কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন স্থায়ী সমাধান নয়
প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে ফাইজার/বায়োএনটেকের কোভিড টিকার কার্যকারিতা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পর ৮৮ শতাংশ থেকে কমে ৪৭ শতাংশে নেমে আসে। ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে সোমবার প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ফাইজারের ভ্যাকসিন যখন প্রথম দেওয়া শুরু হয়, সেই ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত কাইজার পারমানেন্টে সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় ৩৪ লাখ সদস্যের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যের ডিজিটাল রেকর্ড ঘেঁটে টিকার কার্যকারিতা সংক্রান্ত এসব তথ্য উপাত্ত পেয়েছেন ফাইজার ও কাইজার পারমানেন্টের গবেষকরা।
গবেষণায় বলা হয়েছে, অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে ২ ডোজ টিকা নেওয়ার এক মাস পর টিকার কার্যকারিতা থাকে ৯৩ শতাংশ, ৪ মাস পর এটি নেমে আসে ৫৩ শতাংশে। অন্যান্য ধরনগুলোর বিরুদ্ধেও একই সময়ের ব্যবধানে এই কার্যকারিতা ৯৭ শতাংশ থেকে ৬৭ শতাংশে নেমে যায়।
এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, করোনায় টিকা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি সবার মেনে চলতে হবে। নইলে সামনে করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। তাই যতদিন পর্যন্ত স্থায়ী টিকা না আসবে ততোদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মানতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
দেশে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে। হাসপাতালের বেড ফাঁকা রয়েছে। অনেকে মনে করছেন দেশ থেকে করোনা চলে গেছে। এ কারণে সবার মাঝেই স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে করোনা যেসব টিকা আবিস্কার হয়েছে সেগুলো সাময়িক সুরক্ষা দেয়।
তাই টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে হয়তো বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ও ইউকে ভ্যারিয়েন্ট আছে। দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশি। সিলেটে ইউকে ভ্যারিয়েন্ট বেশি দেখা দিয়েছিল। এরমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এন্টিবডি থাকলেও আক্রান্ত করতে পারে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ আশংকা প্রকাশ করে বলেন, দেশে সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি না মানার যে প্রবণতা তাতে এক মাস পর করোনা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনার টিকা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। যতক্ষণ স্থায়ী প্রতিরোধক তৈরি না হবে, ততোদিন সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, করোনা কতদিন থাকবে তা কেউ বলতে পারে না। তাই টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে।
সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, অনেকে মনে করছে করোনা চলে গেছে। কিন্তু এটা ঠিক না। করোনার দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এমন ভয়ঙ্কর যে, এন্টিবডি থাকলেও কাজ হয় না। বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে যেভাবে মানুষ চলাফেরা করছে, এটা অব্যাহত থাকলে করোনার বড় আরেকটি ধাক্কা আসতে পারে। টিকা নেওয়ার পাশাপাশি সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, টিকা স্থায়ী সমাধান নয়। স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। তবে দেশের মানুষ হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, যানবাহন, শপিং মলসহ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অথচ স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তেই এসব খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সবার মাঝে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা তা আমাদের জন্য বিপজ্জনক। যেকোনো মুহূর্তে আরেকটি ধাক্কা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সময় থাকতে সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনগণকে সচেতন করতে হবে। এক্ষেত্রে টিভি-চ্যানেলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
করোনার টিকা নিচ্ছেন এক ব্যক্তি।
সায়েন্স ল্যাবরেটরির চিফ সায়েন্টেফিক অফিসার ড. সেলিম খান বলেন, দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ও ইউকে ভ্যারিয়েন্ট আছে। দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের রোগী চট্টগ্রাম ও ঢাকায় প্রচুর পাওয়া গিয়েছিল। সিলেটে বেশি পাওয়া যায় ইউকে ভ্যারিয়েন্ট। মানুষ এখন বিদেশ থেকে আসা-যাওয়া করছে। কখন কোন ভ্যারিয়েন্ট ভয়ঙ্কর রূপ নেয়া বলা যায় না। যতদিন স্থায়ী টিকা না আসে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, টিকা হলো অন্যতম সুরক্ষা টুলস। টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে মৃত্যু ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে এখনো করোনা মহামারী চলছে। প্রতিদিন ৫ হাজার মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে। একই সঙ্গে দিনে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তাই টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে।- ইত্তেফাক
এবিসিবি/এমআই