শ্যালিকার ব্যাংক হিসাবে ১৪৮ কোটি টাকা লেনদেন, এমপি পাপুল দম্পতিসহ ৪জনের বিরুদ্ধে মামলা

অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতে বন্দি লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা, মেয়েসহ ৪জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা পাচারের প্রমাণ মিলেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আজকালের মধ্যে মামলা করা হবে। এ ছাড়া পাপুলসহ ৭/৮জনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুদক সূত্রে এ সংবাদ জানা গেছে।
দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, এনআরবি কমার্শিয়ালসহ ৩টি ব্যাংকে পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের নামের ৫টি হিসাবে জমা হয় মোট ১৪৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও অনেকের ব্যাংক হিসাব থেকে ৫টি হিসাবে ওই পরিমাণ টাকা জমা করা হয়। পরে তা থেকে এরই মধ্যে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয় ১৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা।
দুদক সূত্র জানায়, এমপি পাপুল, তার স্ত্রী ও তাদের মেয়ের ব্যাংক হিসাব থেকেও জেসমিন প্রধানের হিসাবগুলোতে টাকা জমা হয়েছে। পাপুলের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ নিজের, স্ত্রী ও মেয়ের হিসাবে জমা করা হয়েছিল। পরে ওই অর্থ শ্যালিকার ব্যাংক হিসাবগুলোতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর শ্যালিকার ব্যাংক হিসাব থেকে তা উত্তোলন করে বিদেশে হুন্ডি বা অন্য কোনো মাধ্যমে পাচার করা হয়। বিদেশে অর্থ পাচারে এমপি পাপুল কয়েকটি ধাপে স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার হিসাব ব্যবহার করেছেন।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, এনআরবি কমার্শিয়াল ও সিটি ব্যাংকে জেসমিন প্রধানের ৫টি হিসাব থেকে ওই পরিমাণ টাকা পাচার বা আত্মসাতের পর এখন স্থিতির পরিমাণ যৎসামান্য।
দুদকের মামলায় আসামি করা হচ্ছে পাপুল, তার স্ত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কাজী সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামকে। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ দুদকের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন অনুসন্ধান করেছেন। পুরো অনুসন্ধান কার্যক্রম দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন তদারক করেছেন। এরই মধ্যে কমিশন মামলাটির অনুমোদন দিয়েছে। উপপরিচালক সালাহউদ্দিন অভিযুক্তদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটিও অনুসন্ধান করছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে জেসমিন প্রধানের নামে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার একটি এফডিআরের সন্ধান পাওয়া গেছে। জানা গেছে, জেসমিন ইসলাম তথ্য গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। তাই তার বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪-এর ২৭(১) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
জানা গেছে, এমটি পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে জমা করেন। ওইসব এফডিআরের বিপরীতে জেসমিন প্রধান গ্রহণ করেন ২৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ঋণ সুবিধা। বিভিন্ন ব্যাংকে জেসমিনের নিজ নামে ও তার স্বার্থসংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে করা ব্যাংক হিসাবে ২০১২ সালের জুন থেকে চলতি বছরের ৭ জুন পর্যন্ত মোট ১৪৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা জমা হয়। পরে এসব হিসাব থেকে ১৪৮ কোটি ২১ লাখ টাকা পাচার বা আত্মসাৎ করা হয়।
তার বিরুদ্ধে দুদকে পেশ করা অভিযোগে বলা হয়, কুয়েতে মানব পাচার করে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন পাপুল। হুন্ডির মাধ্যমে ওই অর্থ দেশে আনা ও বিভিন্ন দেশে পাচারের তথ্য অভিযোগেউল্লেখ করা হয়েছে। হুন্ডি ও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে ২০১৬ সালে বিদেশ থেকে ২৮০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।