অশুল্ক বাধা দূর করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ

বাংলাদেশের স্বার্থ বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ পরিকল্পনা করছে সরকার। সেই সঙ্গে শুল্কের বাইরে বিভিন্ন অশুল্ক বাধা অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। গতকাল রবিবার সচিবালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পালটা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে এই পর্যালোচনা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমে আমরা ইউএসএ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার ঘটাব। এজন্য আমেরিকা থেকে আমাদের দরকারি কোনো কিছু ইমপোর্ট করতে হয়, আমরা এলএনজি এবং জিনিস ইমপোর্ট করব। যাতে করে এর মাধ্যমে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরেকটু দৃঢ় হয়। এদিকে অর্থ উপদেষ্টা সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত নতুন শুল্কারোপে অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে, তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে না। সরকার শুল্কের বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আশাবাদী এর থেকে ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে।
বিকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমেরিকা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তাতে করে অন্যান্য বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তি চীন, ইউরোপ তারাও এর বিপক্ষে কতগুলো পদক্ষেপ নেবে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা পুরো জানি না। পুরো বিশ্বের অর্থনীতি কোথায় যাবে, বড় ধরনের নাড়াচাড়া খাবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আস্তে আস্তে সব কিছুই মাথায় রাখছি। আপাতত আমরা আমাদের প্রধান যে রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় বাজার সেটা রক্ষা পায়, আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা যাতে আরো বাড়ানো যায়, যাতে আমরা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে টিকে থাকতে পারি। আমরা মনে করি সেটা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, যে করটা বাড়ানো হলো এটা যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে তাদের ব্যক্তিদের ওপর পড়বে। আমাদের ওপর কতটুকু পড়বে তার একটা বোঝাপড়া হতে হবে। আমরা এটুকু জানি, শ্রমিকের মজুরির দিক থেকে আমরা একেবারে সর্বনিম্ন জায়গায় আছি, এর থেকে আর কমানো যাবে না। কাজেই করের বাড়তি বোঝা অন্য জায়গাতেই শিফট হবে। আমাদের ওপর আর বেশি বোঝা চাপানো যাবে না এটা সবাই বুঝবেন। তিনি আরো বলেন, আমরা উত্পাদনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমাদের অনেক তৈরি পোশাকশিল্প আছে যেটা বিশ্বমানের উত্পাদনশীলতায় সক্ষম এবং সেখানে আমরা অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব বলে আমরা মনে করি। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, আমাদের নন ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা যেগুলো রয়েছে, যেগুলো আমাদের বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক আমরা সেগুলোকে রোহিত করার বা পুনর্মূল্যায়ন করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের স্বার্থ বজায় রেখেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের আমদানি বেশ বাড়ানো সম্ভব। আমরা তার উপায়গুলো খুঁজছি। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব যাতে করে এই বিষয়টি অতিসত্বর আমরা নিষ্পত্তি করতে পারি।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুেফ সিদ্দিকী, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক, ফারুক হাসান, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের এমডি তপন চৌধুরী, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেমসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বৈঠক শেষে তপন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আসলে যতটা চিন্তিত ছিলাম আজকের আলোচনা থেকে সেটার একটা পথনির্দেশনা পেয়েছি। সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, দেশের স্বার্থ আগে, সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থটা মাথায় রেখে সুযোগগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাকের বাইরে আরো কিছু নতুন নতুন পণ্য রয়েছে। সেটার সবচেয়ে বড় বাজার হতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই বাজারকে ইগনোর করা যায় না, করতে চাইও না এবং আমরা করবও না। রুবানা হক বলেন, আমি এক লাইনেই শেষ করছি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করবেন, এ রকম একটি চিঠি এখান থেকে যাবে সেটার প্রতীক্ষায় থাকলাম।
-ইত্তেফাক