প্রসঙ্গ রিজেন্ট হাসপাতালের বাটপার মালিক শাহেদ ও তথাকথিত বাটপার গনমাধ্যম ব্যক্তিত্ব!
স্বপ্না গুলশান: শাহেদ করিম ওরফে মো: শাহেদ তার নাম । এক বিশ্ব বাটপার তিনি । বাটপারি ও প্রতারনা করতে একেক সময় একেক নাম ও পদবী ব্যবহার করে নিজের পরিচয় দেন তিনি। বিভিন্ন ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ, আমলা, মন্ত্রী, সাংবাদিকদের সাথে নিজের ছবি তুলে সেটাকেই বাটপারী ব্যবসার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি। মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে গোটা চ্যানেলের টকশো আয়োজকদের হাত করেছেন তিনি।
এসএসসির গন্ডী পেরিয়েছে কিনা সন্দেহ। রাজনৈতিক কোন অভিজ্ঞতা বা আদর্শ কোনটির বালাই নেই । অথচ নাম লিখিয়েছেন আওয়ামীলীগের আন্তজার্তিক কমিটিতে । রাষ্ট্রপতি, প্রধামন্ত্রীসহ সরকারের সবধরনের গুরুত্বপুর্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত দাওয়াত মিলতো তার। বড ধরনের উপঢৌকন আর টাকার বিনিময়েই এসব ভিআইপি অনুষ্ঠানের দাওয়াত ম্যানেজ করতেন তিনি।
দেশে সাংবাদিকতা করা কালীন সময়ে দেখা হয়নি কখনো এ বাটপারের সাথে আমার । তবে কথা হয়েছিল একবার মোবাইলে। তিনিই ফোন করেছিলেন ।
সে প্রসংগেই আসি। ২০০৯/২০১০ সালের কথা। তখন বসবাস করতাম ঢাকাতে । একুশে টেলিভিশনে সাংবাদিকতা করি। সে সুবাদে কম বেশী পরিচিতি ছিল ভালই । কারওয়ান বাজারে অফিস ।
মাঝে মাঝে অফিসের নীচে বারিস্তায় কফির জন্য নামতাম। সোশাল মিডিয়ার বদৌলতে এখন জানলাম বাটপার শাহেদের ও নিয়মিত যাতায়াত মিডিয়া পাড়ার এ বারিস্তায় ।উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে চেহারা দেখাতে টকশো আয়োজকদের নানান উপহার সামগ্রী, ঘুষ দিয়ে হাত করা। হাত করা।
সন্ধ্যার পর মিডিয়া পাড়ার এ জায়গাটিতে আরো অনেক সাংবাদিকের আড্ডা বসে । তখনো বসতো। যাহোক, সেসময়ে কেমনে যেন আমার মোবাইল নম্বর ম্যানেজ করে ফেললেন মি: শাহেদ নামের লোকটি। জানতামনা তখনো যে তিনি এক বিশ্ব বাটপার । ফোন দিলেন হঠাৎ একদিন আমার নম্বরে। বললেন, “ আমি শাহেদ করিম, মেজর শাহেদ করিম” । এত ভদ্র মিষ্টি ব্যবহার আর কথার আমেজ যে কেউ সরল বিশ্বাসে তার প্রতারনার শিকার হয়ে যাবে।
যাহোক, ফোনের এপাশ থেকে আমি বললাম , চিনলাম না তো আপনাকে । আরো আগ বাডিয়ে বললেন ,” আমার বাডী সাতক্ষীরা। আমি জানি আপনিও সাতক্ষীরার।” যাইহোক, ফোন দেয়ার কারন বুঝলাম যে , উনি একুশের কোন অনুষ্ঠানে আসতে তদবীর করতে ফোন করেছেন ।
সেসময়ে একুশের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সাহেবকে বিষয়টি জানালাম । চেয়ারম্যান বললেন , শাহেদ এক চীট, বাটপার , প্রতারক। কোনভাবেই যেন একুশে টিভিরে ব্যবহার করে বাটপারি চালিয়ে যেতে না পারে। একুশের চেয়ারম্যানের কাছেই শুনেছিলাম শাহেদের বাটপারির নানা কারবারের কথা। তখনই ব্লক করে দিয়েছিলাম বাটপারের নম্বরটা ।
সে যাই হোক, অনেকদিন অনেক বছর পার হয়ে গেল । আমি বসবাস করি এখন অষ্ট্রেলিয়াতে। তারপরও দেশের খবর কমবেশি রাখি । রাখতে হয় নানান কারনে। নিজে ও প্রতিষ্ঠা করেছি একটি অনলাইন মিডিয়া ।
সেদিন হঠাৎ করে আবারো বিভিন্ন নিউজের হেডলাইনে দেখলাম এ বাটপার শাহেদের নাম! মানে হলো , এতদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে নানা উপায়ে মোটা অংকের ঘুষ , দামি গাড়ী / দামি উপহার দিয়ে জামাত, বিএনপি , আওয়ামীলীগের ভিআইপি রাজনীতিবিদদের নানা কৌশলে ম্যানেজ করে এসেছেন তিনি। পুরা দমে বাটপারি চালিয়ে এসেছেন যার পরিনতি করোনাকালেও নিরীহ মানুষের জীবন নিয়ে বাটপারি তাও আবার লাইসেন্স বিহীন রিজেন্ট হাসপাতাল !
সরকারের স্বাস্হ্য মন্ত্রনালয়ের নাকের ডগা দিয়ে হাসপাতাল খুলে বাটপারি ! ভীষন অবাক হলাম , বর্তমান স্বাস্হ্য মন্ত্রী , স্বরাষ্ট মন্ত্রী এমন কি প্রধান মন্ত্রীর সাথে এ বাটপারের ছবি দেখে।আরো অবাক হলাম যে , দেশের বেশীরভাগ সংবাদ মাধ্যম বিশেষত টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে নির্ভয়ে বাটপারি চালিয়ে যেতে নিজের আয়ত্বে্ই এনেছেন তিনি।
আর প্রতিনিয়ত সোশাল মিডিয়াতে বাটপার শাহেদের সাথে পরিচিত অনেক সাংবাদিকের ছবি দেখছি । এসব সাংবাদিকের সবাইকেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তাই কিছুটা অবাক ও হয়েছি। এদের অনেকেই আমার সাবেক কলিগ / সিনিয়র কলিগ ছিলেন । এদের মধ্যে একজন কে নিয়ে শুধু বলবো তিনি হলেন অন্জন রায় যিনি এখন জিটিভি জুড়ে রাজত্ব করছেন ।
এই অন্জন রায়কে দেখেছি একুশের রাতে টকশো সহকারী হিসেবে কাজ করতে । সামিয়া জামান ও মোজাম্মেল বাবুর সহকারী ছিলেন তিনি। কি কাকুতি মিনতি করতেন সবার কাছে একটু প্রমোশন ও চেয়ারম্যানের সুনজরে আসার জন্যে। কেমনে কেমনে যেন এই অন্জন রায় সাহেব একদিন সামিয়া জামান , মোজাম্মেল বাবুকে সরিয়ে নিজেই টকশোর দায়িত্ব বাগিয়ে নিলেন চেয়ারম্যানকে উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে । এই হলো অন্জন রায় যিনি একটা বড় মাপের দালাল । ভারতের বিশাল চামচা/ দালাল । এর কোন নীতি নৈতিকতা নাই। মুখে বড় বড় নীতির কথা বললে ভিতরে ভিতরে নানা অপকর্ম বিশেষত ভাল মানুষের বাঁশ দেয়ার তালে ব্যস্ত তিনি ।
যাহোক, এসব করে অন্জন রায় এখন জিটিভির বিশাল টকশো উপস্থাপক । টকশোতে অতিথি বানানোর নাম করে লাখ থেকে কোটি টাকার উপহার দামি গাড়ি, বাডী, প্লট বানিয়ে নিয়েছে অন্জন রায়ের মতো তথাকথিত দুনীতিবাজ গনমাধ্যমের লোকজনেরা ।
এদেরকে সাংবাদিক পরিচয়ে ডাকতে ও নীতিতে বাধে। টেলিভিশনের টকশোগুলো এখন রমরমা টকশোবানিজ্যে পরিনত হয়েছে। যে যত টাকা বেশী দেবে সে ততো টকশোর মাধ্যমে চেহারা দেখানোর সুযোগ পাবেন । যার পরিনাম চীট, বাটপার, প্রতারক শাহেদের মত হাজার হাজার বিশ্ব বাটপার দেশ জাতিকে উপহার দেয়া।
সবশেষে আবারো বলতে চাই, চীট বাটপার ধান্দাবাজরা এখন বড় টকশোবাজ। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এরা টকশোতে কথা বলার সুযোগ নিচ্ছে। সুতরাং যারা মুল্যবান উপহার সামগ্রি ও টাকার বিনিময়ে এধরনের দুর্নীতিবাজ, চীট, বাটপারদেরকে টকশোতে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন ; দেশ জাতির সাথে বাটপারি করতে সাহায্য করেছেন তারা ও দুনীতিবাজ ও বাটপার । এ ধরনের সাংবাদিক দেশ, জাতি ও সরকারের চরম শত্রু । এরা দেশদ্রোহী।
এধরনের গনমাধ্যম ব্যক্তিত্ব তথা সাংবাদিকদের কে দুদুকের মাধ্যমে নামে বেনামে থাকা সবরকমের সম্পত্তির উৎস তদন্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। বাংলাদেশের দুষিত গনমাধ্যমকে বিশুদ্ধ করার সময় এখনই । মনে রাখতে হবে একটি দেশের গনমাধ্যম সাংবাদিক যখন অনৈতিক কর্মকান্ডে জডিয়ে পড়ে তখন সে দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ পরিনতি অপেক্ষা করে।
সাংবাদিকতার নাম দিয়ে বাটপারি ধান্দাবাজী ঘুষবাজি , অনৈতিক টকশো বানিজ্য,ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে ।
পাশাপাশি রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক ,৩২ মামলার আসামী সাহেদ কে যারা হিরো সাজিয়ে , গলায় ফুলের মালা পরিয়ে গনভবনে ঢুকিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সাথে হাত মেলানোর সুযোগ করে দিয়েছেন ; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনজরে আনার চেষ্টা করেছেন; আওয়ামীলীগের আন্তজাতিক কমিটিতে নাম লিখিয়ে দিয়েছেন, অনুমোদনহীন রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা টেস্ট করানোর অনুমতির জন্য তদবীর করেছেন সেসব অসাধু দুর্নীতিবাজদের খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। সেই সাথে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘুনেধরা জর্জরিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়কে ঢেলে সাজাতে হবে। বছরের পর বছল চলতে থাকা দুর্নীতির সিন্ডিকেট চক্র খুঁজে করতে হবে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া যায় তবে ভয়াবহ পরিনাম অপেক্ষা করছে পুরা দেশ ও জাতির সামনে ।( স্বপ্না গুলশান, এডিটর, এবিসিবি নিউজ)