টিকার জন্য ব্যয় পদ্মা সেতু বানানোর সমান

ঢাকা : দেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসের এই টিকা সব যে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে, তা নয়। বেশি অংশ কিনতে হচ্ছে। আগামীতেও কিনতে হবে। আর এজন্য ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরে ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে টিকা কেনার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা মেটাতে বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা থেকে সহায়তা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা কিনতে যে পরিমাণ ব্যয় হবে তা পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয়ের সমান হতে পারে। পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর টিকার জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। সরকার টিকার জন্য যে অর্থ সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করেছে এর মধ্যে বেশিরভাগ আসবে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে। এই অর্থ ঋণ হিসাবে নেয়া হবে, যা পরিশোধের সময়সীমা হবে ২৫ থেকে প্রায় ৩০ বছর।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে একটি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কীভাবে ব্যয় করা হবে তারও একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। আগামী দুবছরের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে করোনা প্রতিরোধের টিকা দেয়া হবে। সে অনুযায়ী টিকার জন্য মোট ব্যয় হবে ৩৭০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এটি পদ্মা সেতুর ব্যয়ের সমান বলা যায়। পরিবহন খরচসহ প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ৭ থেকে ১০ ডলার।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, আগে মানুষের জীবন বাঁচানো ফরজ। কত টিকা প্রয়োজন, কত টাকা প্রয়োজন তা ইতোমধ্যে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সুতরাং টিকা কিনতে পদ্মা সেতুর সমান ব্যয় হবে এটি মুখ্য বিষয় নয়। শুধু পদ্মা সেতুর সমান কেন, যদি এর চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় সেটাও করবে সরকার। করোনা মোকাবিলা করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। টিকা কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম পদক্ষেপ। পদ্মা সেতুর ব্যয়ের সঙ্গে টিকা কেনার ব্যয়ের বিষয়টি মেলানো যাবে না। আপনারা জানেন, চলতি অর্থবছরে বাজেটে ১৪ হাজার কোটি টাকার বাইরে আরও ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিকা কেনার জন্য চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বহুজাতিক ঋণদানকারী সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। সংস্থাটি দেবে সর্বোচ্চ ৯৪ কোটি ডলার। এরপরই রয়েছে উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক। তারা ৫৫ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া চীনের নেতৃত্বাধীন এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বা এআইআইবি অর্থায়ন করছে ৫০ কোটি ডলার। পাশাপাশি জাপানের জাইকা দিচ্ছে ৩৫ কোটি ডলার। এর বাইরেও বেশ কিছু উন্নয়ন সহযোগী দিচ্ছে ৬১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে টিকা কিনতে উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২৯৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকার তার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেবে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সহজশর্তে ও কম সুদে এই ঋণ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এডিবি তাদের বোর্ড সভায় ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই ঋণের সুদহার হবে ২ শতাংশ। আর পরিশোধ করতে হবে ২০ বছরের মধ্যে। কিসের আওতায় এই ঋণ দিচ্ছে? এ প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা জানান, ‘রেসপনসিভ কোভিড-১৯’ ভ্যাকসিন কর্মসূচির আওতায় এডিবি এই ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশকে। আর বিশ্বব্যাংকের ঋণের সুদহার ধরা হয়েছে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। পরিশোধ করতে হবে ৩০ বছরে। বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে তাদের বোর্ড সভায় ঋণ প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। তবে এই ঋণ দুধাপে দেয়া হবে। জাইকাসহ অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সরকারের পরিকল্পনায় প্রতি মাসে কমপক্ষে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। টিকা কেনার জন্য ইতোমধ্যে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। চীন থেকে কিনবে সাড়ে ৭ কোটি ডোজ, রাশিয়া থেকে ৩ কোটি ডোজ। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত উপহারের টিকা এসেছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও চীন থেকে, যার পরিমাণ প্রায় ১ কোটি। দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারিতে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, এখন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে দৈনিক ৫ লাখের বেশি টিকা দেয়া হচ্ছে।
টিএস