সেটা দেখতে। সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বেরিয়ে যে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে, তা বুঝতে পারেনি কেউ। সে সময় পাশের আরেকটি বাসায় চুলা ধরাতে গেলে পুরো রাস্তায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাতেই দগ্ধ হয় সবাই। ওই ঘটনার পর মারাত্মকভাবে দগ্ধ ৩২ জনকে রাতেই ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে শনিবার তৈয়বা নামে ৪ বছরের এক শিশু এবং মুনসুর আলী আকন্দ নামের ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সোলেমান মোল্লা নামে ৪৫ বছর বয়সী আরেকজন। এরপর রবিবার ভোরে আরিফুল ইসলাম নামের ৩৮ বছর বয়সী একজন এবং সকাল পৌনে ৭টায় ২৫ বছর বয়সী মহিদুল খানের মৃত্যু হয়। রবিবার সন্ধ্যায় মারা যান মাহিদুলের স্ত্রী নার্গিস আক্তার (২২)।

এবিসিবি/এমআই

Translate »