অস্ট্রেলিয়ায় ফিটনেস ক্লাবের আড়ালে সংগঠিত হচ্ছে মুসলিমবিরোধী নব্য নাৎসি সংগঠন
The groups have been engaging in physical training as well as paramilitary style training. Source: SBS News
ফিটনেস ক্লাবের আড়ালে মুসলিম বিরোধী নব্য নাৎসি বা নিও নাজিদের সংগঠিত হবার খবর সম্প্রতি প্রকাশ করেছে এসবিএস ওয়ার্ল্ড নিউজ। এইসব সংগঠনের কর্মকান্ড ইতোপূর্বে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়নি। অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা এইসব সংগঠন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ক্রাইস্টচার্চের মত অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে উগ্র ডানপন্থীদের আক্রমণ হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। তারা এ ধরনের উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।
ফিটনেস ক্লাবের আড়ালে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে বেশ কয়েকটি মুসলিমবিরোধী নব্য নাৎসি গ্রুপ সংগঠিত হবার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসবিএস এর অনুসন্ধানে প্রকাশ পেয়েছে— এইসব গ্রুপ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করছে এবং অস্ট্রেলিয়ার অরণ্য অঞ্চলে সামরিক প্রশিক্ষন নিচ্ছে।
এইসব কর্মকান্ডের পাশাপাশি ভিন্ন দেশের সন্ত্রাসীদের সাথে তাদের এনক্রিপ্টেড আলোচনারও প্রমাণ পেয়েছে এসবিএস।
নিও নাজি বা নব্য নাৎসি সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত এক ব্যক্তির বাড়ি ঘেরাও করে অস্ট্রেলিয়ার জয়েন্ট কাউন্টার টেররিজম টিম বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করেছে।
অভিযুক্তের বাড়িতে নাৎসিদের স্বস্তিকা চিহ্ন খচিত পতাকা পাওয়া গেছে। তারা থ্রিডি প্রিন্ট এর মাধ্যমে বন্দুক বানানোর চেষ্টা করছিল।
অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিটের প্রধান এসিস্টেন্ট কমিশনার স্কট লি’র মতে সহিংস এবং উগ্র জাতীয়তাবাদ অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রধান হুমকি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। গত ১৮ মাসে পুলিশের এই বিশেষ ইউনিটে এ ধরণের কেস ৭৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন ব্যক্তির জবানবন্দিতে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। তার পরিচয় গোপন রাখতে আমরা একজন অভিনেতার মাধ্যমে তার বক্তব্য প্রকাশ করছি। মার্ক ছদ্মনামের এই ব্যক্তি নিজেকে “এথনো-ন্যাশনালিস্ট” হিসাবে পরিচয় দেন।
করোনাভাইরাস অতিমারির পূর্বে তিনি উপরোক্ত ফিটনেস ক্লাবে ভর্তি হয়েছিলেন। ফিটনেস ক্লাবের আড়ালে সেখানে মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের একটি নিও নাজি সংগঠনের গোপন শাখা পরিচালিত হচ্ছিল।
সংগঠনের কর্মকান্ড অচিরেই সহিংসতায় রুপ নিতে পারে এমন আশংকা থেকে তিনি এসবিএস কে জানান— অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের নীতি ব্যর্থ হয়েছে। দিনে দিনে আমরা নিজেরা আক্রান্ত বোধ করছি, তাই আমাদের সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া আবশ্যক মনে হয়েছে।
উগ্রপন্থী এসব সংগঠনের সদস্যরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আগ্নেয়াস্ত্র চালানো সহ সামরিক কায়দায় অস্ট্রেলিয়ার অরণ্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এসবিএস এর অনুসন্ধানে সেটাই উন্মোচিত হয়েছে।
তারা বিভিন্ন দেশের উগ্র দক্ষিনপন্থীদের সাথে এনক্রিপ্টেড প্রযুক্তিতে তথ্য বিনিময় করছে। উগ্রপন্থীদের গতিবিধিতে অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় খুবই উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে আদেল সালমান বলেন, মুসলিমরা আক্রান্ত বোধ করছে। আমরা ক্রাইস্টচার্চের মত ঘটনার পূনরাবৃত্তি চাই না।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ ঘটনায় এদেশের অনেকে তাদের স্বজন হারিয়েছেন। আদেল সালমান তাদেরই অন্যতম। আদেল আশংকিত, কেননা এইসব সশস্ত্র সংগঠন বিস্তার লাভ করছে।
উগ্র পন্থার বিস্তার এবং তাদের সক্রিয়তাকে বড় ধরণের নিরাপত্তা হুমকি বলে মনে করেন ডক্টর মারিও পয়কার । তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ। তার মতে,
খালি সোশ্যাল মিডিয়ায় সরগরম আলাপ করে — এরা সেই দলের লোক নয়। এরা বনে জংগলে একত্রিত হয়, এদের সাম্প্রদায়িক ঐক্য আছে, আছে সম্মিলিত উদ্দেশ্য আর সেই উদ্দেশ্য হাসিল করার তাগিদ ও প্রস্তুতি।
এসবিএস এর অনুসন্ধানে পাওয়া আলামত দেখে যুক্তরাষ্ট্রের জেফ স্কুপ পরিস্থিতিকে
যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ উগ্রপন্থী সংগঠনের সাবেক নেতা ছিলেন। তিনি আমেরিকার আলোচিত সেই নিও-নাজি সংগঠনের শীর্ষ পদে ছিলেন দীর্ঘ ১৫ বছর ।
২০১৯ সালে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের মতবাদ থেকে সরে এসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এ ধরণের মতবাদমুক্ত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। নিজের সংগঠনের একজন সদস্যকে রক্ষার বদলে শত শত নিরীহ মানুষকে রক্ষা করাই তার বর্তমান কাজে প্রেরণার উৎস।
আমাদের এই প্রতিবেদনের শুরুতে যিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, অর্থাৎ মার্ক নিজেকে এখন এমন একটি গুপ্ত সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছেন বলে মনে করেন। তবে তিনি একদিন এই সংগঠন থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসতে পারবেন বলে আশা রাখেন।
তিনি মনে করেন, তার সংগঠনের মত এসব গুপ্ত সংগঠনের অভ্যন্তরে কি ভয়ংকর পরিকল্পনা চলছে তা কেউ জানে না। হঠাৎ কোন সহিংসতার মধ্য দিয়ে যখন তারা আত্মপ্রকাশ করে, তখন ক্ষতি যা হবার তা হয়ে যায়।
সহিংস ধারার উগ্রপন্থীদের ঝুঁকিকে বাস্তব এবং ক্রমবর্ধনশীল বলেছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তিনি এই ধারার মতবাদকে “ঘৃণ্য” বা ডিসগাস্টিং বলে মন্তব্য করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হিংসাত্নক কর্মকান্ড সামনের দিনে বাড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তি যে মতাদর্শেরই হোক, তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এসবিএস বাংলা