ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলাওয়াশ

ভেন্যু বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের, বোলারদের ব্যর্থতার দিনে কাটেনি তাদের ব্যাটিং দৈন্যও। ফলশ্রুতিতে আরও একটি অনায়াস জয় লেখা হলো বাংলাদেশের নামে, দেশের মাটিতে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবীয়দের ধবলধোলাই করা হলো, ঝুলিতে যোগ হলো আরও ১০টি পয়েন্ট।
মিরপুর আগের দুই ম্যাচে রাজত্ব ছিল বোলারদের। ক্যারিবীয়রা আগে ব্যাট করে দেড়শ রানের মধ্যেই গুটিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের তেমন কিছু করার প্রয়োজন পড়েনি। যদিও ১২২ আর ১৪৮ রানের মতো মামুলি স্কোর টপকাতেও বেগ পেতে হয়েছে তাদের, যে কারণে ব্যাটিংটা দুশ্চিন্তা হয়েই ছিল। সেটা অনেকটাই দূর হলো সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। দলের সিনিয়র চার ক্রিকেটারের ব্যাটে এলো হাফ সেঞ্চুরি, তাতে দলীয় সংগ্রহ ২৯৭। এরপর বল হাতে যথারীতি মোস্তাফিজ-মিরাজদের ঝলক, ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট ১৭৭ রানে।
বাংলাদেশের নামের পাশে লেখা হলো ১২০ রানের বড় জয়, সেই জয়ের ম্যাচে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে টপকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সব থেকে বেশি ওয়ানডে (২২১) খেলার নজির গড়লেন মুশফিকুর রহিম, নিজের শহরে তামিম ইকবাল নেতৃত্বের অভিষেক রাঙালেন হাফ সেঞ্চুরিতে, ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরিতে মাহমুদউল্লাহ জানিয়ে দিলেন, ফিনিশারের ভূমিকায় দলে এখনও তার বিকল্প নেই। সিরিজসেরার খেতাব হাতিয়ে নেওয়া সাকিব আল হাসান কাটালেন ৫৭০ দিনের হাফ সেঞ্চুরির খড়া! এত এত পাওয়ার আনন্দে কিছুটা বিষাদের ছায়া, কুঁচকির চোট নিয়ে সাকিবের মাঠ ছেড়ে যাওয়া।
মারকুটে ওপেনার লিটন দাসের ছায়া হয়ে থাকা আর সাকিবের তিন নাম্বার পজিশনে তিনবার ব্যাটিং করেও নাজমুল হোসেন শান্তর নিজেকে মেলে ধরতে না পারাটাকেও চাইলে বিষাদের তরীতে তুলে দেওয়া যায়। তবে জয়ের স্রোতে আপাতত সেই তরী দূরেই ভাসিয়ে দিয়েছে টিম বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ যতই খর্বশক্তির হোক না কেন, তিন ম্যাচের সিরিজ থেকে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট পেয়ে ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানটি দখলে নিতে পেরে টাইগার শিবির খুশি। এখন ভাবনা একটাই, ওয়ানডের এই জয়ের ধারাটাকে টেস্ট সিরিজেও টেনে নিয়ে যাওয়া।
তামিম-মুশফিকদের ব্যাটিং প্রদর্শনী স্বস্তির বার্তাই দিচ্ছে। লিটন আর শান্তর (২০) দ্রুত বিদায়ে শুরুটা ভালো না হলেও পরবর্তী সময়টাতে রাজত্ব করেছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরাই। ৩৮ রানে ২ উইকেট পতনের পর তামিম-সাকিবের ৯৩ রানের জুটিটাই সুর বেঁধে দেয়, এরপর মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ জুটির দ্রুতলয়ে ৭২ রান, দলের সংগ্রহটাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলে। ৮১ বলে ৫১ রান করা সাকিব কিছুটা ঢিমে তালে খেলেছেন। তবে সাবলীল ব্যাটিংয়ে ৩টি চার আর ১টি ছক্কায় ৮০ বলে ৬৪ রান করেছেন তামিম। সমান রানের ইনিংস খেলার পথে ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দিয়েছেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ।
মুশফিক ৬৪ রান করেছেন ৫৫ বলে, ৪টি চার আর ২টিা ছক্কায়। আরও আগ্রাসী মাহমুদউল্লাহ সমান তিনটি করে চার আর ছক্কায় ৪৩ বলে ৬৪ করে রইলেন অপরাজিত। এই যুগলের অমন ব্যাটিংয়েই শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের ঝুলিতে যোগ হয় ১০০ রান, ২২ রান আসে শেষ ওভার থেকে। তাতেই তিনশ ছুঁইছুঁই পুঁজি তামিম ব্রিগেডের। স্বাগতিকরা অমন পুঁজি গড়ার পরই সফরকারী ক্যারিয়দের ধবলধোইয়ের পথ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। দারুণ পারফরম্যান্সে সেই পথে দলকে টেনে নিয়ে গেলেন বোলাররা। মোস্তাফিজ আর মিরাজ ছিলেন দুর্দান্ত, একাদশে ফিরে আলো ছড়িয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন আর তাসকিন আহমেদও।
সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেওয়া সাইফউদ্দিন ছিলেন কিছুটা খরুচে, ৯ ওভারে দিয়েছেন ৫১ রান। তবে একটি উইকেট পেলেও বেশ মিতব্যয়ী ছিলেন তাসকিন। মিরাজ তো ছিলেন ভীষণ কৃপণ। ২ উইকেট নেওয়ার পথে ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে দিয়েছেন মোটে ১৮ রান। ক্যারিবীয়দের মিডলঅর্ডারকে স্পিন-মায়ায় রীতিমতো নাচিয়ে ছেড়েছেন এই তরুণ। ২৪ রানে ২ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজ তো আগের মতোই ত্রাস ছড়িয়েছেন শুরুতে। সিরিজে তৃতীয়বার তিনি নিজের শিকার বানান সুনিল অ্যামব্রিসকে, এর আগে কেজর্ন ওটলেকে আউট করে ম্যাচে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন বাঁহাতি পেসারই।
সব মিলেই দারুণ বোলিং প্রদর্শনী টাইগার বোলারদের। তাদের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার দিনে ব্যাটসম্যানদের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া পারফরম্যান্স- ওয়ানডে সিরিজের শেষটা বোধকরি টাইগার টিম ম্যানেজমেন্টর মনের মতোই হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৯৭/৬ (তামিম ৬৪, লিটন ০, শান্ত ২০, সাকিব ৫১, মুশফিক ৬৪, মাহমুদউল্লাহ ৬৪*, সৌম্য ৭, সাইফউদ্দিন ৫*; জোসেফ ২/৪৮, মায়ার্স ১/৩৪, রেইফার ২/৬১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৪.২ ওভারে ১৭০ (ওটলে ১, অ্যামব্রিস ১৩, বোনর ৩১, মায়ার্স ১১, জেসন ১৭, পাওয়েল ৪৭, হ্যামিল্টন ৫, রেইফার ২৭, জোসেফ ১১, আকিল ০, হার্ডিং ১*; সাইফউদ্দিন ৩/৫১, মোস্তাফিজ ২/২৪, তাসকিন ১/৩২, মিরাজ ২/১৮, সৌম্য ১/২২)
ফল : বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : মুশফিকুর রহিম
সিরিজসেরা : সাকিব আল হাসান