Type to search

খেলাধুলা

চলে গেলেন ফুটবলের ঈশ্বর ম্যারাডোনা

ফুটবলের ঈশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনা না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আজ বুধবার (২৫ নভেম্বর) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। কয়েকদিন আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি।

আচমকা এমন খবরে থমকে গেল গোটা ফুটবল দুনিয়া। চমকে উঠল ফুটবলপ্রেমী বাংলাদেশের মানুষের হূদয়। যাকে বলা হয় ফুটবল ঈশ্বর, সেই দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা এই দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। কাঁদিয়ে গেছেন তার কোটি কোটি ভক্তদের। বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশ্বকাপ জয়ী এই তারকা বুধবার আর্জেন্টিনায় হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর্জেন্টিনায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এই কিংবদন্তির মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপ জয়ী এই তারকা মাঠে তার ফুটবলের জাদু দেখিয়েছেন অসংখ্য বার। পায়ে আঘাতের পর আঘাত করেও প্রতিপক্ষ আটকাতে পারেনি ফুটবলের এই মহানায়ককে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটে গিয়ে ছয় জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোল করার অসাধারণ ক্ষমতা দেখান এই ফুটবল জাদুকর। ফুটবল ১১ জনের খেলা। অথচ ম্যারাডোনা দেখিয়েছেন কীভাবে একক নৈপুণ্যে বিশ্বকাপ জয় করা যায়।

 

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাত দিয়ে গোল করে বলেছেন, ‘এটা ঈশ্বরের হাত।’ কদিন আগে ম্যারাডোনা মজা করে বলেছিলেন—তিনি ডান হাতে আরেকটি গোল করতে চান। তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। মাত্র ৬০ বছর বয়স হয়েছিল। আর্জেন্টিনার এই কিংবদন্তি বেশ কিছু দিন আগে অসুস্থ ছিলেন। তার সবচেয়ে প্রিয় শহর বুয়েন্স আইরেসের একটি হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। তা অপসারণ করাও হয়েছিল। ফুটবল দুনিয়া প্রার্থনা করেছিল যেন ম্যারাডোনা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। বাসায় ফিরেও ছিলেন তিনি। এটা ২০ দিন আগের ঘটনা। হাসপাতালের বেড থেকে যখন বাসায় ফেরেন ফুটবলের এই মহানায়ক তখন সবাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। কিন্তু কে জানত মানুষটির আয়ু আছে আর মাত্র কটা দিন, সবার ভালোবাসা মায়া ত্যাগ করে চলে যাবেন।

২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফুটবল কাভার করতে গিয়ে ইত্তেফাকের স্পোর্টস রিপোর্টার ম্যারাডোনার সঙ্গে দেখা করেন। ইত্তেফাকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অঙ্কিত একটি কফি মগ উপহার দেওয়া হলে তিনি সানন্দে তা গ্রহণ করেন। ম্যারাডোনার সঙ্গে বাংলাদেশের আর কোনো সাংবাদিকের এমন ইতিহাস নেই। এই উপমহাদেশে ফুটবল ঈশ্বরের সঙ্গে এমন বিরল ঘটনা শুধু ইত্তেফাকের ক্রীড়া সাংবাদিকের সঙ্গেই হয়েছিল।

১৪ জুলাই রাতে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর টেলিভিশন সেন্টারে পরিচয় হয়েছিল ম্যারাডোনার সঙ্গে ইত্তেফাকের এই সাংবাদিকের। নিজেই হাত বাড়িয়েছিলেন। অন্যরাও উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলো হাত থেকে ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেলেও ইত্তেফাকের উপহারটি ছিল ম্যারাডোনার মুঠোবন্দি।

ম্যারাডোনা বলেওছিলেন কখনো সময় পেলে বাংলাদেশে আসবেন। কিন্তু তার আর বাংলাদেশে আসা হলো না। বাংলাদেশের মানুষ ম্যারাডোনাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে যখন ‘ষড়যন্ত্র করে’ ম্যারাডোনাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তখন ম্যারাডোনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষও কেঁদেছে। ক্ষোভে-দুঃখে রাস্তায় বেরিয়ে গিয়েছিল ফুটবলপাগল মানুষগুলো। প্রিয় ফুটবলারের সেই কান্নার কথা আজও ভোলেনি বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা।

ম্যারাডোনা হয়তো কোনো দিন জানবেনও না তার কত কোটি ভক্ত আছে বাংলাদেশে। তার জন্য কত ভালোবাসা জমে আছে বাংলাদেশিদের মনে। ভক্তদের অকুণ্ঠ ভালোবাসার মধ্যে আজীবন বেঁচে থাকবেন ফুটবলের এই মহানায়ক দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা।

Translate »