কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার, প্রবাসীদের সন্তোষ প্রকাশ

কানাডার অটোয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমানকে প্রত্যাহার করেছে সরকার। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জারি করা সরকারি নির্দেশে তাকে অবিলম্বে অটোয়ার দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে কানাডায় বসবাসরত সর্বস্তরের বাংলাদেশিরা সন্তোষ প্রকাশ করে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এদিকে টরন্টোস্থ বাংলা টাউনে প্রবাসীরা মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ সমাবেশ করেছেন।
কৃষিবিদ ফায়জুল করিম জানিয়েছেন, বিতর্কিত খলিলুর রহমানের প্রত্যাহারে হাজার হাজার কানাডা প্রবাসীর মতো আমি খুব খুশি হয়েছি। আমরা দীর্ঘদিন যাবত সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নানাভাবে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলাম এবং তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছিলাম। আমরা আশা করি, তার স্থলাভিষিক্ত যিনি হবেন, তিনি বাংলাদেশ হাই কমিশন অটোয়া এবং বাংলাদেশ কনসুলেট টরন্টোর সেবার ক্ষেত্রে খলিলুর রহমানের সৃষ্ট জটিলতাগুলি আশু সমাধান করবেন। খলিলুর রহমান একজন চরম বিতর্কিত হাই কমিশনার ছিলেন। কানাডায় নিযুক্ত হাই কমিশনারদের মধ্যে তার মত চরম বিতর্কিত কেউ পূর্বে ছিলেন না।
এই পদে যোগদান করার পর থেকে তিনি বিভিন্ন ধরণের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হন। তার স্বেচ্ছাচারিতা এমনই ছিল যে, বাংলাদেশি কানাডার নাগরিকরা কানাডিয়ান পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকয়ারমেন্ট’ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশী পাসপোর্টের(মেয়াদী) কপি জমা দানের বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত নির্দেশনা। অতীতে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ সংশ্লিষ্ট যে কোন ধরণের সনদ জমা দান সাপেক্ষে ‘নো ভিসা রিকয়ারমেন্ট’ পাওয়া যেত। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বহির্ভূত এই ধরণের নির্দেশনায় বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে সংবাদ সম্মেলন করে তীব্র প্রতিবাদ করা হয় কানাডার বিভিন্ন শহরে। এই ধরণের নিয়ম করার জন্য সরকারকেও দোষারোপ করা হয়।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক ও শুভন্যুধায়ীরা তার স্বরচিত মনগড়া নির্দেশনার বিষয়টা প্রবাসীদের কাছে তুলে ধরে। ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে ‘নো ভিসা রিকয়ারমেন্ট’ পূর্বের নিয়মেই করা হচ্ছে। খলিল সাহেবের স্বেচ্ছাচারিতায় সরকারকে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে যা সত্যিই দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তার কার্যকলাপ ও বক্তব্য সবই ছিল অন্তঃসারশূন্য এবং প্রতারণামূলক।
শিক্ষাবিদ জাকি উদ্দীন জানান, ড. খলিল এখানে বঙ্গবন্ধু বাণিজ্য শুরু করেছিলেন। ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু সেন্টার, বঙ্গবন্ধু সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ, বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, টিইএফএফ-তে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ ছবি প্রদর্শনী ছিলো নানান মিথ্যাচারে ভরা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ আবদুস সালাম জানান, খলিলের নিজস্ব ভিসানীতি কানাডা ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও নেই। যার ফলে কানাডা প্রবাসীরা ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলো এবং অনেকেই মৃত মা বাবা, আত্মীয় স্বজনকে দেখতে যেতে পারেন নি।
ব্যবসায়ী সুমন জাফর বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত যুগোপযোগী। জনগণের দাবি বাস্তবায়ন করেছে। আমরা এখন একজন দক্ষ, সৎ, নিষ্ঠাবান, প্রবাসবাব্ধব হাই কমিসনার চাই; যিনি কানাডায় বাংলাদেশের প্রতীকী পতাকা হিসেবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন।
সাংস্কৃতিককর্মী নাজমা হাসান জানান, বাংলাদেশের ৫৫ বছরে কূটনৈতিক ইতিহাসে একমাত্র তিনিই শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়ে দেশের ভাবমূর্তির ক্ষুণ্ণ করেছেন।
সাংবাদিক মাহবুব চৌধুরী রনি জানান, আমরা আশা করবো, নতুন হাই কমিশনার ভিসা সংক্রান্ত এই জটিলতা দ্রুত বাতিল করে প্রবাসীদের শান্তি এবং মুক্তি দেবেন।
এবিসিবি/এমআই