Type to search

Lead Story জাতীয়

করোনার টিকা পেতে কি করবেন

করোনা টিকা -এবিসিবি নিউজ-abcb news

দেশে চলে এসেছে মহামারি করোনার ভ্যাকসিন। আগামীকাল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে সবার আগে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে মোট ৬৯০ জনকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি। প্রথম মাসেই ৬০ লাখ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তার আগে এটা পেতে সবাইকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। এ জন্য ‘সুরক্ষা অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। যাদের নিজস্ব মোবাইল বা ডিভাইস নেই তাদের ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে ফ্রি নিবন্ধন করার সুযোগ দেওয়া হবে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অ্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখানো হয় কীভাবে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করা হবে। পাশাপাশি ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার বিশদ বর্ণনা করা হয়। করোনাভাইরাসের টিকা পেতে আগ্রহীরা সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ  ডাউনলোড করে নিবন্ধনের কাজটি সারতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

তিনি বলেন, যাদের ইন্টারনেট সুবিধা বা অ্যাপ ব্যবহারের মতো ডিভাইস নেই, তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগ্রহীদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ফ্রি নিবন্ধন করার সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এনএম জিয়াউল আলম বলেন, এই টিকা নিতে ‘রিয়েল টাইম’ অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন টিকা নিতে হবে। তবে শুধু ১৮ বছরের বেশি বয়সি মানুষেরা এই টিকা নিতে পারবেন এবং নিবন্ধন করতে পারবেন। কারণ অপ্রাপ্তবয়স্কদের ওপর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি। পরিচয় যাচাইয়ে এই অ্যাপে ১৮টি শ্রেণি করা হয়েছে, যার একটি নির্বাচন করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যারা নিবন্ধন করে প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে ব্যর্থ হবেন তাদের বিষয়ে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আপাতত নেই। অর্র্থাৎ যে কেন্দ্রে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেবেন তাকে সেই কেন্দ্রেই দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। তা না হলে বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন নষ্ট হবে। তারা বলেন, নিবন্ধন অনুযায়ী টিকা কেন্দ্রে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে।

ভ্যাকসিন নিতে হলে যা যা করতে হবে : স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, টিকাদান প্রক্রিয়া ছয় ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথমে এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে নিবন্ধন। অনলাইন পোর্টাল থেকে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ। এরপর ভ্যাকসিন দেওয়ার তারিখ ও তথ্য পাঠানো হবে। নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হবে এবং প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরবর্তী ডোজ টিকা দেওয়া হবে। দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর সুরক্ষা প্লাটফর্ম থেকে ভ্যাকসিন সনদ দেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথমে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।

সেখানে প্রথমেই আছে ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধনের ট্যাব। সেখানে ক্লিক করে দেখা যাবে পরিচয় যাচাইয়ে এই অ্যাপ্লিকেশনে ১৮টি শ্রেণি করা হয়েছে। যার একটি সিলেক্ট করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে। এই ১৮টি শ্রেণির মধ্যে রয়েছে নাগরিক নিবন্ধন, সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, অনুমোদিত সব বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সব সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মকর্তা-কর্মচারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সম্মুখসারির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক ও আধা-সামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী, সম্মুখ সারির সংবাদকর্মী, প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় প্রতিনিধি, সৎকার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মীরা। এ ছাড়া রয়েছেন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবার সম্মুখসারির কর্মী, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর ও নৌবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা ও উপজেলায় জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই হওয়ার পর স্ক্রিনে নিবন্ধনকারীর নাম দেখানো হবে বাংলা ও ইংরেজিতে।

সেখানে একটি ঘরে একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে যে নম্বরে টিকাদান সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস করা হবে। মোবাইল নম্বর দেওয়ার পর একটি ঘর পূরণ করতে হবে, যেখানে জানাতে হবে নিবন্ধনকারীর কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে কি না, থাকলে কোন কোন রোগ আছে। সেখানে আরেকটি ঘরে জানাতে হবে পেশা এবং তিনি করোনা সংক্রান্ত কাজে সরাসরি জড়িত কিনা। এরপর বর্তমান ঠিকানা ও কোন কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে ইচ্ছুক তা নির্বাচন করতে হবে। সব শেষে তথ্য সংরক্ষণ করলে নিবন্ধনকারীর মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি)। সেই ওটিপি দিয়ে ‘স্ট্যাটাস যাচাই’ বাটনে ক্লিক করলে নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে। নিবন্ধন হয়ে গেলে টিকার প্রথম ডোজের তারিখ ও কেন্দ্রের নাম এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

নিবন্ধনের পরের ধাপ : এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ দিয়ে লগ ইন করে এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া ওটিপি কোড দিয়ে টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে হবে। এসএমএসে যে তারিখ দেওয়া হবে, সেই তারিখে টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে করোনার টিকা নিতে পারবেন নিবন্ধনকারীরা। এভাবে দুটি ডোজ শেষ হলে সুরক্ষা প্লাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

ভ্যাকসিনেশন সেন্টার : উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ এবং বক্ষব্যাধি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার জন্য ৭ হাজার ৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে। একটি দলের মধ্যে ছয়জন সদস্য থাকবে। এর মধ্যে দুজন টিকাদানকারী (নার্স, সাকমো, পরিবারকল্যাণ সহকারী) ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবে।

Translate »