ব্যাঙ্গালোরে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানে ভারতীয় পুলিশের বাধা

পাকিস্তানের একজন সমর্থক ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয়ার সময় পুলিশ এসে তাকে স্লোগান দিতে মানা করেন, এমন একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে গত রাতে।
এটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ব্যাঙ্গালোরের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পাকিস্তান বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ চলাকালীন এই ঘটনা ঘটেছে।
এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের পোশাকে এক ব্যক্তি পাকিস্তানের জার্সি গায়ে এক সমর্থককে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলা থেকে বিরত থাকতে বলছেন।
পাকিস্তানের সমর্থককে বলতে শোনা গেছে, “পাকিস্তান থেকে এলে তো পাকিস্তান জিন্দাবাদই বলবো, তাই না? পাকিস্তানের খেলা হচ্ছে এখানে”।
এরপর পাকিস্তানের সেই সমর্থক মোবাইল বের করে ভিডিও ক্যামেরা অন করে বলেন, “আপনি আমার ক্যামেরায় বলুন যে আমি পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে পারবো না”।
একই সময়ে স্টেডিয়ামে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানে কোনও আপত্তি জানাননি সেই পুলিশ অফিসার।
বিবিসি হিন্দি থেকে ব্যাঙ্গালোর পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তারা কিছু বলেননি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
প্রথমে এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে পাকিস্তানের সুপরিচিত সমর্থক মোমিন সাকিবের টুইটার একাউন্ট থেকে।
তিনি নিজের ভেরিফাইড টুইটার একাউন্টে ভিডিওটি পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, “এটা হতাশার ও কষ্টের যে খেলার মধ্যে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতে দিচ্ছে না মাঠে”।
তার মতে এটা খেলার নীতির বিরুদ্ধে পুরোপুরি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল ও ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছেন, তাদের উচিৎ ঘটনাটা খতিয়ে দেখা।
“সবার বিশ্বকাপ নিরাপদ থেকে উপভোগ করার এখতিয়ার আছে। আমি কোনও দেশ সম্পর্কেই নেতিবাচক কথা শুনতে চাই না”।
মোমিন সাকিব পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট সমর্থকদের একজন।
তিনি ২০১৯ বিশ্বকাপে একটি সাক্ষাৎকারে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পরিস্থিতি হাস্যকর উপায়ে উপস্থাপন করতে গিয়ে উর্দুতে ‘মারো মুঝে মারো’ বলে তুমুল পরিচিতি লাভ করেছিলেন।
মোমিন সাকিবের মতে এই পুলিশ অফিসার ভারতের সবার প্রতিনিধিত্ব করেন না।
তিনি লিখেছেন, “যাই বলেন না কেন, এটা ঠিক না। নিরাপত্তা মানে সবাইকে খেলা উপভোগ করার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া। ক্রিকেট সব মানুষকে এক করার একটা মাধ্যম”।
ভারতের একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষক অশোক সোয়াইন নিজের টুইটার একাউন্টে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, “উগ্রবাদী হিন্দুরা ভারতকে একটা জঘন্য কৌতুকে পরিণত করেছে”।
আবার অনেক ভারতীয়দের টুইটার একাউন্টে এই পুলিশ অফিসারকে সাধুবাদ জানানো হচ্ছে।
কেউ কেউ লিখছেন, “উচিত কাজ করেছে এই পুলিশ অফিসার”। গতরাতে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হেরে গেছে।
পাকিস্তানের বোলিং নিয়ে প্রশ্ন
এই কদিন আগেও বলা হচ্ছিল, পাকিস্তানের বোলিং লাইন-আপ বিশ্বের সেরা, কিন্তু এই বক্তব্য নিয়ে এখন উঠেছে প্রশ্ন।
খোদ পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তী ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম প্রশ্ন তুলেছেন, “কে বলছে এটা? পাকিস্তান বিশ্বের সেরা বোলিং লাইন আপ?”।
পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনার সময় ওয়াসিম আকরাম বলেন, “হ্যাঁ, শাহীনকে সময়ের অন্যতম সেরা বলা যায়। কিন্তু হারিস রওফ তো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেনি, তাই ওয়ানডে ক্রিকেটে যে তার এই অবস্থা হবে সেটা বোঝাই যাচ্ছিল”।
হারিস রওফ গত ম্যাচে ৮ ওভারে ৮৩ রান দিয়েছেন। একটা পর্যায়ে তার বোলিং ফিগার ছিল চার ওভারে ৫৯ রান।
পার্টটাইমার ইফতিখার আহমেদ ছাড়া পাকিস্তানের সব বোলারই ওভারপ্রতি পাঁচের ওপর রান দিয়েছেন।
হারিস রওফ দিয়েছেন ১০ এর ওপর, উসামা মির দিয়েছেন ৯ এর ওপর। মোহাম্মদ নাওয়াজের ইকোনমিক রেট ছিল ৬.১৪, হাসান আলি দিয়েছেন ওভারপ্রতি ৭.১২।
তবে শেষদিকে বল হাতে নিয়ে শাহীন শাহ আফ্রিদি পাঁচ উইকেট নিয়েছেন এবং তিনি ১০ ওভারে ৫৪ রান দিয়েছেন।
পাকিস্তান চলতি বিশ্বকাপে প্রথম চার ম্যাচে দুইবার সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি বা তার বেশি রান হজম করেছে।
ভারতের বিপক্ষেও পাকিস্তানের বোলাররা তেমন হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেননি।
ওয়াসিম আকরামের মতে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চার ওভার বল করা আর ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০ ওভার বল করা যে আলাদা ব্যাপার এটা এবার টের পাচ্ছে পাকিস্তানের বোলাররা।

দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পুষ্পার মতো অভিনয় করে দেখিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার
অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যাবর্তন
প্রথমে ভারত, এরপরে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর অস্ট্রেলিয়া অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ এ।
এরপর শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষ চারে জায়গা করে নিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ৬২ রানের এই জয়ে ভূমিকা রেখেছেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ।
এই দুজন মিলে গড়েছেন ২৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। এটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি।
২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার উপুল থারাঙ্গা ও তিলেকরত্নে দিলশানের ২৮২ রানের জুটি আছে এক নম্বরে।
ডেভিড ওয়ার্নার গতকাল ১২৪ বলে ১৬৩ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন। এটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়ার্নারের পঞ্চম শতক।
১০ রানের মাথায় ওয়ার্নারের একটা সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের উসামা মির।
ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম বলেন, “ওয়ার্নারকে সুযোগ দিলে তিনি আপনাকে শাস্তি দিবেনই”।
ওদিকে মিচেল মার্শ নিজের ৩২তম জন্মদিন স্মরণীয় করে রেখেছেন ১০৮ বলে ১২১ রানের ইনিংস দিয়ে।
একটা সময় মনে হচ্ছিল ৫০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ৪০০ রান করে ফেলবে।
পরের দিকে পাকিস্তানের শাহীন শাহ আফ্রিদি ভালো বল করেন, শেষ পর্যন্ত ৩৬৭ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।
জবাব দিতে নেমে পাকিস্তানের ওপেনাররাও ভালো শুরু এনে দেন, তবে মিডল অর্ডারে কেউ বড় রান করতে পারেননি।
অধিনায়ক বাবর আজম মাত্র ১৮ রান করে অ্যাডাম জাম্পার বলে ক্যাচ তুলে দেন।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে নিষ্প্রভ ছিলেন জাম্পা।
পরের দুই ম্যাচে চারটি করে উইকেট নিয়ে ম্যাচ জয়ে ভূমিকা রেখেছেন এই লেগ স্পিনার।
অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার মার্কাস স্টইনিসও দারুণ ভূমিকা রেখেছেন ব্যাট হাতে ২১ রানের পাশাপাশি, পাকিস্তানের টপ অর্ডারের দুটি উইকেট নিয়েছেন এই ক্রিকেটার।
পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ৪৫ ওভার ৩ বলে ৩০৫ রানে অলআউট হয়ে যায়।-বিবিসি বাংলা
এবিসিবি নিউজ/এমআই