বিএসএফকে শিশু স্বর্ণা বলেছিল, ‘আমাদের মেরো না আইনের আশ্রয়ে নিয়ে নাও’
কুলাউড়ার লালারচক সীমান্তের পাশে জলাশয়ে পৌঁছামাত্র হঠাৎ বিএসএফকে দেখে স্বর্ণা আতঙ্কিত হয়ে বলে ‘আমাদের মেরো না আইনের আশ্রয়ে নিয়ে নাও’। বাংলায় বলা কথাগুলোর প্রতি উত্তরের বদলে বিএসএফের বুলেটে বুক ঝাঁজরা হয়। বিএসএফের বন্দুক তাক করানো দেখে স্বর্ণা ঘুরে যায়। পেছন দিকের গুলিটা বুকের ডানপাশ দিয়ে ওপাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। তখনই স্বর্ণা বলে, ‘মা হাতটা ছেড়ে দাও, আমি আর বাঁচবো না’। তোমার প্রাণ রক্ষা করো। স্বর্ণার ভাই পিন্টু দাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে মানবজমিনকে এসব কথা জানায়। মায়ের জ্ঞান ফেরার পর তার কাছ থেকে এ হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনা শুনেছে পিন্টু। জুড়ী উপজেলার কালনীগড় গ্রাম এখন শোকস্তব্ধ। শান্ত এই জনপদ শোকে কাতর।
এই গ্রামেরই কিশোরী স্বর্ণা দাস চলে গেছে পরপারে। সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে বিএসএফের বুলেটের আঘাতে প্রাণ গেছে স্বর্ণার। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের নির্মমতার বলি স্বর্ণার পরিবারে থামছে না কান্না। বাবা পরেন্দ্র দাস ও মা সঞ্জিতা রানী দাস বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে স্বর্ণা ছিল ছোট। পড়ালেখায় ছিল মেধাবী। পুরো স্কুল মাতিয়ে রাখতো। সহপাঠীরা অকালে স্বর্ণাকে হারানোর শোকে মুহ্যমান। নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণা মায়ের সঙ্গে গত ১লা সেপ্টেম্বর রোববার রাতে কুলাউড়ার শরিফপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত দিয়ে ভারত যেতে চেয়েছিল। ত্রিপুরা রাজ্যের শনিচড়া গ্রামে তার মামার বাড়ি। স্বর্ণার এক ভাই মামা কার্তিক দাসের পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে আছে। ভাইকে দেখা ও মামার বাড়ি বেড়ানো অধরাই রয়ে গেল স্বর্ণার। স্বর্ণা দাসের বাবা পরেন্দ্র দাস বলেন, রোববার সকালে মা ও মেয়ে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। সোমবার সকালে স্বর্ণার মামার বাড়িতে যোগাযোগ করে জানতে পারি তারা যায়নি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক সেনা কর্মকর্তার সহযোগিতায় শমশেরনগর থেকে স্বর্ণার মাকে উদ্ধার করি। পরদিন সোমবার বিকালে বিজিবি’র মাধ্যমে আমার মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই। স্বর্ণার মা সঞ্জিতা রানী দাস বলেন, সীমান্ত এলাকায় আমি ও আমার মেয়ে দালালদের খপ্পরে পড়ে যাই। তারা চট্টগ্রামের আরও একটি পরিবারের সঙ্গে আমাদেরকেও ভারতে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করে। সীমান্তের কাছে গেলেই হঠাৎ গুলির আওয়াজ শুনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। নির্দয় বিএসএফের গুলিতে আমার মেয়ের শরীর ঝাঁজরা হয়ে গেছে। এ কথা বলেই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন সঞ্জিতা রানী দাস।