মুসলমানরাই হলো ভারতের নির্মাতা: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ পাশের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
শনিবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, এই বিলটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অধিকার, ঐতিহাসিক আমানত এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার বিরুদ্ধে এক ন্যক্কারজনক হস্তক্ষেপ।
নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন, অমুসলিমদের (মূলত হিন্দুদের) সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, কোন সম্পত্তি ওয়াকফ বলে বিবেচিত হবে কোনটা হবে না সরকারকে- তা নির্ধারণের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ ওয়াকফকৃত সম্পদ পরিচালনা ও ভোগের একমাত্র হকদার মুসলমানরা।এই বিলের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ওয়াকফ আইনকে দুর্বল করে দেওয়া এবং ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও দখল করার আইনি পথ তৈরি করা।
তারা বলেন, মুসলমানরাই হলো ভারতের নির্মাতা। এই ভারত যা কিছু নিয়ে গর্ব করে তার প্রায় সবগুলোই মুসলিম শাসকদের অবদান।
৩০ কোটির বেশি মুসলিমের এই ভারতে বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। প্রায় ৯ লাখ স্থাপনা রয়েছে, যাতে জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ একর। এসব সম্পদের দাম প্রায় দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
শহর ও নগর এলাকায় ওয়াকফ বোর্ড হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বেশি জমির মালিক প্রতিষ্ঠান। আর সব মিলিয়ে হিসাব করলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও রেলওয়ের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ ভূমির মালিক হচ্ছে মুসলমানদের এই প্রতিষ্ঠান।
হিন্দুত্ববাদী উগ্র বিজিপি এই সম্পত্তির প্রতি আজন্ম লোভ লালন করে আসছে।এরা ইতোমধ্যে ভারতের একাধিক স্থানে মন্দিরসহ বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণের জন্য ওয়াকফকৃত মুসলিম সম্পত্তি জবরদখল ও অবৈধ অধিগ্রহণ করেছে।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি কেবল জমি আর স্থাপনা নয়— এটি মুসলিম সমাজের ধর্মীয় বিশ্বাস, ইতিহাস এবং জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের ভিত্তি। এই সম্পদ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা ও গরিব-দুখীদের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পাশকৃত সংশোধনী এই সম্পদের ব্যবস্থাপনায় হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় সরকারকে আইনি ক্ষমতা প্রদান করে, যা সংবিধানের সংখ্যালঘু অধিকার ও তথাকথিত ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থিও বটে।
তারা আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলছি- মুসলিমবিদ্বেষী বিজিপি কর্তৃক ওয়াকফ বোর্ডের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। ধর্মীয় সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরেকটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, এই বিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অবিচার এবং সামাজিক ঐক্যের পরিপন্থি।
ভারত সরকারকে অবিলম্বে ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিল করতে হবে।ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বায়ত্তশাসন ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। মুসলমানদের মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত আরোপ করা চলবে না।
ভারত সরকারের অব্যাহত মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি নেতারা বলেন, ইসলামবিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে যেকোনো সময় বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে নির্যাতিত ভারতীয় মুসলমানদের পাশে দাড়ানো উচিত। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফোরামে ভারতীয় মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিবর্তনমূলক আইনের ব্যাপারে সরব প্রতিবাদ জানানো দরকার।
বিবৃতিতে তারা বিশ্বের সব ইসলামী শক্তি, মানবাধিকার সংস্থা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সচেতন নাগরিকদের এই বিলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
-যুগান্তর