টাকা নেয়ার পরও জলিলকে ক্রসফায়ারে দেন বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ
জেলা প্রতিনিধিঃ কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১২ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। টেকনাফ থানার হ্নীলা ইউপির হোয়াইক্যংয়ের মহেশখালীয়া এলাকার সিএনজিচালক মৃত আবদুল জলিলের স্ত্রী সানোয়ারা বেগম বাদী হয়ে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত শুনানি শেষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই ঘটনা নিয়ে থানায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা তা টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মামলার বাদী ছেনোয়ারা বেগমের স্বামী আবদুল জলিলকে কক্সবাজার শহরের আদালতপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া। পরে তাকে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউর রহমানের হাতে তুলে দেয়া হয়। ওই কর্মকর্তা মশিউর জলিলকে নিয়ে টেকনাফ থানায় রাখে এবং তাকে পুলিশ ধরেনি বলে স্ত্রীসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিকট নানা লুকোচরি করে।
একপর্যায়ে জলিলের স্ত্রীকে জানানো হয় তার স্বামী ইয়াবা ব্যবসার অপরাধে ক্রসফায়ার দেয়া হবে। যদি স্বামীকে বাঁচাতে চান তাহলে ওসি প্রদীপ কুমারকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। মশিউরের কথামত স্বর্ণলংকার বিক্রি করে জলিলের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম স্থানীয় দফাদারকে নিয়ে দারোগা মশিউরসহ টেকনাফ থানার তৎকালিন ওসি বর্তমান সিনহা হত্যা মামলার আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমারের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেয়া হয়। কিন্তু টাকা নিয়েও স্বামী জলিলকে ফেরত দিবে বলে কালক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে স্বামীর কথা বললে মামলার বাদী (ছেনোয়ারা বেগম) ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে মামলা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পরে মাসের পর মাস চলে গেলেও স্বামী জলিলকে ফিরিয়ে দেয়নি সাবেক ওসি প্রদীপ ও মশিউর।
ছেনোয়ারা বেগম বলেন, একপর্যায়ে দীর্ঘ আট মাস পর চলতি বছরের ৭ জুলাই স্বামী জলিলকে তার নিজ বাড়ির পেছনে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে সাবেক ওসি প্রদীপসহ মামলার আসামিরা। এই ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিনের কোর্টে হত্যা মামলা দায়ের করা হয় বলে জানান মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মুনিরুল ইসলাম।
আইনজীবী মুনিরুল ইসলাম বলেন, এই হত্যার ঘটনায় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামীরা হলেন, বরখাস্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস, এসআই অরুণ কুমার চাকমা, ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মানস বড়ুয়া, এএসআই আরিফুর রহমান, এসআই মো. নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, সুজিত চন্দ্র দে, এসআই নাজিম উদ্দিন, এএসআই রামচন্দ্র দাস, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, কনস্টেবল সাগর দেব ও দফাদার আমিনুল হক।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মুনিরুল ইসলাম আরও জানান, শুনানি শেষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উক্ত ঘটনা নিয়ে টেকনাফ থানায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা- তা জানানোর জন্য আদালত নির্দেশ প্রদান করেন।
এদিকে ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুরে পুলিশের গুলিতে সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাস র্যাবের দ্বিতীয় দফার ৪ দিনের রিমান্ডে র্যা ব-১৫ কার্যালয়ে রয়েছেন।