Type to search

বাংলাদেশ বিনোদন

ভারতীয় চ্যানেল প্রচার নিয়ে দেশিয় অপরাটেরদের বিবাদ অপ্রত্যাশিত : শাহাদাত হোসেন মুন্না

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরামের মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন মুন্না তাঁর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতীয় চ্যানেল নিয়ে দেশিয় ক্যাবল অপারেটরদের বিভক্তি অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্খিত।

ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (পরিচালনা ও লাইসেন্সিং) এর বিধিমালা-২০০৬ এর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিধিমালার ৫.৫ ধারা (১২) য় বলা হয়েছে, কোন ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকার অনুমোদিত চ্যানেল ব্যতীত নিজস্ব কোনো অনুষ্ঠান যেমন- বিজ্ঞাপন, ভিডিও, ভিসিডি প্রভৃতির মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়ে কোনো চ্যানেল বাংলাদেশে বিপণন, সঞ্চালন ও সম্প্রচার করতে পারবে না। কিন্তু এর তোয়াক্কা করছেন না দেশীয় অপারেটররা। এতে দেশীয় চ্যানেলগুলোর অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে, মান ও রুচিহীন অনুষ্ঠান, বিজ্ঞাপন। এসব অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন অামাদের স্বাধীনতা-স্বর্বভৌমত্ব এবং সামাজিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্থ করছে।

অননুমোদিত বিদেশি চ্যানেল, নিজস্ব অনুষ্ঠান, প্রচারিত বিজ্ঞাপনের মান ও উদ্দেশ্য যাচাই বাছাই করা যাচ্ছে না বা মান রক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে একধরণের নিয়ন্ত্রণহীনতার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু অনেক ব্যাক্তি ও গোষ্ঠি। এতে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি সভ্যতা সংস্কৃতির জন্য এক বিরাট ভয়াবহ হুমকি সৃষ্টি হয়েছে!

অথচ অনুমোদনহীন চ্যানেল বা অন্য কোন কন্টেন্ট প্রদর্শন না করার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করেই ক্যাবল টিভি অপরেটের অনুমতি নিয়েছেন অামাদের দেশের অপারেটররা।

বাংলাদেশ ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন মুন্না তার বিবৃতিতে অারও বলেন, আমাদের অান্দোলনের ফলে সরকারের পক্ষ থেকে দেশীয় চ্যানেলগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাইম ব্যান্ডে দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু অনেক অপারেটর তা মানছেন না।

বিদেশি অনেক অনুমোদনহীন চ্যানেল প্রতিযোগিতা করে চালাচ্ছেন দেশিয় অপারেটররা। ফলে দেশিয় চ্যানেলগুলো দর্শকদের কাছাকাছি পৌছাতে পারছে না। এতে আমাদের চ্যানেলগুলো তাদের অবস্থান হারাচ্ছে। বলতে গেলে দেশিয় চ্যানেলগুলোকে অসম প্রতিযোগিতায় ফেলে দিচ্ছেন ক্যাবল অপারেটররা।

বিদেশি অনেক চ্যানেল বাংলাদেশে প্রদর্শন করা হচ্ছে আমাদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সেসবের কোন মিল নেই। বরং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী। এতে দর্শকরা আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ধারায় নিজেদের বিকাশ না করে অপ-সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকবার প্রয়াস পাচ্ছে। এরই মধ্যে অামাদের সমাজে এধরণের অপসংকৃতি বিকাশের মাধ্যমে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। অাজকের সমাজে বহুবিবাহ, পরকীয়া, ধর্ষণ, মাদকাসক্তি, সংঘাত-সংঘর্ষসহ অনেক প্রবণতার সংস্কৃতি ভিনদেশি অপসংস্কৃতিরই প্রভাব বলে অনেকে মনে করেন। অার এসব অামদানির দায়ে অভিযুক্ত কিন্তু ক্যাবল টিভি অপারেটররা।
মুন্না মনে করেন, এই দায়ভার থেকে মুক্তি জরুরি। সেজন্য সরকার ও ক্যাবল অপারেটরদেরকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

মুন্না তাঁর বিবৃতিতে বলেন, ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে, ভারতে অন্য দেশের চ্যানেল ডাউনলিংক করতে হলে প্রথম ডাউনলিংকের জন্য ৫ কোটি রুপি, সঙ্গে ডাউনলিংকের অনুমতি মঞ্জুরের সময় ১০ লাখ রুপি এবং ডাউনলিংকের জন্য বার্ষিক ফি হিসেবে ১৫ লাখ রুপি প্রতি চ্যানেলকে দিতে হবে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল মাত্র তিন লাখ টাকার টোকেন মানি দিয়ে চালু করা যায়। এছাড়াও বেশিরভাগ ভারতীয় চ্যানেল ‘ফ্রি টু এয়ার’ (বিনামূল্যের) হওয়ায় সব চ্যানেল সম্প্রচার করা অত্যন্ত সুবিধাজনক। বাংলাদেশে ৫০টিরও বেশি ভারতীয় চ্যানেল নির্বিঘে সম্প্রচার হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে দিচ্ছে। ক্যাবল অপারেটরদের দ্বন্দ্বের কারণে দর্শকদের জিম্মি করা যাবে না। তবে আমাদের সমাজ সৃংস্কৃতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলে এবং অনুমোদন বিহীন চ্যানেল এখনই বন্ধের দাবী জানাই।

মুন্না বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের টিভি স্টেশনগুলোর অনুষ্ঠানের মান ধরন, কম্পোজিশন আন্তর্জাতিক মানের। ভারতে যদি বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো তিন লাখ রুপিতে ডাউনলিংক করা যেতো তাহলে বিজ্ঞাপনদাতাদের ভারতীয় চ্যানেলে অধিকমূল্যে বিজ্ঞাপন দিতে হতো না। বাংলাদেশি চ্যানেলেই তারা আরও বেশি করে বিজ্ঞাপন দিতে পারতো। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়ার সঙ্গে দেশীয় চ্যানেলগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হতো। দেশীয় মিডিয়া শিল্প আরও বিকশিত হত।
মুন্না বলেন, সারাদেশের সকল টিভি মালিক, দর্শক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, মন্ত্রী, এমপিরা বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আওয়াজ তুলে এসেছেন। কিন্তু ক্যাবল অপারেটররা বিষয়টি মাথাতেই আনছেন না। সরকারও চায় আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন হোক।

মুন্না মনে করেন, সম্ভাবনায় দেশীয় মিডিয়া শিল্পকে দেশ এবং বিদেশে উচ্চকিত করতে হবে। এজন্য সরকারকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। পে চ্যানেলের মাধ্যমে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে চলে যাচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশের কোটি কোটি টিভি দর্শকদের ভালো-মন্দ জানানোর জন্য হেলপলাইন চালুর কথা আমরা বলে আসছি, কিন্তু সরকারের ভ্রক্ষেপ নেই। দেশ-বিদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন এবং অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন সেন্সর করার জন্য টেলিভিশন সেন্সর বোর্ড গঠন করা প্রয়োজন।

বিবৃতিতে মুন্না বলেন, কোনো চ্যানেল ১০ মিনিটের বেশি একনাগাড়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা চাই গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট ফি নেয়া হোক। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা শহর, পৌর শহর, ইউনিয়নের জন্য আলাদা আলাদা ফি র্নিধারণ করে তা টিভি চ্যানেলগুলোর স্ক্রলে দেয়া হোক। ক্যাবল অপারেটররা সংযোগের সময় জামানত ও তার ক্রয়ের নামে এককালিন অর্থ নেয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের যেভাবে শোষণ করছেন তা বন্ধ করতে হবে। এজন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

Translate »