Type to search

Lead Story আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত নিয়ন্ত্রণে কী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পাশে থাকবেন সৌদির যুবরাজ

ইসরায়েল ও গাজার মধ্যকার যুদ্ধ এপর্যন্ত প্রাণ নিয়েছে ২০ হাজারের বেশি মানুষের। মধ্যপ্রাচ্যের এই দীর্ঘ সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞরা দ্বি-রাষ্ট্র গঠনে মত দিয়ে থাকলেও বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। এই প্রস্তাবে রাজি নয় ইসরায়েল। চলমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমারা বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসনের শঙ্কা এখন দাবানলের আগুন যেন ছড়িয়ে না পড়ে।

সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নিতান্তই অমূলক নয়। বিশেষ করে গত রোববার লোহিত সাগরে হুথি হামলার পর মার্কিন কর্মকর্তারা সংঘাত ছড়িয়ে পড়া নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তবে ঘর পোড়া আগুনে আলু পুড়ানোর ফন্দি আঁটছেন তারা। তাদের ধারণা, ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা সৌদি সরকারকে আরও বেশি করে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করবে আর হামাস ও এর সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলোর ওপর চাপ তৈরি করবে।

একাধিক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউজউইক এক প্রতিবেদনে বলেছে, ওয়াশিংটন এখন এই আশায় আছে যে, যেহেতু আরব উপদ্বীপ থেকে লোহিত সাগরে হামলা চালানো হয়েছে তাই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করার জন্য মধ্যপন্থী জোটকে এক করতে ও হামাসকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে পারেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

ক্রমবর্ধমান মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে সৌদি আরবের ইতিবাচক ভূমিকা পালনের মনোভাব এটাই প্রমাণ করে যে দেশটির প্রতি বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা পরিবর্তিত হয়েছে। কেননা ৯/১১ এর ঘটনা ও সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার সঙ্গে দেশটির সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় বাইডেন ঘোষণা দিয়েছিলেন সৌদি আরবকে এর জন্য দায়বদ্ধ করাবেন।

২০২১ সালে তিনি দেশটিকে ‘প্যারিয়া’ (অনেকটা একঘরে করে রাখার মতো ব্যাপার) রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবুও তিনি ২০২২ সালের জুলাই মাসে দেশটিতে সফর করেন ও ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

বাইডেন প্রশাসনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ থামানোতে সৌদির সহায়তাও উল্লেখযোগ্য ছিল বলে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে।

কিন্তু সৌদি আরবও ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করেছিল তারা। সৌদির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেশটি বেসামরিক নাগরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোতে নৃশংস ও নির্বিচারে অভিযান চালিয়েছে। যার ফলে ছয় বছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার বেসামরিক মারা গেছে, লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছে ও ইয়েমে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

বাইডেন প্রশাসনের একজন উপদেষ্টা নিউজ উইককে বলেছেন, ‘ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে মধ্যপন্থী অংশীদার হিসেবে সৌদি আরবকে একটি ফ্রন্ট লাইন স্টেটে পরিণত করতে চায়। এই পন্থা হয়তো ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে। তবে হামাসের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক মোটেও ভালো নয়, সেইসঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেও দেশটির তেমন বলার মতো কোনো সম্পর্ক নেই। তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা রিয়াদ হয়তো গাজা পুনর্গঠনের বেশিরভাগ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সম্পর্ক ঠিক করে নিতেও পারে।

সিনিয়র মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিউজ উইককে জানিয়েছেন, সৌদি হামাসের পরাজয় দেখতে চায়, গাজায় আরও মধ্যপন্থী রাজনৈতিক খেলোয়াড় দেখতে চায়। যেহেতু সৌদি আরব ইতিমধ্যেই ইয়েমেনে শান্তি খুঁজছে, তাই ইরানকে আরও বিচ্ছিন্ন করে রাখাটা মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে সাহায্য করবে দেশটিকে।

থ্যাঙ্কসগিভিং ডের ঠিক আগে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কলে আলোচনা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত কীভাবে ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকানো যায় এবং ইয়েমেনে কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চুক্তি করা যায় এ বিষয়ে সৌদির প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্লিঙ্কেন।

হামাসের যুদ্ধ আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে বলেও উদ্বেগ রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই আরব রাজধানীতে হামাসের জন্য অভ্যন্তরীণ সমর্থনের বিষয়ে বিড়ম্বনা দেখতে পাচ্ছি, সেইসাথে মার্কিন বাহিনী ও ইসরায়েলি সম্পদের ওপর আক্রমণ শিগগিরই সাধারণভাবে মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসী হামলায় প্রসারিত হবে বলে আশঙ্কা করছি।’

শুক্রবার সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, জর্ডান ও বাহরাইনের প্রতিপক্ষের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি আরব রাষ্ট্রগুলোকে যুদ্ধের বিষয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন এবং মানবিক সহায়তা ও গাজার ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন।

ওয়াশিংটনের বিমানে চড়ার আগে ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, তিনি গাজায় পরের দিন কী ঘটবে ও কীভাবে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত, দীর্ঘস্থায়ী ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, বিশেষ করে পুরো অঞ্চলের জন্য তা নিয়েই ভেবেছেন।

মোহাম্মদ বিন সালমান ইসরায়েলের তীব্র নিন্দা করেছেন ও গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ইসরায়েলে অস্ত্র আমদানি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, স্পষ্টতই ইসরায়েলের বৃহত্তম বহিরাগত সরবরাহকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার অসন্তোষকে কেন্দ্র করে।

গত বছর এক বৈঠকের পর থেকে রিয়াদের আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে বাইডেন প্রশাসন। ওয়াশিংটনের সূত্রের মতে, বাইডেন প্রশাসন ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আশাবাদী ছিল। একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এই ধরনের চুক্তি ফিলিস্তিনি জাতীয় আন্দোলনের প্রতি সৌদি সমর্থনকে কমিয়ে দিতে পারে।

ব্লুমবার্গ গত সপ্তাহে রিপোর্ট করেছে, সৌদি আরব ইতিমধ্যেই ইরানকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। বিনিময়ে তার আঞ্চলিক সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে বিরত রাখতে হবে যেন তারা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধকে বৃহত্তর সংঘাতে পরিণত চনা করে।

এবিসিবি/এমআই

Translate »