ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা : আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বলে পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানো। তারা চেয়েছিল দেশের স্বাধীনতা অর্জন ব্যর্থ হোক, স্বাধীনতার আদর্শ ধ্বংস হয়ে যাক।
কিন্তু আমি সেটা করতে দেব না। বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেওয়া হবে না। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তারা ইতিহাস বিকৃত করেছিল। আমার দেখা নয়াচীন, কারাগারের রোজনামচা, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ১৪ খণ্ডে এসবির গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকেই সত্যিকারের তথ্য বের হয়ে আসছে।
চন্দ্রিমা উদ্যানের কবরে জিয়ার লাশ নেই
রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সম্প্রতি সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সেখানে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই। সেটা বিএনপির নেতাকর্মীরা জানার পরও কেন তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারা এই নাটক কেন করে? খালেদা জিয়া তো ভালো করেই জানেন।’ খালেদা জিয়া অথবা তারেক জিয়া, জিয়াউর রহমানের লাশ দেখেছিলেন কি না প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুলেটে জর্জরিত লাশও সহজেই শনাক্ত করা যেত। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে যে বাক্সের মধ্যে লাশ আনা হয়েছিল তার মধ্যে কেউ জিয়ার লাশ দেখতে পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সে সময় এইচএম এরশাদের কাছে শুনেছেন, বাক্সের লাশটি সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিল। কিন্তু জিয়া সে সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আর রাষ্ট্রপতি কখনো সামরিক পোশাকে থাকেন না। তিনি জানতে চান, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা কি জানেন না যে, রাষ্ট্রপতি সামরিক পোশাক পরিধান করেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মনে করেছিল, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে কিছু স্থানীয় সহযোগীদের সহায়তায় হত্যা করতে পারলেই দেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ হয়ে যাবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান দেশের কোথাও কখনো সরাসরি যুদ্ধ করেননি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে জিয়া খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার উৎস ছিলেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান জেলের ভেতর জাতীয় চার নেতা হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। তিনিই সীমিত সম্পদ দিয়ে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এনেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশটিকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে চেয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন ভুল ছিল। সেজন্যই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পরপরই ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে প্রমাণ করতে তারা ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতিবন্ধী নারী বাসন্তীকে মাছ ধরার জাল পরিয়ে বিশ্বব্যাপী সেই ছবি প্রচার করেছিল। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সেই সময় মাছ ধরার একটি জালের দাম ছিল ১৫০ টাকা। আর একটি শাড়ির দাম ছিল ৬ থেকে ৭ টাকা। তিনি বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার জন্য যারা সপ্তম নৌবহর পাঠাতে চেয়েছিল, তারাই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ব্যর্থ প্রমাণ করতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার দেশের মানুষের জন্যই কিছুই করেনি। তারা তিন জনই, বিশেষ করে জিয়া দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি করেছিলেন। দেশকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসাবে মেধাবীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, জিয়াউর রহমান তার শাসনামলে রাতে কারফিউ জারি থাকা সত্ত্বেও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিলেন। তিনিই দেশে ভোট জালিয়াতি শুরু করেছিলেন এবং বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার অপশাসনের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার দেশকে যে জায়গায় এনেছিলেন, সেখান থেকে খারাপ অবস্থার দিকে চলে গিয়েছিল।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল আমিন রুহুল, উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাদের খান, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামাল ও উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান মতি, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন ও উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা।
সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সব শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
টিএস