Type to search

অপরাধ বাংলাদেশ

স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট ওসমানী, ধরাছোঁয়ার বাইরে সিন্ডিকেট

সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ফের আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। দুবাই থেকে প্রায়ই আসছে স্বর্ণের চালান। সংশ্লিষ্টদের ধারণা; ধরা পড়ছে খুব কমই। বেশির ভাগ চালানই গ্রিন চ্যানেলে নিরাপদে বেরিয়ে যায়। এতে জড়িত থাকতে পারেন ওসমানীর কর্মকর্তারাও। তবে; এই বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল নিরাপদেই পাড়ি দেয় দুবাই থেকে আসা সাড়ে ১৭ কেজি ওজনের স্বর্ণের চালান। বেরিয়ে যাওয়ার মূহূর্তে বিমানবন্দরের প্রধান ফটকের কাছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এই চালান আটক করেন। এরপর থেকে ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। আর এই তোলপাড়ের কারণ হচ্ছে; কীভাবে কাস্টমস এলাকা ফাঁকি দিলো এতো বড় স্বর্ণের চালান। বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয় বিমানবন্দরের ঊর্ধ্বতনদের মধ্যে। তবে এই চালান আটকের পর সবার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এর আগে অবশ্য নীরবই ছিলেন তারা। তবে স্বর্ণের চালান আটক পরবর্তীতে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কাস্টমস কমিশনরা তাহনিমুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, চোরাকারবারিরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

রেপিং সিস্টেম উন্নত থাকার কারণে স্বর্ণের চালান ধরা পড়েনি। তবে কাস্টমস কমিশনারের এই যুক্তিকে অনেকেই সঠিক মনে করছেন না। এর আগেও একই সিস্টেমে আসা স্বর্ণের চালান বিমানবন্দরে নিয়োজিত কাস্টমস কর্মকর্তারা আটক করেছিলেন। এ কারণে প্রশ্ন উঠেছে- এবার কেন পারলেন না। একইসঙ্গে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাফিজ উদ্দিন জানিয়েছেন- বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ঠিকই আছে। এ কারণে স্বর্ণের চালান আটক হচ্ছে। যারাই এ রুটে চোরাচালান করতে চায় তাদের ধরতে বিমানবন্দরের সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। এদিকে- সাড়ে ১৭ কেজি স্বর্ণের চালানের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া  বড়লেখার সৈয়দ আহমদ ও জৈন্তাপুরের আপ্তাব উদ্দিন স্বর্ণের বহনকারী বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারা জানান- ওই দুই ব্যক্তি নিজেদের প্রবাসী পরিচয় দিয়ে এ রুটে স্বর্ণ চোরাকারবারি করে আসছিল। বৃহস্পতিবার তারা দুবাই থেকে নিয়ে আসা স্বর্ণের চালানসহ ওসমানীতে ধরা পড়ে। ধরা পড়ার পর তারা নানা তথ্য দিয়ে গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করে। বিকালে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ওই দুই স্বর্ণ বহনকারীকে চালানসহ এয়ারপোর্ট পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এয়ারপোর্ট থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান জানিয়েছেন- থানায় রেখে আপ্তাব ও আহমদকে গতকাল শুক্রবার ভোররাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে তারা স্বর্ণের চালানের মালিক হিসেবে দুবাই বসবাসকারী এক পাকিস্তানির কথা বলেছে। বিষয়টি সঠিক কিনা তদন্ত করা হচ্ছে।

তিনি জানান- সিলেটের স্বর্ণ সিন্ডিকেটদের খুঁজে বের করতে গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ড চাওয়া হবে। তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মূল তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে, সাড়ে ১৭ কেজি স্বর্ণের চালান আটকের পর সিলেটের স্বর্ণ চোরাকারবারিরা  ফের আলোচনায় এসেছে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কয়েকজন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বিগত সরকারের আমল থেকেই সিলেটে একটি স্বর্ণ চোরাচালানি চক্র জড়িত। ওদের সঙ্গে ওসমানী আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের  ভেতরের একটি সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে নানাভাবে গোয়েন্দা তদন্ত ও নজরদারি চলছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে; ওই সিন্ডিকেটের বেশির ভাগ সদস্য বর্তমানে দুবাইয়ের ডেরা দুবাই অবস্থান করছেন। সিলেটের আম্বরখানার সোনালী ব্যাংকের নিকটবর্তী স্থানে ওই সিন্ডিকেটের সিলেটের সহযোগীর অবস্থান রয়েছে। তার বাসা স্বাপ্লাই এলাকা।

আর দুবাইয়ে থাকা ওই সিন্ডিকেট প্রধান হচ্ছে জালাল আহমদ। তার বাড়ি গোয়াইনঘাটের সোনাবাংলা এলাকার বীরকুলি গ্রামে। সে গত ১৫ বছর ধরে ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ পাচার করছে। তারই আরেক সহযোগী  গোয়াইনঘাটের রাজা মিয়ার মাধ্যমে এসব স্বর্ণের চালান ভারতে পাচার করে দিচ্ছে। প্রায় ১০ জনের একটি সিন্ডিকেট ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত। ওই সিন্ডিকেটের সদস্য জহুর উদ্দিন টাকা পাচারের সময় ২০১৭ সালে দেড় কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ ওসমানীতে আটক হয়েছিল। ২০১৮ সালে ২২টি স্বর্ণের বার সহ গ্রেপ্তার হয়েছিল গোয়াইনঘাটের ডৌবাড়ি এলাকার আব্দুল মুমিন। প্রায় ৪ মাস আগে ১২০টি স্বর্ণের বারসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল শানুর নামের এক ব্যক্তি।  গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় তাদের চক্রের নাম প্রকাশ করলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপের মুখে প্রশাসনের কর্মকর্তারা নীরব থেকেছেন। ফলে কোনো বাধা ছাড়াই ওসমানী দিয়ে স্বর্ণের চালান পাচার করা সম্ভব হয়েছে। আর যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের মধ্য থেকে কেউ এক বছর, কেউবা দুই বছর পর্যন্ত কারাবরণ করে জামিন পেয়েছেন। এরপর থেকে মামলায় তারা আদালতে এসে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আটক হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন- গ্রেপ্তার হলে কিছু দিন তাদের খবর নেওয়া হয়। এরপর চোরাকারবারিরা পেছন থেকে সরে যায়। মামলার গ্লানি তাদেরকেই টানতে হয়।

– মানবজমিন

Translate »