Type to search

জাতীয় বাংলাদেশ

বিতর্কের খাতা খুললেন উপদেষ্টা ফারুকী

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কোনো রকম কাগজপত্র ছাড়াই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে টাকা চাইতেন ফারুকী। এ রকম অনৈতিক আবদার মেটাতে মোটেও রাজি ছিলেন না প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক। এ কারণেই সৈয়দ জামিল আহমেদ স্বেচ্ছায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়েন। এ পটভূমিতে উপদেষ্টা ফারুকী দাবি করেছেন, মহাপরিচালকের অভিযোগ সত্য নয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাসের মাথায় এই প্রথম কোনো উপদেষ্টার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠল।

গেল শুক্রবার সন্ধ্যায় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ জামিল আহমেদ আচকা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে উপস্থিত সবাইকে চমকে দেন। তিনি মঞ্চে থাকাকালে শিল্পকলার সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যে সরাসরি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘অযাচিত হস্তক্ষেপের’ অভিযোগও তোলেন। সৈয়দ জামিলের পদত্যাগের ঘটনায় গতকাল শনিবার নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, উপদেষ্টা কেন টাকা চাইলেন, তা তদন্ত করতে হবে।

মহাপরিচালকের অভিযোগ
শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে পদত্যাগের ঘোষণার পর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপস্থিত ভক্ত-অনুরাগীরা সৈয়দ জামিল আহমেদকে ঘিরে ধরেন। এ সময় কে টাকা চেয়েছেন জানতে চাইলে জামিল আহমেদ সরাসরিই বলেন, ‘উপদেষ্টা’।

তিনি বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ দিন আগে সে (উপদেষ্টা ফারুকী) আমার কাছে চেক চায়। কোনো রকম চিঠি ছাড়া। শিল্পকলা একাডেমি থেকে তাঁকে টাকা দিতে হবে। কারণ তাঁর খুব দরকার। সে একটা প্রজেক্ট করছে। আমি বলছি না সে টাকা নিয়ে উল্টাপাল্টা করছে। সে  চিঠি ছাড়া কেমন করে টাকা চায়?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন বলেছি, না আমাকে চিঠি দেন। চিঠি ছাড়া কোনো টাকা দেব না। সে তখন আমাকে বলে, ‘আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করেছি অনেক, আর করব না।’

এ সময় শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনা পরিষদের সদস্য সামিনা লুৎফা নিত্রা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তখন সৈয়দ জামিল চারটি শর্ত দেন। প্রথম শর্ত– মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলা একাডেমির কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না। এটা সংবাদ সম্মেলন করে বলতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত– শিল্পকলাকে একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে দিতে হবে। যদি শিল্পকলা আইনগত সমস্যা করে, তবে পরামর্শ দেবে। কিন্তু হস্তক্ষেপ করবে না। তৃতীয় শর্ত– শিল্পকলায় মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ‘ফোকাল পয়েন্ট’ থাকবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে। চতুর্থ শর্ত– ‘আদিবাসী’ বলার অধিকার চেয়েছেন সৈয়দ জামিল। এ ছাড়া শিল্পকলার কাজের জন্য তিনি ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন, যার চিঠি দিতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে।

সমকালের ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মঞ্চে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নিচে নামলে সৈয়দ জামিলকে সবাই ঘিরে ধরেন। তখন তিনি অভিযোগ করেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলাকে অধীন করে রাখতে চায়। শিল্পকলা যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান– তারা সেটা মানতে চায় না।’ সৈয়দ জামিল বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় বলেছিলাম, শিল্পকলার কাজে সচিবালয় থেকে যেন হস্তক্ষেপ না করে। আসিফ নজরুল সাহেব থাকার সময় করেননি। কিন্তু ইদানীং ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ হচ্ছে। আমি এ জন্য এটা সঠিক সময় মনে করি, আর মনে হয় ভবিষ্যতে কাজ করা সম্ভব হবে না এখানে। আমার পদত্যাগপত্র আপনাদের সামনে হস্তান্তর করছি আমাদের সচিবের কাছে।’

ওই অনুষ্ঠানেই শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন বলেন, ‘আমরা এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিনি।’

এ ঘটনা ধারণের সময় সেখানে থাকা একজন সমকালের সাংবাদিককে ভিডিও করতে নিষেধ করেন। তখন সৈয়দ জামিল বলেন, ‘ভিডিও করা হোক। আমার কাছে লুকোছাপা কিছু নেই। শিল্পকলায় আমাকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এখানে কাজ করতে পারছি না।’

পরিষদের সভার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত পরিষদে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার রেজল্যুশনই অনুমোদিত হয়ে আসতে পাঁচ সপ্তাহ সময় নিয়েছে মন্ত্রণালয়। শিল্পকলায় তিন মাস পরপর পরিষদের সভা করার নিয়ম। পরবর্তী সভা কবে করা যাবে, আমি জানি না।’

সৈয়দ জামিল সবার সামনেই মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হস্তক্ষেপের কিছু নমুনা তুলে ধরেন। শিল্পকলাকে মন্ত্রণালয়ের অধীন ভাবার ‘আমলাতান্ত্রিক’ মনোভাবের বিষয়েও সমালোচনা করেন জামিল।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘তারা কেউ কেউ এখানে (শিল্পকলা) টাকা দিতে এমন মনোভাব দেখান, যেন মনে হয় তারা ভিক্ষা দিচ্ছেন। অথচ জনগণের টাকা এখানে দিচ্ছেন শিল্পকলাকে, কারও ব্যক্তিগত টাকা নয়।’ আইন অনুযায়ী শিল্পকলা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও মন্ত্রণালয় থেকে তা মানা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন জামিল আহমেদ।

সৈয়দ জামিলের বিবৃতি
শুক্রবার রাতে একটি বিবৃতি দেন সৈয়দ জামিল। এতে তিনি পদত্যাগের কারণ হিসেবে উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার জটিলতা, একাডেমির সচিবকে ‘ফোকাল পারসন’ হিসেবে মনোনীত করে মহাপরিচালকের বিধিসম্মত দায়িত্ব পালনে বাধা, বাজেট কেটে দেওয়া, শিল্পকলার ভেতর থেকে নথি গায়েব করা, একাডেমির ভেতরে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে প্ররোচিত করে কাজের পরিবেশ ব্যাহত করা এবং দুর্নীতিবাজ চক্রের নানা অপতৎপরতার কথা জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি গত ৯ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব নিই। উল্লেখ্য,  শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে আমাকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৎকালীন সংস্কৃতি উপদেষ্টার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে, আমি বলেছিলাম, ‘শিল্পকলা একাডেমি আইন অনুযায়ী একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে। আমি একাডেমির ভিশন ও মিশন সংবলিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। তৎকালীন উপদেষ্টা ও সচিবালয়ের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার প্রস্তাব ও কর্মপরিকল্পনায় তখন সম্মত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, তাদের সম্মতি ও প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই আমি দায়িত্ব নিতে সম্মত হই। তবে উপদেষ্টা বদলের পর থেকে আমার সব বিধিসম্মত কাজে নীতিবহির্ভূত পদ্ধতিতে বারংবার হস্তক্ষেপ শুরু হয়। একাডেমির সব কর্মকাণ্ড উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্লথ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়।

সৈয়দ জামিল বলেন, একটি ভিডিও নির্মাণের জন্য লিখিত চিঠিপত্র ছাড়া উপদেষ্টার পক্ষ থেকে টাকার জন্য চাপ দেওয়া হলে আমি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। বর্তমানে একাডেমির ভেতরে বিভেদ সৃষ্টির হীন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করছি। এ অবস্থায় চারদিকে ঘিরে থাকা চক্রের সঙ্গে আপস করে আমার পক্ষে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় বিধায় আমি পদত্যাগ করেছি।

‘সৈয়দ জামিলের অনেক কথা ডাহা মিথ্যা’
এদিকে, গতকাল দুপুরে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সৈয়দ জামিল আহমেদের অনেক অভিযোগ ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ফারুকী লিখেছেন, ‘এইটুকু আপাতত বলে রাখি, উনার বলা অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে। আমার বিস্তারিত লেখা হয়তো উনাকে বিব্রত করতে পারে। কিন্তু আমাকে আপনি এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন, যেখানে আমাকে বিব্রতকর হলেও সত্য বলতে হবে, জামিল ভাই।’ সংস্কৃতি উপদেষ্টা মন্ত্রণালয় ও তাঁর নিজের বক্তব্য পুরোপুরি উপস্থাপনের জন্য কিছুটা সময় চেয়েছেন।

শিল্পকলা একাডেমি পরিচালনায় মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি উল্লেখ করে ফারুকী বলেন, ‘ভালো শিল্পী হওয়া আর আমলাতন্ত্রকে কনফিডেন্সে নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো দুইটা দুই রকম আর্ট। দ্বিতীয় কাজটা করবার জন্য লাগে ধৈর্য এবং ম্যানেজারিয়াল ক্যাপাসিটি। কলিগদের বুলিং না করে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা দিয়ে অনেক কাজ আদায় করে নেওয়া যায়। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে যে কম্পোজার লাগে, সেটার সাথে কোনো একটা থিয়েটার দলে নির্দেশনা দেওয়ার টেমপারামেন্ট এক না। আমার ফিল্ম ইউনিটে আমি যা করতে পারি, একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমি তা করতে পারি না।’ স্ট্যাটাসে তিনি জামিল আহমেদের পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ছাড়া মহাপরিচালক পদে থাকতে জামিল আহমেদের দেওয়া চারটি শর্তের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

এদিকে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী গতকাল রাতে সমকালকে বলেন, ‘জামিল আহমেদের অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। তার বক্তব্যের বিষয়ে রোববার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বিবৃতি দেওয়া হবে।’ পদত্যাগপত্র গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, পদত্যাগপত্র এখনও মন্ত্রণালয়ে আসেনি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

উপদেষ্টার স্ট্যাটাসের পর বিকেলে তাঁর পক্ষে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ফারুকীর পক্ষে পোস্ট দেন নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী। এতে তিনি লেখেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যেই বাজেট মিটিং হয়েছিল, সেই মিটিংয়ে অন্যান্য দপ্তরপ্রধানদের মতো আমি এবং জামিল ভাই দুজনই ছিলাম। শুরুতেই অর্থ সচিব দেশের নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বাজেট সংকোচনের কথা বিনয়ের সাথে আমাদেরকে জানিয়েছিলেন। তার পরও তিনি আমাদের সবার দাবি-দাওয়াই কম-বেশি মেনে নিয়েছেন। আমরা সবাই হাসিমুখেই সে মিটিং থেকে বেরিয়েছিলাম। জামিল ভাই তার রেগুলার বাজেটের চাইতে কিছু বেশি টাকা চেয়েছিলেন, যার অঙ্কটা প্রায় ২০০ কোটি। মূলত সেই টাকাটা তিনি চেয়েছিলেন শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো সংস্কারের জন্য। একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে দপ্তরপ্রধান হিসেবে জামিল ভাইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিটিংয়ে বসা হয়। মিটিংয়ে তার এগ্রেসিভনেস এবং কর্তৃত্বপরায়ণতাকে আমি মুগ্ধতার চোখে দেখলেও বাংলাদেশের সরকারের সাথে কাজ করার পক্ষে তা বড়ই বেমানান লাগত।’

জামিল আহমেদের অভিযোগগুলো অত্যন্ত শিশুসুলভ উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘একটা কথা আমি স্পষ্টভাবে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই– আমি আমার প্রতিষ্ঠানের হয়ে যা কিছু কল্যাণকর করতে চাচ্ছি, তা অত্যন্ত স্বাধীনভাবেই করতে পারছি। আমার কাজে কেউই কোনো অযাচিত হস্তক্ষেপ করে না। উপদেষ্টা এবং মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে যেমনটি জামিল ভাই অভিযোগ করেছেন, সেটা প্রমাণ দাখিল ছাড়া সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিল্পকলা একাডেমির এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের খপ্পরে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি প্রশাসনিক সংস্কার করতে চাইলেও সেটা সম্ভব হয়নি। দোসররা মহাপরিচালককে দিয়ে ফাইলপত্রে সই করিয়ে নিত। গত মাসে তারা একটা বড় অঙ্কের অনিয়ম করেছে। যদিও জামিল আহমেদ এতে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু তিনি আর কিছুদিন পদে থাকলে হয়তো ফেঁসে যেতেন। সেটা বুঝতে পেরে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে, গতকাল বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ সম্মেলনে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদত্যাগ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এ ব্যাপারে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। পদত্যাগের বিষয়টিও মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত বিষয়। এ প্রসঙ্গে এর বাইরে প্রেস উইংয়ের কোনো বক্তব্য নেই।

বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কী বলছেন
দেশে এক ধরনের সংকট চলছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজিদ বলেন, ‘সৈয়দ জামিল আহমেদ নাটকের মানুষ। আমরা চাই তাঁর মাধ্যমে  বাংলাদেশ শিল্পকলার কাজ সুন্দরভাবে চলমান থাকুক। তিনি কেন রিজাইন করেছেন, এ বিষয়ে কনফিউজড। তবে এটি দুঃখজনক ঘটনা। তিনি শিল্পের মানুষ। সংশোধন করা যায় না– এমন কিছু নেই। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বসে আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর একটা সমাধানে পৌঁছাবে। সংস্কৃতিকে বিকাশমান করতে হলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলাকে একযোগে কাজ করতে হবে ’

নাট্যকার মাসুম রেজা বলেন, ‘সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ছোট্ট একটি স্ট্যাটাসে তাঁর দিক থেকে ডিফেন্ট করার চেষ্টা করেছেন। বিষয়টি এখন পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের শিল্পকলা ও থিয়েটারের জন্য যেটি ভালো হবে, সবশেষ আমি সেটাকে সমর্থন করব। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ইতোমধ্যে চারটি শর্ত দিয়েছেন। বলেছেন, শর্ত পূরণ হলে তিনি পদত্যাগের বিষয়ে ভেবে দেখবেন। এখনও এ বিষয়ে তো কিছু এগোয়নি। ফলে আগ বাড়িয়ে কিছু বলা মুশকিল।’

নাট্যদল বটতলার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ও ‘বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মী’ গ্রুপের সদস্য মোহাম্মদ আলী হায়দার বলেন, ‘তিনি শিল্পকলা একাডেমিকে সচল করে ফেলেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছিল না বলে পদত্যাগ করেছেন। জামিল আহমেদের মতো মানুষকে এই জায়গায় দরকার। তাঁর পদত্যাগপত্র সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে গ্রহণ না করলে নাট্যাঙ্গনের জন্য ভালো হয়। যদি টাকাপয়সা দাবি করা হয়, তাহলে সংস্কৃতি উপদেষ্টার পদে থাকার কোনো যোগ্যতা থাকে না। সংস্কৃতি উপদেষ্টা কেন শিল্পকলার ডিজির কাছে টাকা চাইলেন, তার তদন্ত হওয়া দরকার। সংস্কৃতি কর্মীরা জোরালোভাবে এটি জানতে চায়। এর ব্যাখ্যা আশা করছি, সংস্কৃতি উপদেষ্টা দেবেন।’

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কর্মী সংঘের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জামিল আহমেদের দূরত্ব বাড়ছিল অনেক আগে থেকেই। সমন্বয়হীনতা থেকেই এটি হয়েছে বলে মনে করি। চার শর্ত দিয়ে তিনি তাঁর আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছেন। অনেক পরিকল্পনা করেছেন শিল্পকলার জন্য। জামিল আহমেদ যদি নিজে থেকে বিবেচনা করেন কিংবা মন্ত্রণালয় থেকে সমাধান করা হয়, তাহলে সবকিছু ঠাক হয়ে যাবে।’

মন্ত্রণালয় ও একাডেমির সভা আজ
শিল্পকলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, আজ রোববার শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও পরিচালকদের সঙ্গে সভা করবেন উপদেষ্টা ফারুকী ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব। আগামী আট দিন পর্যন্ত একাডেমির স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। এরপর বাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জামিল আহমেদ শিল্পকলা একাডেমির সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি ছুটি থাকায় আজ পদত্যাগপত্রটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে। এরপর যাবে জনপ্রশাসনে।

শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন বলেন, ‘আমি শিল্পকলার সচিব হিসেবে এটা শুধু হাতে নিয়েছি। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি।’

-সমকাল

Translate »