Type to search

জাতীয়

পিটিএ- শত পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ-ভুটান পিটিএ সাইনিং-ABCB NEWS

ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করল বাংলাদেশ। রোববার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ভুটানের অর্থ বাণিজ্যমন্ত্রী লোকনাথ শর্মা। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ চুক্তির ফলে ভুটানে ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেল বাংলাদেশ।

এ সময় বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ভুটান প্রান্তে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দর্জিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুদেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভুটানের ঐতিহাসিক ও বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের আরও উন্নতি এবং ব্যবসা বাণিজ্যসহ পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ভুটানের সঙ্গে একই দিনে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দুই দেশ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই করার কথা শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ ভুটানকে ১৮টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিচ্ছে। আর বাংলাদেশের ৯০টি পণ্য ভুটানে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। ভুটান আরও কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়ায় দুই দেশের মধ্যে ‘দ্বিপক্ষীয় অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

২০১৯ সালের ১২ থেকে ১৫ এপ্রিল ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় এ নিয়ে আলোচনা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২১ থেকে ২৩ আগস্ট দুদেশের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি বৈঠক হয়। এরপর গত ১৯ জুন হয় দ্বিতীয় বৈঠক। এসব বৈঠকের আলোকে গত সেপ্টেম্বরে বাণিজ্য চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে এবং ভুটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। ভুটান থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পাথর আমদানি করা গেলে বাংলাদেশের জন্য নির্মাণসামগ্রীর ব্যয় হ্রাস পাবে, যা নির্মাণ খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে। এ ছাড়া স্বল্পমূল্যে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করা সহজ হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পাথর আনার বিষয়টি একাধিকবার তুলে ধরা হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দুদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৭ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়।

বাংলাদেশ থেকে ভুটানে মূলত তৈরি পোশাক, খাদ্যসামগ্রী, প্লাস্টিক, ওষুধ, গৃহসজ্জা সামগ্রী ও বৈদ্যুতিক পণ্য রফতানি হয়। ভুটান থেকে বাংলাদেশ সবজি ও ফলমূল, খনিজ দ্রব্য, নির্মাণসামগ্রী, বোল্ডার পাথর, পাল্প ও রাসায়নিক আমদানি করে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভুটান ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এদিন ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষরিত হলো।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। ফলে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে প্রাপ্ত বাংলাদেশের কিছু বাণিজ্য সুবিধা লোপ পাবে। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার ও নির্দেশনার ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. মোমেন বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীনতার স্বীকৃতির পর থেকে সুদীর্ঘ ৫০ বছরে দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের অধিক উন্নয়ন ঘটেছে। বাংলাদেশ এ বছর মুজিব শতবর্ষ এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। আর এ সময় বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে দুদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক উন্নয়নে নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে।

Translate »