Type to search

অপরাধ

বহুল আলোচিত রিজেন্ট সাহেদের পাসপোর্টে জাল এনআইডি

রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ করিম ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে পাসপোর্ট বাগিয়ে নিয়েছেন। ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি নিয়েছেন করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)।

কয়েক বছর পর আবার আসল জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আরেকটি টিআইএন নেন রিজেন্ট সাহেদ। কিন্তু করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও তিনি রিটার্ন জমা দেননি, যা গুরুতর অনিয়ম আয়কর আইনে। অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মো: সাহেদের পাসপোর্ট (BA0217443) ইস্যু করা হয়। যার মেয়াদ ১১ জানুয়ারি ২০১৯ সালে শেষ হয়। পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে ২৬৯২৬১৮১৪৫৮৮৫ নম্বরটি ব্যবহার করেন তিনি।

কিন্তু নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা এ নম্বরের কোনো ভোটার খুঁজে পাননি। তারা, সাহেদ জাতীয় পরিচয়পত্রের যে নম্বরটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা ভুয়া। নম্বরটি জালিয়াতির মাধ্যমে বানানো হয়েছে।

তবে তারা বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সাথে পাসপোর্ট অধিদফতরের চুক্তি রয়েছে। পাসপোর্ট করার সময় নিয়ম রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর যাচাইয়ের। মো. সাহেদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর যাচাই করা হলে জালিয়াতি করা সম্ভব হতো না।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, সাহেদের এনআইডি নম্বর জাল হওয়ায় সচেতনভাবেই হয়তো পাসপোর্ট ব্যবহার করে টিআইএন নিয়েছেন তিনি। যদি এনআইডি নম্বর সঠিক হতো তাহলে সেই নম্বর ব্যবহার করেই আরও সহজে টিআইএন নিতে পারতেন তিনি।

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যমতে, সাহেদ করিমের পাসপোর্টে জরুরি যোগাযোগের ব্যক্তি হিসেবে তার ‘ভাই’ মোহাম্মদ খলিলুর রহমানের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিকানা দেয়া হয়েছে: বাসা-৩৮, রোড-১৭, সেক্টর-১১, উত্তরা, ঢাকা। মোবাইল নম্বর ০১৯১৩****০৮। এ নম্বরে কল দেয়া হলে খলিলুরের স্ত্রী ফোন রিসিভ করেন। পরে তার কাছ থেকে নম্বর (০১৭১১****৫২) নিয়ে খলিলুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি সাহেদ করিমের ভাই নই।

মো. সাহেদের কোনো ভাইবোন নেই। একটি পালিত বোন রয়েছে শুধু। আমি তার অফিসে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতাম।’ পাসপোর্টে কেন নাম ব্যবহার করা হল-জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আপনার কাছেই শুনলাম তার পাসপোর্টে ব্যবহার করা হয়েছে আমার নাম । এ বিষয়ে কিছুই জানি না আমি।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনিবাসী হিসেবে পাসপোর্ট দিয়ে প্রথম টিআইএন নেন মো. সাহেদ। নম্বর : ১৩১৪৪১৮৯৯৬৯৫। এর অধিক্ষেত্র হচ্ছে, কর অঞ্চল-৯, সার্কেল-১৮৫।  এ টিআইএন নেয়া হয় ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল। এর ৪ বছর পর ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর আসল এনআইডি (১৯৭৮২৬৯৯৫০১৯৪৩৯৯১) দিয়ে আবারও টিআইএন নেন রিজেন্ট সাহেদ। নম্বর : ৩৮৮৭৯১২৯০৪০৬। অধিক্ষেত্র হচ্ছে : কর অঞ্চল-৯, সার্কেল-১৯০। সাহেদ করিম দুটি টিআইএন নিলেও তিনি নিয়মমাফিক কর পরিশোধ করতেন না। এমনকি রিটার্ন জমার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি তার।

পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবু আসাদ সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) বলেন, আগে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারের সাথে পাসপোর্ট অধিদফতরের কানেকটিভিটি ছিল। কিন্তু এনআইডিতে নানা ধরনের সংশোধনীর ফলে কম্পিউটারে যাচাই করে পাসপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে দেখা দেয় নানা জটিলতা। এ কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের বিষয়টি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তবে ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই ব্যবস্থা পুনরায় কার্যকর করা হবে।

Translate »