প্যারেন্টিং অভিভাবকের দায়িত্ব
আবহমানকালের চিরাচরিত প্রথা হলো—সন্তান লালনপালনে মায়ের ভূমিকাই মুখ্য। সময়ের ব্যবধানে নারী ও পুরুষ উভয়ে এখন কর্মমুখী ও অফিস-আদালত নিয়ে ব্যস্ত। এক্ষেত্রে সন্তান লালনপালনের গুরুদায়িত্বটি হয়তো পালন করছেন তাদের নানা-নানি, দাদা-দাদি অথবা অন্য যে কেউ।
আজ অনেকের পক্ষে সন্তানের দেখভাল করার সময়-সুযোগ হয়ে উঠছে না। ফলে আমাদের অবহেলা-অনাদরে অকাতরে বখে যাচ্ছে আমাদের আদরের ছেলেমেয়ে। তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারা সঠিক পরিচর্যায় বেড়ে উঠছে না। অনেক সময় কাজের বুয়া বা বেবিকেয়ারের তত্ত্বাবধানে লালিতপালিত হওয়ার কারণে শিশুরা তাদের মতো আচার-আচরণ করতে শুরু করছে।
অনুমান করা যায়, কীভাবে আমাদের সন্তানেরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত্ প্রজন্ম! তবে ইসলাম সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রেও আমাদের দিয়েছে দিকনির্দেশনা। কুরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেরা বাঁচো। তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। (সুরা তাহরিম :০৬) হজরত আলি (রা.) এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, ‘তোমরা নিজেরা উত্তম জিনিস শেখো। তোমাদের পরিবার-পরিজনকে উত্তম জিনিস শিক্ষা দাও।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম :৩৮৬২)
উল্লিখিত আয়াত ও হাদিসের ব্যাখ্যা থেকে আমরা জানতে পারলাম, সন্তানকে ভালো ও উত্তম জিনিস শেখানো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এজন্য অভিভাবক হিসেবে আমাদের সন্তানের জন্য আদর্শ শিক্ষা ও তার নৈতিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করাও জরুরি।
সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা সাত বছর বয়সে সন্তানকে নামাজের আদেশ করো। ১০ বছর বয়সে নমাজ আদায় না করলে শাসন করো। এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, সন্তানের শিক্ষার বয়সটাও শৈশবে হওয়া উচিত। এজন্য শৈশবে সন্তানদের আদর্শ শিক্ষা, নীতি-নৈতিকতার জ্ঞান, বড়দের শ্রদ্ধা-সম্মান করা ইত্যাদি শেখানো কর্তব্য। অন্যথায় তারা বখে যেতে পারে।
সেই সঙ্গে দরকার পারিবারিক বন্ধন। সন্তানকে সময় দেওয়া। তার সঙ্গে কথা বলা, ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়াও সচেতন অভিভাবকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। অন্যথায় তারা ডিপ্রেশনে পড়ে। কিংবা হীনম্মন্যতায় ভোগে। এমনকি এজন্য বেছে নিতে পারে আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ পথও, যা ইদানীং খুব বেশি ঘটে চলেছে আমাদের এই সমাজে। এজন্য প্রত্যেক বাবা-মায়ের দায়িত্ব হলো সন্তানের সুশিক্ষা ও আদর্শ জীবনযাপন নিশ্চিত করা, যা সন্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকারও।
লেখক :খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর
-ইত্তেফাক