কেমন বাংলাদেশ চাই আমরা?
স্বপ্না গুলশান:
কোনো কিছুই তো চিরস্থায়ী না । মরার সময় তো বাপদাদা নিজের সব ফেলে যেতে হয় । তাইলে এই ক্ষমতায় টিকে থাকতে আপনাকে এত মরিয়া কেন হতে হবে তাইনা? ৯০ এর গণআন্দোলনে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পরে জনগণ ভেবেছিলএবার মনে হয় বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের চিরস্থায়ী সিস্টেম চালু হবে। কিন্তু তা হলোনা। ২০০৮ এ শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে নির্বাচন সেটা নির্মূল করে জনগণের ভোটের অধিকার নষ্ট করে দিলেন। তারপরে যেকটা নির্বাচন হয়েছে আওয়ামীলিগ ও শেখ হাসিনার লোকজন ছাড়া কেউ আর নিজেদের ভোট দিতে পারেনি। ক্ষমতা স্থায়ী করতে কেয়ার টেকার সরকারও পদ্ধতি নির্মূল করে দিলেন তিনি। যাতে ভোটে কারচুপি করে আজীবন ক্ষমতায় থাকা যায়।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণ সব ক্ষমতার মূল। তাতো নাই দেশে। আপনি নিজের ভোট নিজে দেয়ার অধিকার যেদিন থেকে হারিয়েছেব সেদিন থেকেই আপনি নিজের দেশে বাস করেও পরাধীন হয়ে গেলেন। কে আপনার দেশ চালাবে সে সিদ্ধান্ত আপনার। আপনার ট্যাক্সের টাকা কোথাই যাচ্ছে সেটা জানার অধিকার আপনার। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার আপনার আছে কিন্তু আপনি বলতে পারেননা। বলতে গেলেই আপনি বিএনপি, জামাত, রাজাকার , দেশদ্রোহী কত অপবাদ । সবশেষে আপনার ঠিকানা জেল আর রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন। তারপরে ও আপনাকে তাল মিলিয়ে বলতে হবে আপনি গণতান্ত্রিক দেশে বাস করছেন , নির্বাচনি সুষ্ঠু হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারও বার বার দরকার ইত্যাদি আরও কত গুণগান।
এই তেলবাজ দালাল গুলোই শেখ হাসিনাকে ডুবাইছে। এতকিছুর পরে ও উনি উনার ভুল টা বুঝতে পারছেননা। আপনারা এখনো নির্লজ্জ বেহায়ার মতো ধান্দাবাজ যে দালাল রাজনীতবিদ, উপদেষ্টা, সাংবাদিক গুলো উনাকে ১৬ বছর তেল মেরে মেরে ভুল পথে পরিচলিত করলেন তারা উনার ভুল গুলো অন্তত এই সময়ে বুঝিয়ে দিন। বিএনপি জামাত রাজাকার বলে জনগণ থেকে উনাকে বিছিন্ন করে দিলেন্, কত নিরীহ মানুষ খুন করালেন ওগুলো উনাকে বুঝিয়ে দিন । উনি এখনও বুঝতে পারছেননা উনার দোষটা আসলে কোথায়?
আমরা যারা উন্নত গণতাম্ত্রিক দেশগুলোতে বাস করি তাদের একটাই চাওয়া , আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে ও এসব দেশের মতো একটা সিস্টেম তৈরি হোক যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিযাতে নির্দিষ্ট মেয়াদে সরকার নির্বাচিত হবে। দেশের প্রতিটিও জনগণ তাদের ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার জন্য যোগ্য দল ও ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারবে। নির্ভয়ে সরকার নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করতে পারবে, দেশের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সিদ্ধান্তে জনগণের মতামতের গুরুত্ব দেয়া হবে।
সর্বোপরি এমন একটা সিস্টেম দাঁড় করাতে হবে যেখানে সরকার পরিবর্তন হলেও নিজেদের স্বার্থে নতুন সরকার যেন দেশ গণতন্ত্রের স্বার্থে তৈরি হওয়া বিদ্যমান সেই সিস্টেম ধ্বংস করতে না পারে। আমরা চাই অন্যসব গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশের জনগণই হোক সকল ক্ষমতার উৎস্।
আমরা আওয়ামীলীগ বুঝিনা, বিএনপি বুঝিনা, জামাত বুঝিনা, অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বুঝিনা। দেশ নিয়ে আমরা রাজনীতিও করিনা। আমাদের একটাই চাওয়া । সেটা হলো দেশটা হলো সর্বস্তরের জনগণের। তাই জনগণের চাওয়া পাওয়াকে সবার উপরে রেখে দেশটা পরিচালিত হোক। জনগণ যখন আপনাকে চাইবে আপনি ক্ষমতায় থাকুন। নানা অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জনগণ যখন আপনার পদত্যাগ চাইবে তখন পদত্যাগ করার মানসিকতা আপনার তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিচালনা করতে হলে আপনাকে আওয়ামীলীগ বা বিএনপির। প্রধামমন্ত্রী হলে হবেনা। আপনাকে হতে হবে গোটা জনগণের প্রধানমন্ত্রী। আপনাদের রাজনীতবিদদের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে ও অনেক সমর্থক আমাদের মতো পশ্চিমের উন্নত দেশে বাস করেন। তাদের কাছ থেকে অন্তত শিখুন সেখানকার গণতন্ত্র, জনগনের অধিকার, বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি সিম্পল বিষয়গুলো।
স্বপ্না গুলশান, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক, সম্পাদক অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ কমিউনিটি বার্তা।