Type to search

আন্তর্জাতিক

সীমান্তে স্থিতাবস্থা নষ্ট করার চীনা চক্রান্ত নস্যাৎ করা হয়েছে

ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সীমান্তে সংঘর্ষের পর ভারত সরকার গতকাল মঙ্গলবার পার্লামেন্টে দাবি করেছে, চীন একতরফাভাবে সীমান্তের স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে চাইলেও সে চেষ্টা প্রতিহত করা হয়েছে। এর আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সোমবার রাতে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, গত ৯ ডিসেম্বর তাওয়াং সেক্টরে দুদেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে কিছু ‘ছোটখাটো আঘাতে’র ঘটনা ঘটেছে।

চীনের পক্ষ থেকে তাওয়াংয়ে ঐ সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গতকাল বলেছেন, ‘আমরা যতদূর জানি, চীন-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি সার্বিকভাবে স্থিতিশীলই আছে।’ কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেলগুলোতে দুদেশের মধ্যে সীমান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনা অবাধে চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এদিকে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতের বিমানবাহিনী সক্রিয়ভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েই টহল শুরু করেছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর দাবি, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ঐ এলাকায় চীনা যুদ্ধবিমানের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতও টহল শুরু করেছে।

  • পার্লামেন্টে রাজনাথ সিং

এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গতকাল পার্লামেন্টে উভয় কক্ষেই বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘চীনের সেনারা অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় ভূখণ্ডের কিছু অংশ দখল করতে চাইলেও সে চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভারতীয় সেনারা চীনা বাহিনীকে তাদের ছাউনি বা পোস্টে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে।’ তবে সেদিনের সংঘর্ষে কোনো পক্ষের কোনো সেনা নিহত বা গুরুতরভাবে জখম হননি বলেও সরকার পার্লামেন্টে জানিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর পরই সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক চ্যানেলে চীনের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের প্রায় আড়াই বছর পর আবার দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে বড়সড় কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। তবে পূর্ব সীমান্তের তাওয়াংয়ের এই ঘটনায় দুই পক্ষের ঠিক কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

  • ক্ষয়ক্ষতির বহর

ভারতের অরুণাচল প্রদেশ থেকে নির্বাচিত শাসক দল বিজেপির এমপি তাপির গাও ব্রিটেনের ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকাকে জানিয়েছেন, সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা আহত হয়েছেন বলে তিনি খবর পেয়েছেন যার মধ্যে অন্তত ছয় জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে অবশ্য পার্লামেন্টে ভারত সরকারের করা দাবি মিলছে না, যেখানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, কারো আঘাতই তেমন গুরুতর নয়। ভারতের পার্লামেন্টে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিবৃতি অবশ্য দেশের বিরোধী দলগুলোকে গতকাল সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ভারত-চীন সীমান্ত ইস্যুতে সভায় বিশদ আলোচনা চেয়ে তারা পার্লামেন্ট থেকে গতকাল ওয়াকআউটও করেছেন।

  • ভারত-মার্কিন যৌথ মহড়ার প্রভাব?

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা লিখেছে, চীন সীমান্তের কাছে গত মাসে ভারত ও মার্কিন বিমানবাহিনীর যৌথ সামরিক মহড়ার পর থেকেই কূটনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়ছিল। তারা জানান, ‘যুদ্ধ অভ্যাস’ নামে এই সামরিক মহড়া যদিও প্রতি বছরই হওয়ার কথা, কিন্তু এবছর যেহেতু সেটি চীন সীমান্ত থেকে মাত্র ৬৫ মাইল দূরে অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে জোর দেওয়া হয় ‘মাউন্টেন ওয়ারফেয়ার’ বা পার্বত্য যুদ্ধে চীন সেই পদক্ষেপকে খুব ভালো চোখে দেখেনি। এই যৌথ মহড়া চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত অঞ্চলে পারস্পরিক আস্থার পরিপন্থি বলেও তখন বেইজিং মন্তব্য করেছিল। গত ২৯ নভেম্বর মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ বা পেন্টাগনের পক্ষ থেকে যে ‘চায়না মিলিটারি রিপোর্ট’ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেও জানানো হয়েছে, চীন-ভারত সম্পর্কের ভেতরে আমেরিকা যাতে হস্তক্ষেপ না করে, সেজন্যও চীন মার্কিন কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত আছে, অরুণাচল প্রদেশে সীমান্ত সংঘর্ষের সঙ্গে এই ভারত-মার্কিন যৌথ মহড়ার সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে।

এবিসিবি/এমআই

Translate »