বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ
ভারতে বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ কার্যকরের বিরুদ্ধে আসাম, তামিলনাড়ুসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে। এ আইনের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন বিরোধী দলগুলোর নেতারা। তাদের আশঙ্কা, সিএএ কার্যকর হলে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে শরণার্থীর ঢল নামতে পারে; প্রকট হতে পারে সংরক্ষিত জনজাতির ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত সংকট। তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শত শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ পরিস্থিতিতে রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে আবেদন করার জন্য গতকাল মঙ্গলবার একটি বিশেষ পোর্টালও চালু করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পোর্টালের পাশাপাশি তারা ‘সিএএ-২০১৯’ নামে একটি অ্যাপ শিগগিরই চালু করবে।
নতুন এ নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বললেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হাবড়ার প্রশাসনিক সভায় তিনি বলেন, ‘একটা কথা মন দিয়ে শুনে নিন! আপনারা কেউ নাগরিকত্বের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করবেন না। করলেই আপনাদের নাগরিকত্ব চলে যাবে। আপনাকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলবে। আপনার সম্পত্তি কেড়ে নেবে। ওই ফাঁদে খবরদার পা দেবেন না!’ এ আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, ‘ভোটের আগে বিজেপি বিভাজনের খেলা খেলতেই এটা করেছে। না হলে চার বছর বসে রইল কেন? তারা আবার বাংলাটাকে ভাগ করতে চায়। বাঙালিকে তাড়াতে চায়।’ তিনি বলেন, ২০১৯ সালে আসামে এনআরসির নামে ১৯ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৩ লাখই বাঙালি হিন্দু।
এর আগে সোমবার মমতা এ আইন তাঁর রাজ্যে কার্যকর হতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেন। সিএএ বিরোধিতার সুর উঠেছে কেরালায়ও। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও বলেছেন, তারা সিএএ বাস্তবায়িত হতে দেবেন না। একই সুরে কথা বলছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনও। তিনি বলেন, বিজেপি সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে যাচ্ছে। রাজ্যে এ কালো আইন কার্যকর করা হবে না।
সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সিএএ কার্যকরের ঘোষণা দেয়। এতে প্রথমবারের মতো ভারতের নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের ধর্মীয় পরিচয় দিতে হবে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, পার্শি, শিখ, জৈন ও খ্রিষ্টানরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়ে থাকলে দেশটির নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আইনটিতে মুসলিমদের কথা উল্লেখ নেই।
এ আইন কার্যকরের প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যায় গৌহাটির কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীরা সিএএ’র একটি নকল পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানায়। এ সময় শহরজুড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আসামের ১৬টি বিরোধী দলের জোট ইউওএফএ হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা রাজ্যজুড়ে বন্ধ (হরতাল) পালন করবে; ঘেরাও করা হবে জনতা ভবন। তারা দিনটিকে আসামের ইতিহাসে ‘কালো দিন’ বলেও অভিহিত করেছে। আসাম জাতীয় পরিষদের সভাপতি লুরিনজ্যোতি গগৈ বলেন, সর্বানন্দ সোনেওয়াল ও হিমন্ত বিশ্বশর্মা– রাজ্যের দুই মুখ্যমন্ত্রী এ আইনের সমর্থন করেছেন; আসামের ভূমিপুত্রদের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিয়েছেন। তাদের অন্যায় চিরকাল আসামের মানুষ মনে রাখবে; তারা চিরকাল খলনায়ক হয়ে থাকবেন।
তবে যে কোনো আন্দোলন কঠোর হস্তে দমনের হুশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করবেন, তাদের দলের অনুমোদন বাতিল করা হবে।
সিএএ কার্যকরের প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস। দলটির নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের ঘোষণা মেরূকরণের চেষ্টা। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ তিনি লিখেন, ৯ বার বিলম্বের পর সিএএ কার্যকরের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো। এটি করা হয়েছে নির্বাচনের মেরূকরণের জন্য; বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, বিজেপি এমন সময় সিএএ কার্যকর করল, যখন দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা মূল্যস্ফীতির কারণে কাতরাচ্ছে। বেকার যুবকেরা কর্মসংস্থানের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। তবে সিপিআইএমের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক মো. সেলিম বলেছেন, সিএএ হলো মোদি-মমতার মিলিত ষড়যন্ত্র। আর এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, নাথুরাম গডসের (মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী) আদর্শে তৈরি হয়েছে এ আইন। মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক প্রমাণ করতে এটি তৈরি করা হয়েছে।
এবিসিবি/এমআই