করোনার মধ্যেই দেশে ডেঙ্গুরোগী বাড়ছে
করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেই দেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। গত কয়েক দিনে টানা বর্ষণে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের চেম্বারে যাচ্ছে।
জানা গেছে, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪৬ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ছয়জন ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি মাসে হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২১ জনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তির পর এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ সময়ে নতুন করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি নগরবাসীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুজন এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সাতজন। এ নিয়ে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে বিজিবি সদর দফতর হাসপাতালে তিনজন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে দুজন এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ২০ জন চিকিৎসাধীন। ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন ও সেপ্টেম্বর মাসে ৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। প্রাথমিকভাবে সব ভাইরাসজনিত রোগের উপসর্গ শুরু হয় জ্বর দিয়ে। সবগুলোতেই জ্বর, শরীরব্যথা বা শরীর ম্যাজম্যাজ, অরুচি, বমিভাব, বমি, ক্লান্তি হতে পারে। ডেঙ্গুর উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে র্যাশ।
তবে প্রতিবছর ডেঙ্গুর ধরন খানিকটা পাল্টায়। ফলে কাশি হওয়াও বিচিত্র নয়। বমি, ডায়রিয়াও হতে পারে। তবে করোনা ও ডেঙ্গু- উভয় রোগেই চোখ লাল হতে পারে। কাজেই জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর উঠলে সতর্কভাবে উপসর্গগুলো লক্ষ্য করুন ও চিকিৎসককে বিস্তারিত জানান। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর এ মৌসুমে জ্বর হলে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষারও পরামর্শ দিচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর যে কারণেই আসুক, প্রথমে বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিতে পারবেন। করোনা বা ডেঙ্গুর মৃদু উপসর্গ থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। তবে জ্বর আসামাত্র বাড়ির সবার থেকে আলাদা হয়ে যেতে হবে।
এ ছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। ডাবের পানি, বাড়িতে তৈরি ফলের রস, স্যুপ, তরল বেশি খেতে হবে। রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছুতেই কোনো ওষুধ খেতে নিষেধ করছেন চিকিৎসকরা।