Type to search

Lead Story আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ, চলছে লাভ-ক্ষতির হিসাব

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের কবলে পড়েছে পেঙ্গুইন এবং সিল। পৃথিবীর প্রায় শেষ প্রান্তে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপপুঞ্জ এবং হার্ড দ্বীপ। কাগজে কলমে এর মালিক অস্ট্রেলিয়া। তবে সেটি জনমানবহীন এবং বরফে ঢাকা। এই দুই স্থানের ওপরও শুল্ক চাপিয়েছেন। ট্রাম্প। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এই শুল্কটা দেবে কে?। এটা নিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হলেও বিশ্বের অনেক দেশই ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে ব্যাপক চাপে পড়েছে। তবে এ থেকে যুক্তরাষ্ট্র লাভবানও হতে পারে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। কমতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ।

কেন শুল্ক আরোপ করছেন ট্রাম্প 
শুল্ক হলো অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ধার্য কর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৫ এপ্রিল (গত শনিবার) থেকে সব আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুদ্ধ এবং ৯ এপ্রিল থেকে প্রায় ৬০টি দেশের ওপর আরো বড় ধরনের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, এই পদক্ষেপগুলো অন্যায্য বাণিজ্যনীতির প্রতিশোধ হিসেবে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি দাবি করেছেন, এমন সিদ্ধস্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট দয়া দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। ট্রাম্প বুধবার এই মন্তব্যও করেছেন যে, এই পদক্ষেপ আমেরিকাকে আবারও ধনী করে তুলবে। তার মতে, অন্ধ থেকে আয়কৃত অর্থ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল আকারের ঋণ পরিশোধ করা সহজ হবে। ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক থেকে প্রাপ্ত কর সংগ্রহও শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের লাভ-ক্ষতি 
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ফক্স নিউজ জানায়, ট্রাম্পের বিদেশি পণ্যে শুল্ক আরোপের পর সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করছে চিংড়ি ও কটন ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করছেন, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের তুল এবং চিংড়ি ব্যবসায় মুনাফা বাড়বে। কারণ বিদেশি পণ্য কম আসবে। এর ফলে মানুষ দেশি পণ্য কিনতে আগ্রহ দেখাবে। গাড়ির দাম বাড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক ইউনিয়ন বলছে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের বেকারত্বের হার কমবে। লাভবান হবে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টিল খাত। এর ফলে দেশীয় স্টিলের চাহিদা বাড়বে এবং কর্মসংস্থানও বাড়বে। শুল্ক আরোপের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। ‘প্রথমত, আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ অবৈধভাবে প্রবেশ করছে। দ্বিতীয়ত, ফেন্টানাইলের মতো বিপজ্জনক মাদক আমাদের দেশে আসছে। তৃতীয়ত, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যগুলোর ওপর মার্কিন সরকার যে ভর্তুকি দেয়, তা বন্ধ করা প্রয়োজন।’ ট্রাম্প বলছেন, এসব বন্ধ হবে শুল্ক আরোপের ফলে। ট্রাম্পের শুদ্ধ নীতির প্রশংসা করে দরা ট্রাম্প বলেছেন, এই নীতির জন্য ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের পায়ে চুমু খাওয়া উচিত।

শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতির কারণও হতে পারে। মার্কিন অর্থনৈতিক সংস্থা জে পি মরগান। আমেরিকায় মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছে। জে পি মরগানের প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল ফেরোলি জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে আমেরিকার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি সংকুচিত হতে পারে। যদি আমেরিকায় মন্দা হয় তাহলে তার প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। সারা বিশ্বে মন্দার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ বলে জানিয়েছে জে পি মরগান।

ফেরোলি জানান, গত বছর আমেরিকার জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বছরে আমরা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি আশা করা যাচ্ছে না। সংবাদমাধ্যম দ্য ছিল জানিয়েছে, আমেরিকায় বেকারত্ব বৃদ্ধির পূর্বাভাসও দিয়ে ফেরোলি জানিয়েছেন, চলতি বছরে অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হলে আমেরিকায় বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে পৌছে যেতে পারে। ট্রাম্পের শুষ্ক সংক্রান্ত ঘোষণার পরেই আমেরিকা তথা বিশ্বের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। আমেরিকার শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। গত ১১ মাসে এই পরিমাণ ধস যেখানে দেখা যায়নি। মাত্র দুই ধাপে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি বাজারমূল্য নষ্ট হয়েছে। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে আসবাব থেকে জুতা, কফি থেকে গাড়ি সবকিছুর জন্যই লাইন দেখা গেছে। সবার লক্ষ্য, শুল্ক কার্যকর হওয়ার অগ্রগই অনেক কিছু কিনে ফেলা। মূলত ইলেকট্রনিকসামগ্রী হোক বা গৃহস্থালির সামগ্রী যথা ডিশওয়াশার ও মাইক্রোওয়েভএবং গাড়ি, আসবাব, জুতা, ছোটদের ডায়াপার, খেলনা, শিশুদের জামাকাপড় সবকিছুরই চাহিদা তুঙ্গে।

চাপে বিশ্ববাণিজ্য 

গত ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একযোগে ১৬০টি দেশের পণ্যে পারস্পরিক শুন্য আরোপের ঘোষণা দেন। তালিকায় বাংলাদেশ থেকে শুরু করে আছে আফ্রিকার দেশ লেসোথোও। সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার ওপর ৪৪ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে। বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি ডলারের বস্ত্র আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র, যার ২১ শতাংশই চীনা পণ্য। এরপরই তালিকায় ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের পর অবস্থান ভারতের। আরো একধাপ পিছিয়ে শ্রীলয়া।

ওয়াশিংটনের আমদানি শুল্ক আরোগে তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত দাম গুলতে হবে মার্কিন ভোক্তাদের। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি পণ্যের বেচাকেনা কমবে, ফলে কমবে আমদানিও। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন বস্ত্র ও তৈরি পোশাকের বাজারে ভারতের অবস্থান শক্ত হবে বলে আশাবাদী ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। একদিকে, মার্কিন আমদানি শুল্কের সবচেয়ে বড় শিকার চীন। অন্যদিকে, চীনের দিক থেকেও আগেই এক দফা সম্পূরক শুল্প আরোপের জেরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা কিনতেও অতিরিক্ত খরচ গুণতে হবে চীনা আমদানিকারকদের। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে টেরাটাইল পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা চীনের জায়গা দখল করবে কোন দেশ, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে। ট্রাম্পের শুক্কানীতিতে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো। জাতিসংঘ বলছে, মূলত দুর্বল দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

-ফক্স নিউজ

Translate »