দেশে ‘গার্লস রাইটস এন্ড ইকুইটি মুভমেন্ট’ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পঞ্চাশের অধিক বালিকা ওযুবক–যুবতী সকল ধরণের বৈষম্য, সহিংসতা, সুযোগের অভাব এবং মেয়ে ওযুবতী নারীদের অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।শনিবার আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে উপলক্ষ্যে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালবাংলাদেশ আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল সমাবেশে তারা এই দাবি জানায়।
যুবকরা তাদের সহায়তা করার জন্য সরকার, নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন ওকর্পোরেট অংশীদার, সুশীল সমাজ নেটওয়ার্ক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টস্টেকহোল্ডারদের প্রতি আহ্বান জানায়। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশযুবকদের দাবির সম্মতি জানিয়ে আগামি দশ বছরে লিঙ্গ সমতা এবংমেয়েদের অধিকারের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘গার্লস রাইটস এন্ডইকুইটি মুভমেন্ট’ ক্যাম্পেইনের ঘোষণা করে।
ভার্চুয়াল আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন এনজিও অ্যাফেয়ার্সব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ রাশেদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্ল্যানইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর অরলা মরফি, বাংলাদেশে নিযুক্তসুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেকজান্ড্রা বার্গ ভন লিনডে, জাতিসংঘ জনসংখ্যাতহবিলের আবাসিক প্রতিনিধি আশা তর্কেলসন, ইউনিলিভার বাংলাদেশেরচেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেদার লেলে এবং ইএসডিও এর নির্বাহীপরিচালক শহীদ উজ–জামান।
স্বাগত বক্তব্যে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর হেড অব ইনফ্লুয়েন্সিংকাশফিয়া ফিরোজ শিশু, বিশেষত মেয়েশিশুদের ও যুবতীদের অধিকারঅর্জনে তরুণদের সাথে নিয়ে তার সংগঠন কীভাবে কাজ করছে তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি রাশিদুল ইসলাম বলেন, লিঙ্গ সমতা বাংলাদেশ সরকারেরঅন্যতম অগ্রাধিকার। আমরা পরিকল্পনা অর্জনের লক্ষ্যে সরকারের সাথেপ্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের মতো উন্নয়নের অংশীদারদের যে সহযোগিতা করছেতা সত্যই আমরা প্রশংসা করি। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে, আমরাঅধিকার এবং সাম্য অর্জনের জন্য মেয়ে এবং যুবকদের এই যাত্রায় যেকোনসহযোগিতা দিতে সর্বদা প্রস্তুত আছি। সামাজিক সচেতনতা বাড়াতেআমাদের একসাথে কাজ করা দরকার। নীতি–আইন ইতিমধ্যে হয়েছে, তবুওযদি কোনও সংস্কার প্রয়োজন হয়, সেখানে আমরা সকলেই কার্যকরভাবেঅবদান রাখতে পারি
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেকজান্ড্রা বার্গ ভন লিনডেবলেন, সুইডিশ সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে মেয়েদের এবং যুবকদেরউপর বিনিয়োগ মানে আরও ন্যায়সঙ্গত সমাজে বিনিয়োগ করা। যুবকরাসামাজিক পরিবর্তন আনতে সত্যিই দুর্দান্ত কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সবাইপরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার দিকে সবাইকে ফিরিয়ে আনতে পারি। লিঙ্গীয়সাম্য অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়ন সুইডিশ সরকারের শীর্ষস্থানীয়অগ্রাধিকার। বাংলাদেশে আমরা বাল্যবিবাহ নিরসন, লিঙ্গভিত্তিকসহিংসতা রোধ এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রচারে প্ল্যানইন্টারন্যাশনালের মতো সরকার ও অংশীদারদের সাথে কাজ করব। এমনপরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব, যেখানে মেয়েরা পূর্ণ সম্ভাবনার সাথেবেড়ে উঠতে সক্ষম হবে
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের আবাসিক প্রতিনিধি আশা তর্কেলসনবলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত।তরুণ, বিশেষত মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন এবংকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ করা দরকার। এটি আমাদেরদেশের বিকাশের জন্য লাভবান হবে। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, ইউএনএফপিএ মহিলা এবং মেয়েদের পক্ষে পরামর্শ দিচ্ছে। আমরা সকলযুবকদের সামাজিক পরিবর্তনে এজেন্ট হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে যাচ্ছি।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেদার লেলেবলেন, আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্যই নারী-পুরুষে ইকুইটি প্রয়োজন। সারা পৃথিবীতে আমাদের ইউনিলিভারের জনশক্তির প্রায় অর্ধেক নারী এবং অর্ধেক পুরুষ। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশের সময়, তাই তোমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
সামাজিক সংগঠন ইএসডিও এর নির্বাহী পরিচালক শহীদ উজ–জামানআশা করেন আমাদের দেশের তরুণদের হাতধরে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, মেয়ে ও মহিলাদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমাদেরনাগরিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। আমরা সত্যই আশাবাদী যেমেয়েরা এবং যুবকরা তাদের সাম্যতার বিষয়ে এবং তাদের ইতিমধ্যে সমাজেভাল পরিবর্তন আনতে তাদের এজেন্ডাটি এগিয়ে নিতে এগিয়ে চলেছে।আজ যে মেয়েরা যোগদান করেছে তারা সম্প্রদায় স্তরে পরিবর্তনের সর্বোত্তমউদাহরণ।
বালিকাদের প্রতি সামাজিক বৈষম্য এবং সহিংসতাকে মানব উন্নয়নেরঅন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টরঅরলা মরফি। তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনের প্রধান লক্ষ্য কেউ যেনপিছিয়ে না পড়ে, বিশেষত মেয়ে এবং যুবতী মহিলারা এবং তা নিশ্চিত করাবাধ্যতামূলক। সরকার, জাতিসংঘ, উন্নয়ন অংশীদার এবং নেটওয়ার্ক, সিএসও, বেসরকারী সেক্টরকে মেয়ে ও যুবতী নারীর ক্ষমতায়ন, তাদের কথাশোনা, সহিংসতার ভয় ছাড়াই বাঁচতে এবং তাদের অধিকার অর্জনের জন্যযৌথ উদ্যোগ নেওয়া দরকার। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন অংশীদার, নেটওয়ার্ক, সিএসও, বেসরকারী খাত, মিডিয়া এবংদেশের অন্যান্য সকল স্টেকহোল্ডারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে তারামেয়েদের ও যুবকদের অধিকার ও সাম্য অর্জনের আন্দোলনে সহায়তা করে।
আলোচনায় পর্বের পাশাপাশি কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষ্যে বালিকাদেরঅধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি আগামী দশ বছরে সুবিধা বঞ্চিতজনগোষ্ঠীর জন্য কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন কর্মকর্তারা।
প্ল্যানের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর লরা ক্রিয়াডো মনে করেন এই যুব–নির্ভরকর্মসূচী কন্যাশিশুদের অধিকার বুঝতে সমাজের সকল পর্যায়ের ছেলেমেয়েদের সহায়তা করবে। যার ফলে বালিকারা তাদের নিজস্ব সম্ভাবনাকেতুলে ধরতে পারবে সমাজের কাছে।
বান্দরবানের চ্যাম সিং ম্রো, ওয়াইএপি সদস্য ফারজানা আক্তার রিমু এবংসামিয়া খান প্রিয়া, নীলফামারীর শিরিন আখতার এশা এবং ভোলাইউনিয়ন শিশু ফোরামের সাদিয়া আক্তারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেশিশু অধিকার কর্মীরা অভিজ্ঞতা বিনিময়ে অংশ নেন। প্রেস রিলিজ