বাংলাদেশে স্টারলিংকের আগমন হতে পারে এক নতুন যুগের সম্ভাবনা

বিশ্ব এখন এক অভূতপূর্ব প্রযুক্তিগত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে, যেখানে উচ্চগতির, স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ শুধু একটি বিলাসিতা নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এ যুগে, উন্নয়নশীল দেশগুলো ডিজিটাল রূপান্তরের মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ এখন এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে চলেছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স (SpaceX) পরিচালিত স্টারলিংক (Starlink) স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা শিগগিরই বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। এটি হবে বাংলাদেশের ডিজিটাল সংযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সরকার স্টারলিংকের আগমনের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং এটি সফল করতে সব ধরনের সহায়তা দিতে আগ্রহী।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে দ্রুত বর্ধনশীল, কিন্তু উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা এখনও শহরকেন্দ্রিক এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল বিভাজন রয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, হাওর অঞ্চল, চর এলাকা এবং প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল বা অনুপস্থিত। একই সঙ্গে, বড় শহরগুলোতেও উচ্চ ব্যান্ডউইথ প্রয়োজনীয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যা প্রচলিত অপটিক্যাল ফাইবার ও মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে।
স্টারলিংকের আগমন এই সমস্ত সমস্যার অধিকাংশই সমাধান করতে পারে, কারণ এটি ভূ-ভিত্তিক টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল নয় এবং সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সক্ষম। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা বাংলাদেশকে ডিজিটাল সংযোগের দিক থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি, স্টারলিংক উদীয়মান দেশগুলোতেও দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। যেখানে অপটিক্যাল ফাইবার বা মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছায়নি, সেখানে স্টারলিংক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।
স্টারলিংক কিভাবে কাজ করে? জেনে নেয়া যাক স্টারলিংকের প্রযুক্তিগত কাঠামো
স্টারলিংক হলো একটি লো-আর্থ অরবিট (LEO) স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা যা প্রচলিত ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল নেটওয়ার্কের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। তাদের রয়েছে অসাধারণ স্যাটেলাইট বিন্যাস ও কক্ষপথ। স্টারলিংকের LEO স্যাটেলাইটগুলো প্রায় ৫৫০ কিমি উচ্চতায় কক্ষপথে অবস্থান করে, যা প্রচলিত জিওস্টেশনারি (GEO) স্যাটেলাইটের (৩৬,০০০ কিমি উচ্চতা) তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে স্টারলিংকের ৭,০০০+ সক্রিয় স্যাটেলাইট রয়েছে এবং ২,০০০ পর্যন্ত স্যাটেলাইট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। LEO স্যাটেলাইটগুলো মেশ নেটওয়ার্ক পদ্ধতিতে একে অপরের সঙ্গে লেজার লিংকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, ফলে ট্র্যাডিশনাল স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের তুলনায় কম ল্যাটেন্সি ও উচ্চ ব্যান্ডউইথ নিশ্চিত হয়।
স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলোতে অপটিক্যাল লেজার কমিউনিকেশন সিস্টেম রয়েছে, যা বৈশ্বিক ইন্টারনেট ট্রাফিক পরিচালনা করে এবং স্থলভাগের গ্রাউন্ড স্টেশনের ওপর নির্ভরশীলতা কমায়। লেজার লিংকের সুবিধা হচ্ছে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে সরাসরি ডেটা ট্রান্সফার সম্ভব হয়, ফলে ডাটা রাউটিং আরও দ্রুত হয়, প্রচলিত ভূ-ভিত্তিক ক্যাবল সংযোগের সীমাবদ্ধতা এড়ানো যায় এবং দুর্যোগকালীন সময়ে বা দুর্গম অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
স্টারলিংক Ka-Band (২৬-৪০ GHz) এবং Ku-Band (১২-১৮ GHz) ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ডাটা ট্রান্সমিশন পরিচালনা করে। স্টারলিংক ফেজড অ্যারে অ্যান্টেনা ব্যবহার করে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিকটবর্তী স্যাটেলাইটে সংযোগ স্থাপন করতে পারে, ফলে একাধিক স্যাটেলাইটের মধ্যে স্মুথ হ্যান্ডওভার হয় এবং সংযোগের স্থায়িত্ব বজায় থাকে।
স্টারলিংকের সেবা পেতে গ্রাহকদের একটি টার্মিনাল ডিভাইস প্রয়োজন। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং এন্টেনা যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাছাকাছি স্যাটেলাইটের দিকে অ্যাডজাস্ট হয় এবং মাল্টি-বিম ফোকাসিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে শক্তিশালী সংযোগ প্রদান করে। এই ডিভাইসে WiFi রাউটার ও LAN পোর্ট সংযুক্ত থাকে, ফলে মাল্টিপল ডিভাইস সংযুক্ত করা যায়।
প্রচলিত GEO স্যাটেলাইটের সাথে স্টারলিংক LEO স্যাটেলাইটের তুলনামূলক ল্যাটেন্সি ও ব্যান্ডউইথ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় স্টারলিংকের ডাউনলোড স্পিড: ১০০-২০০ Mbps, আপলোড স্পিড: ১০-২০ Mbps ও ল্যাটেন্সি: ২০-৪০ মিলিসেকেন্ড। আর প্রচলিত GEO স্যাটেলাইট ইন্টারনেট (যেমন V-SAT) এর ডাউনলোড স্পিড: ১০-২৫ Mbps, আপলোড স্পিড: ১-৩ Mbps ও ল্যাটেন্সি: ৫০০+ মিলিসেকেন্ড। অর্থাৎ, স্টারলিংক ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ডের নিকটবর্তী পারফরম্যান্স প্রদান করে।
স্টারলিংক ইতিমধ্যেই উদীয়মান অনেক দেশে প্রবেশ করেছে ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্টারলিংকের সেবা সেসব দেশের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ সমস্যাগুলো সমাধান করছে অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে। উদাহরণ স্বরূপঃ
১. নাইজেরিয়া: আফ্রিকার প্রথম স্টারলিংক গ্রাহক
২০২৩ সালে নাইজেরিয়া প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে স্টারলিংক ইন্টারনেট চালু করে। দেশটির বহু প্রত্যন্ত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছায়নি, যার ফলে শিক্ষা, ব্যবসা এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ডিজিটাল বিভাজন ছিল প্রকট। স্টারলিংক চালুর পর শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সহজে ক্লাস করতে পারছে, টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও চিকিৎসা সেবা সহজ হয়েছে এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ই-কমার্স ও ফ্রিল্যান্সিংয়ে যুক্ত হতে পারছে।
২. ফিলিপাইন: দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ইন্টারনেট বিপ্লব
ফিলিপাইন প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে টাইফুন ও ভূমিকম্পের শিকার হয়। এসব দুর্যোগে প্রায়ই মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ ধ্বংস হয়ে যায়। ২০২৩ সালে স্টারলিংক চালুর পর, ফিলিপাইনের প্রত্যন্ত দ্বীপগুলোতে দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ফলে উদ্ধারকর্মীরা যোগাযোগ বজায় রেখে উদ্ধার কাজ চালাতে পারছে, বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পর স্থানীয় জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার করে সাহায্য চাইতে পারছে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলি অনলাইনে টিকে থাকতে পারছে।
৩. মেক্সিকো: কৃষি ও শিক্ষাখাতে পরিবর্তন
মেক্সিকোর গ্রামাঞ্চলে কৃষকরা ইন্টারনেটের সুবিধা পেত না, ফলে তারা আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ও আবহাওয়ার তথ্য থেকে বঞ্চিত হতো। স্টারলিংকের মাধ্যমে তারা এখন ডিজিটাল কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছে, যার ফলে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। এছাড়া, দূরবর্তী স্কুলগুলোও এখন অনলাইনে সংযুক্ত হচ্ছে, ফলে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশেও স্টারলিংকের সেবা যেসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে:
১. প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট বিস্তারঃ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, চর এলাকা, সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চল এবং নদী বেষ্টিত এলাকাগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ অত্যন্ত দুর্বল। স্টারলিংক এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করবে, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল মার্কেটে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে এবং পর্যটন খাতকে ডিজিটালাইজড করতে সহায়ক হবে।
২. ডিজিটাল ফ্রিল্যান্সিং খাতের প্রসারঃ বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট। তবে, অবকাঠামোর দুর্বলতা ও ইন্টারনেটের সীমাবদ্ধতা অনেক সম্ভাবনাময় তরুণদের পিছিয়ে রাখছে। স্টারলিংক ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ডের বিকল্প হয়ে কাজ করতে পারে, ফলে যেকোনো স্থানে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করতে পারবে ফ্রিল্যান্সার কর্মীরা।
৩. দুর্যোগকালীন দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় (যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়) মোবাইল নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ে। স্টারলিংক-এর মাধ্যমে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত পুনরুদ্ধার কার্যক্রম চালানো যাবে, ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে যোগাযোগ সহজ হবে এবং উদ্ধার কার্যক্রম আরও কার্যকর হবে।
৪. ব্যাক আপ বা বিকল্প সংযোগঃ বাংলাদেশের ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আন্ডারসি ক্যাবলের ওপর নির্ভরশীল। যদি কোনো কারণে সাবমেরিন ক্যাবলে সমস্যা হয়, পুরো দেশে ইন্টারনেট ধীরগতির বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্টারলিংক ব্যাকআপ নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করতে পারে, ফলে জাতীয় ডিজিটাল অবকাঠামো আরও স্থিতিশীল হবে। বিশেষ করে সরকারি সংস্থা, ব্যাংক, হাসপাতাল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিকল্প ইন্টারনেট প্রস্তুত থাকা অত্যন্ত জরুরি।
৫. ডিজিটাল সার্ভিস ও ই-গভর্নেন্স সম্প্রসারণঃ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পরিষেবাগুলোর (যেমন ডিজিটাল আইডি, পাসপোর্ট, ট্যাক্স পেমেন্ট, ভূমি রেকর্ড ইত্যাদি) অনলাইন কার্যক্রম আরও উন্নত হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও টেলিমেডিসিন পরিষেবায় স্টারলিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে
এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে বর্তমান সরকার চায় স্টারলিংক সেবাটি সফলভাবে কার্যকর হোক এবং দেশের ডিজিটাল অবকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করুক। সরকার উন্নতমানের ইন্টারনেট পরিষেবা নিশ্চিত করতে স্টারলিংকের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তির আগমনকে স্বাগত জানাবে সেটাই স্বাভাবিক। আমরাও চাই স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন হোক, আইটি সেক্টর আরও সমৃদ্ধ হোক এবং দেশের জনগণ উন্নতমানের ইন্টারনেটের সুবিধা ভোগ করুক। তবে, স্টারলিংকের প্রবেশ একদিকে যেমন বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে। তাই, সরকারকে এটির অনুমোদন দেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হবে এবং একটি সুসংগঠিত নীতিগত কাঠামোর মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। সরকারকে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে-
লাইসেন্সিং শর্ত: স্টারলিংককে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC)-এর ISP লাইসেন্সের আওতায় আনবে, নাকি বিশেষ ধরনের লাইসেন্স দেওয়া হবে, তা স্পষ্ট করা জরুরি। সরকার চাইলে স্থানীয় অংশীদারিত্ব (Local Partnership) মডেল তৈরি করতে পারে, যাতে স্টারলিংক বাংলাদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে।
স্পেকট্রাম ব্যবহারের অনুমতি: সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে স্টারলিংকের ফ্রিকোয়েন্সি অন্যান্য টেলিকম অপারেটরদের ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি করবে না।
নিয়ন্ত্রক কাঠামো ও লাইসেন্সিং প্রসঙ্গঃ স্টারলিংক টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর বাইরে গিয়ে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সরবরাহ করে, যা প্রচলিত ইন্টারনেট সেবাদাতাদের (ISP) জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। স্টারলিংকের প্রবেশ প্রচলিত ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল অপারেটরদের ব্যবসার জন্য একটি হুমকি হতে পারে। সরকার চাইলে স্থলভিত্তিক ISP ও টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে স্টারলিংকের ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার নীতি প্রণয়ন করতে পারে।
ডাটা সুরক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তাঃ স্টারলিংকের সমস্ত ডাটা বিশ্বব্যাপী নিজেদের স্যাটেলাইট ও গ্রাউন্ড স্টেশনগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই, সরকার চাইতে পারে স্টারলিংকের বাংলাদেশি গ্রাহকদের ডাটা যেন স্থানীয়ভাবে সংরক্ষিত হয়, যা দেশের সাইবার নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি সক্ষমতা: বিশেষ প্রয়োজনে সরকার প্রচলিত। ISP-গুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করতে পারে, কিন্তু স্টারলিংকের ক্ষেত্রে জটিলতা হতে পারে। তাই, সরকারকে একটি কার্যকর সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে স্টারলিংকের সাথে আলোচনা ও সমঝতার মাধ্যমে।
মূল্য ও ব্যয়সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জঃ স্টারলিংকের বর্তমান গ্রাহক প্যাকেজ অন্যান্য ISP-এর তুলনায় অনেক ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য এটি অতিরিক্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। সরকার চাইলে স্টারলিংককে স্থানীয়ভাবে ভর্তুকিযুক্ত প্যাকেজ অফার করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করতে পারে।
মূলকথা, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, বাংলাদেশে যদি স্টারলিংক যাত্রা শুরু করে, তবে এটি দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশ সরকার ও নীতিনির্ধারকদের স্টারলিংক গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার। স্টারলিংককে অনুমোদন দিতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত একটি সুসংহত নীতিগত কাঠামো তৈরি করতে হবে। সম্ভাব্য কৌশল হতে পারে-
১. বিশেষ লাইসেন্সিং মডেল: স্টারলিংককে বাংলাদেশের আইনের মধ্যে এনে একটি স্বতন্ত্র স্যাটেলাইট ইন্টারনেট অপারেটর ক্যাটাগরি তৈরি করা যেতে পারে।
২. স্থানীয় অংশীদারিত্ব: সরকার চাইলে স্টারলিংককে স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার (JV) মডেলে কাজ করতে বাধ্য করতে পারে।
৩. ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতি: স্থানীয় টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট মূল্য নীতি গঠন করা যেতে পারে।
৪. ডাটা সুরক্ষা আইন: গ্রাহকদের ডাটা কোথায় সংরক্ষিত হবে, সরকার কিভাবে নজরদারি করবে-এটি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা দরকার।
৫. বিশেষ ভর্তুকি: শিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সরকারি পরিষেবায় ব্যবহারযোগ্য স্টারলিংক সংযোগের জন্য বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সবশেষে, স্টারলিংক যে বাংলাদেশে এক বিপ্লব ঘটাতে পারে সে বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই, তবে সরকারকে এটিকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নয়ন ও নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করাই হবে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।
আবদুল্লাহ ফেরদৌস লন্ডন প্রবাসী প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, পরামর্শক ও প্রকল্প ব্যাবস্থাপক।
-মানবজমিন