Type to search

Uncategorized খেলাধুলা

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে যত রেকর্ড গড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট পতন। দলীয় ১০ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৮ রান করে মাথা নিচু করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। তখন কেই বা ভাবতে পেরেছিল, এই ম্যাচেই ব্যাট হাতে এমন ঝড় তুলবেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে এক ইনিংসেই তিনজনে সেঞ্চুরি করে জন্ম দেবেন একগাদা বিশ্বকাপ রেকর্ডের। কেউ ভাবনা না পারলেও গতকাল দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কান বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করে অন্তত এক হালি বিশ্বকাপ রেকর্ডের জন্ম দিয়েছেন প্রোটিয়ারা।

সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড

ভারতের মাটির ২০২৩ বিশ্বকাপে দর্শক-খরা যাচ্ছে। আগের দুই ম্যাচের মতো গতকাল অনুষ্ঠিত দুই ম্যাচেও গ্যালারি ছিল ধু ধু মরুভূমি। তবে দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে যে অল্প সংখ্যক দর্শক হাজির হয়েছিলেন গ্যালারিতে, তাদের পয়সা উশুল করে দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার তিন ব্যাটসম্যান—ওপেনার কুইন্টন ডি কক, রসি ফন ডার ডুসেন ও আইদান মারকরাম। তিনজনেই পূর্ণ করেছেন সেঞ্চুরি। তাদের তিন সেঞ্চুরিতে চড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গড়ে ৫ উইকেটে ৪২৮ রানের পুঁজি। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড।

বিশ্বকাপে এর আগে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডটি অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ২০১৫ বিশ্বকাপে পঞ্চম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে অস্ট্রেলিয়া গ্রুপপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেছিল ৬ উইকেটে ৪১৭ রান। এ নিয়ে সব মিলে পঞ্চম বারের মতো ৪০০ পেরোনো ইনিংস দেখল বিশ্বকাপ। তার ৩টিই দক্ষিণ আফ্রিকানদের। ২০১৫ বিশ্বকাপেরই দুই ম্যাচে ৪০০ পেরোনো ইনিংস গড়ে প্রোটিয়ারা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ৪১১ রান করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছিল ৫ উইকেটে ৪০৮ রান। গতকালের ইনিংসটিসহ উপরে উল্লেখিত ৪ ইনিংস বাদে বিশ্বকাপে ৪০০ পেরোনো অন্য ইনিংসটির মালিক ভারত। ২০০৭ বিশ্ব্বকাপে বারমুডার বিপক্ষে ভারত ৫ উইকেটে করেছিল ৪১৩ রান।

সব মিলে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এটা দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। সব মিলিয়েই ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটা দক্ষিণ আফ্রিকানদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির প্রথম কীর্তি

বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম ম্যাচের এক ইনিংসে কোনো দলের তিন জন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়লেন। সেই দিক থেকে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম খোদাই করে নিলেন তিন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক, রসি ফন ডার ডুসেন ও আইদান মারকরাম।

এর  আগে বিশ্বকাপে এমনটা না ঘটলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে ঠিকই এই কীর্তি তিন বার ঘটেছে। বিস্ময়কর হলো, সেই তিন বারের দুই বারই ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। প্রোটিয়ারা দুই বারই কীর্তিটা গড়েন ২০১৫ সালে। প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, জোহানেসবার্গে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানই সেঞ্চুরি করেন। হাশিম আমলা অপরাজিত ১৫৩, রাইলি রোসো ১২৮ ও এবি ডি ভিলিয়াসের মাত্র ৪৪ বলে ১৪৯ রানের ইনিংসে চড়ে ২ উইকেটে ৪৩৯ রানের পুঁজি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডেতে এখনো সেটাই প্রোটিয়াদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। ওই ২০১৫ সালেরই ২৫ অক্টোবর মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে তিন সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন তিন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। সেদিনের তিন সেঞ্চুরিয়ানের একজন ছিলেন কুইন্টন ডি কক, করেছিলেন ১০৯ রান। যিনি গতকালও কাটায় কাটায় ১০০ রান করে ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির কীর্তিতে দ্বিতীয় বারের মতো অংশীদার হয়েছেন। সেদিন ভারতের বিপক্ষে প্রোটিয়াদের বাকি দুই সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন ফ্যাফ ডু প্লেসি (১৩৩) ও এবি ডি ভিলিয়ার্স (১১৯)। মানে কুইন্টন ডি ককের মতো ডি ভিলিয়ার্সও দুই বার গর্বিত কীর্তির অংশীদার। সেই ম্যাচে তারা করেছিল ৪ উইকেটে ৪৩৮ রান।

ওয়ানডে ইতিহাসে ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির অন্য কীর্তিটি ইংল্যান্ডের। ২০২২ সালের ১৭ জুন, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ইংলিশদের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন ফিল সল্ট (১২২), ডেভিড মালান (১২৫) ও জশ বাটলার (১৬২*)। এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জশ বাটলারের সেটাই ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তো তাদের তিন সেঞ্চুরিতে চড়ে ইংল্যান্ড গড়ে ৪ উইকেটে ৪৯৮ রানের পুঁজি। যা ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড।

বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরি

গতকাল দিল্লিতে অন্য দুই সতীর্থের সঙ্গে ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির কীর্তি গড়ার পথে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন আইদান মারকরাম। কাল তিনি সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৪৯ বলে। শেষ পর্যন্ত করেছেন ৫৪ বলে ১০৬ রান। নতুন রেকর্ড গড়ার পথে মারকরাম ভেঙে দিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়ানের রেকর্ড। হ্যাঁ, বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের পেছনে ফেলে এতদিন বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটির মালিক ছিলেন আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়ান। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলকে রেকর্ড গড়া জয় উপহার দিতে কেভিন ও’ব্রায়ান সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন ৫০ বলে।  শেষ পর্যন্ত ৬৩ বলে করেছিলেন ১১৩ রান। রেকর্ডটি গড়ার মধ্যদিয়ে সেদিন কেভিন ও’ব্রায়ান নিজের দল আয়ারল্যান্ডকেও বিস্ময়কর এক দলীয় রেকর্ডের মালিক বানান। তার দল আয়ারল্যান্ড গড়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড করেছিল ৮ উইকেটে ৩২৭ রান। জবাবে ৫ বল বাকি থাকতেই আয়ারল্যান্ড ৭ উইকেট হারিয়ে করে ৩২৯ রান। সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের সেই রেকর্ডটি এখনো ধরে রেখেছে আইরিশরা।

জুটির রেকর্ড

দলীয় ১০ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে ২০৪ রানের জুটি গড়েন কুইন্টন ডি কক ও রসি ফন ডার ডুসেন। ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটাই তাদের সর্বোচ্চ রানের জুটি। সব মিলে বিশ্বকাপে এটা দক্ষিণ আফ্রিকানদের চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।

এবিসিবি/এমআই

Translate »