Type to search

Lead Story আন্তর্জাতিক

ভবিষ্যৎ আচরণ দেখে সিদ্ধান্ত নেবে পশ্চিমারা

তালেবান এখন প্রতিপক্ষের কাছে এ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তাদের নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাদের লড়াইয়ের হাতিয়ার এখন টুইটার, কালাশনিকভ নয়। স্টেডিয়ামে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কালিমা লেগে গ্রুপটি এখন ক্ষমতার বৈধতা অর্জনের চেষ্টায় ব্যস্ত। দুই দশক আগের তালেবান আর এখনকার তালেবান এক নয়।

গত ২০ বছরে তারা সমর কৌশলে যেমন পারদর্শী হয়েছে, তেমনি বেড়েছে তাদের কূটনৈতিক দক্ষতা। বিশেষ করে পরাশক্তিদের সঙ্গে দর কষাকষি করার অভিজ্ঞতা। নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষক হিসেবে নিজেদের মেলে ধরেছে। ইতিমধ্যেই যারা আগের সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে, তাদের প্রতি ঘোষাণা দিয়েছে সাধারণ ক্ষমার। জানা গেছে, এই সাধারণ ক্ষমার আওতায় সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশে ফিরতে পারেন।

সমালোচকরা বলছেন, ১৯৯৬ সালেও তালেবান এ রকম সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল। তারা একে নিছক প্রতিশ্রুতি হিসেবেই দেখানোর চেষ্টা করছেন। তালেবান এবার এত দ্রুত রাজধানী কাবুল দখল করবে এটা যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করেনি। বাইডেন প্রশাসন জানুয়ারিতে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সময়সূচি ঘোষণা করে জানিয়েছিল দেশটিতে সাড়ে ৩ লাখ সদস্যের নিরাপত্তা বাহিনীই নিজেদের দেশ রক্ষার জন্য যথেষ্ট।

কিন্তু তারা যে এভাবে পশ্চাদপসরণ করবে সেটি যুক্তরাষ্ট্র আঁচ করতে পারেনি। তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের প্রতিপক্ষ মিলিশিয়াদের শক্ত ঘাঁটি পানশিরও প্রায় তাদের হাতে চলে এসেছে বলে জানা গেছে। পশ্চিমারা এখন বলছে তারা তালেবানের অতীত নয় বরং ভবিষ্যত্ কর্মকাণ্ড দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে পশ্চিমাদের সামনে নতুন করে অভিবাসী আসার ঝুঁকি রয়েছে।

Kabul, Afghanistan-Taliban crisis Latest News Highlights: Kabul News Today, Afghanistan  taliban conflict latest News and Update

বর্তমান পরিস্থিতি তালেবান শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও এগিয়ে গেছে। নারীদের ঘরের বাইরে যেতে না দেওয়া এবং পুরাকীর্তি ধ্বংসের বদনাম রয়েছে যে গোষ্ঠীটির তারা এখন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক দর কষাকষি করছে। টুইটার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা নিজেদের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছে। যা ইতিপূর্বে তাদের ক্ষমতায় থাকার চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। তালেবান যোদ্ধাদের কাবুলে ঢোকার যে ভিডিওগুলো নেটে তারা শেয়ার করেছে তাতে দেখা যায় তারা খুবই সাধারণ মানুষ, সহজে তাদের সঙ্গে মেশা যায়, আইসক্রিম খেতে পছন্দ করে ইত্যাদি।

আরো কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, তালেবান শিয়া হাজারা ও শিখদের মতো সংখ্যালঘুদের রক্ষা করছে, সুন্নি হওয়া সত্ত্বেও তারা এক শিয়া নেতার স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তালেবান আবার ক্ষমতায় এলো নারীরা জাতীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে এমন ধারণা অপনোদন করতে একজন তালেবান কর্মকর্তা টুইটারে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ভিডিও পোস্ট করেছেন। হেরাত দখলের পর ঐ ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।

Fighting rages in Afghanistan as US, UK accuse Taliban of massacring  civilians in border district

তালেবানের মুখপাত্র স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, দেশকে পুনরায় সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে দেওয়া হবে না। ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য হাজারা একটি ইস্যু। কারণ ইরানে শিয়ারা ক্ষমতায় আছে। তারা অবশ্যই দেখতে চাইবে আফগানিস্তানে শিয়াদের নিরাপত্তা আছে। যদিও তালেবানের সঙ্গে শিয়াদের অতীত সুখকর নয় কিন্তু তেহরান ও তালেবানের অভিন্ন প্রতিপক্ত যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় দুই পক্ষ নতুনভাবে সম্পর্ক গড়তে যাচ্ছে।

তালেবানের জন্য চীনের স্বীকৃতি এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন। এই স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য উইঘুর মুসলিমদের আর সমর্থন না করার প্রতিশ্রুতি তাদের দিতে হচ্ছে। চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিদের বসবাস। তারা বেইজিংয়ের চরম বৈরী আচরণের শিকার হয় বলে বিভিন্ন সময় খবর বেরিয়েছে। জিনজিয়াংয়ের অবস্থান আফগানিস্তানের খুব কাছে, যেটা চীনের অন্যতম উদ্বেগের কারণ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত জহির আসলাম জানজুয়া মনে করেন, আফগানিস্তান থেকে এখন ইতিবাচক বার্তা বাইরে আসছে। তবে পাকিস্তান এখনই তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে কি না, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। সব মিলিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো তালেবানকে নিজেদের মেলে ধরার নতুন একটি সুযোগ দিতে চায়। পুরোনো সূত্র ধরে তাদের সমালোচনা করছে না। তবে তালেবান সরকার গঠন করলে স্বীকৃতির ব্যাপারেও দ্রুত কিছু করবে না। এ বিষয়ে যা করার সবাই একসঙ্গে করবে বলে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর সর্বশেষ বৈঠকে জানান হয়েছে।

Translate »